thebengalpost.net
ফের রেল দুর্ঘটনা:

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ৩০ জুলাই: ১৪ মাসের মাথায় ফিরল বালেশ্বরের বাহনাগার ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার স্মৃতি! ২০২৩ সালের ২ জুন দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের অধীন খড়্গপুর ডিভিশনের বাহনাগা বাজার স্টেশনের (বালেশ্বর স্টেশন সংলগ্ন) কাছে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৮৮ জন, আহত হয়েছিলেন প্রায় ১০০০ জন। দ্রুত গতিতে থাকা করমন্ডল এক্সপ্রেস একটি মালগাড়ির পেছেনে ধাক্কা মারার কারণেই খেলনার মতো উড়ে গিয়েছিল করমন্ডল এক্সপ্রেসের একের পর এক বগি! এমনকি সেই অভিঘাতে বে-লাইন হয়েছিল পাশের লাইনে থাকা হামসফর এক্সপ্রেস (বা, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস)-ও। মঙ্গলবার ভোর রাতে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের চক্রধরপুর ডিভিশনের অধীন চক্রধরপুর স্টেশনের কাছেই হাওড়া-মুম্বই মেলের ১৮ট বগি বে-লাইন হওয়ার ঘটনায় আবারও ফিরে এলো ভয়াবহ করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার স্মৃতি। এবারও দুর্ঘটনার নেপথ্যে নাকি সেই মালগাড়িই!

thebengalpost.net
খড়গপুর থেকে গেল উদ্ধারকারী দল:

জানা যায়, মঙ্গলবার ভোররাতে (ভোর ৩টা ৪৫ মিনিট নাগাদ) ঝাড়খণ্ডের চক্রধরপুর ডিভিশনে রাজখরসাওয়ান এবং বরাবাম্বুরের মধ্যবর্তী এলাকায় ১২৮১০ হাওড়া-ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস এক্সপ্রেস (হাওড়া-মুম্বই মেল) লাইনচ্যুত হয়। খেলনা গাড়ির মতো রেললাইনে ছিটকে পড়ে ট্রেনটির ১৮টি বগি। একটি মালগাড়ির সঙ্গে ধাক্কার জেরেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা যায় বিভিন্ন সূত্রে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫-৩০ জন যাত্রী। তবে, আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে রেলের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, যে জায়গায় মুম্বইগামী ট্রেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে, তার কাছেই একটি মালগাড়িও বেলাইন হয়েছে। এই দু’টি দুর্ঘটনার মধ্যে কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা এখনও নিশ্চিত করা না হলেও; হাওড়া-মুম্বই মেলের এক যাত্রী বলেন, “আমাদের ট্রেন ১০০-১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিতে ছুটছিল। সে সময় পাশের ওই মালগাড়ি থেকে একটা বড় প্লাস্টিক উড়ে এসে আমাদের ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে আটকে যায়। আমাদের ট্রেনের চালক সামনের কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। তাতেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে পুরো ঘটনা তদন্তের পরই বোঝা যাবে।” এদিকে, দুর্ঘটনার পরই খড়্গপুর ডিভিশনের একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিল করা হয়েছে দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের তরফে। অন্যদিকে, খড়গপুর থেকে পাঠানো হয়েছে ১৪০ টনের একটি ক্রেন, ২টি এক্সিডেন্ট রিলিফ ট্রেন প্রভৃতি। দুর্ঘটনাস্থলের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিয়েছেন উদ্ধারকারী দল সহ চিফ রেলওয়ে সেফটি অফিসারও।

thebengalpost.net
ফের রেল দুর্ঘটনা:

কোন কোন ট্রেন বাতিল?
০৮০১৫ খড়্গপুর-ঝাড়গ্রাম মেমু স্পেশাল।
১৮০১৯ ঝাড়গ্রাম-ধানবাদ মেমু এক্সপ্রেস।
১২০২১/১২০২২ হাওড়া-বারবিল-হাওড়া জনশতাব্দী এক্সপ্রেস।
১৩৫১২/১৩৫১১ আসানসোল-টাটা-আসানসোল এক্সপ্রেস।
২২৮৬১ হাওড়া–কান্তাবানজি এক্সপ্রেস
০৮০১৫/১৮০১৯ খড়গপুর – ধানবাদ এক্সপ্রেস
১২০২১/১২০২২ বারবিল – হাওড়া এক্সপ্রেস
১৩৫১২/১৩৫১১ আসানসোল – টাটা – আসানসোল এক্সপ্রেস।
কোন কোন ট্রেনের রুট বদল হয়েছে?
১২২৬২ হাওড়া-ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাস দুরন্ত এক্সপ্রেস (মঙ্গলবার হাওড়া থেকে ছাড়ার পর খড়গপুর-ভদ্রকের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে)
১২১৩০ হাওড়া- পুনে এক্সপ্রেস
১৮০০৫ হাওড়া- জব্বলপুর এক্সপ্রেস
১২৮৩৪ হাওড়া- আমেদাবাদ এক্সপ্রেস
১৮৪৭৭ পুরী-হৃষিকেশ এক্সপ্রেস
১৮০২৯ লোকমান্য তিলক কুরলা- শালিমার এক্সপ্রেস
১২৮৫৯ ছত্রপতি শিবাজী-হাওড়া এক্সপ্রেস
১২৮৩৩ আমেদাবাদ- হাওড়া এক্সপ্রেস
১৩২৮৮ আরা-দুর্গ সাউথ বিহার এক্সপ্রেস (আসানসোল- জয়চণ্ডী পাহাড়- বোকারো- রাউরকেল্লা হয়ে ঘুরে যাবে ট্রেনটি)।

thebengalpost.net
চক্রধরপুরের রেল দুর্ঘটনা:

এদিকে, একের পর এক রেল দুর্ঘটনায় ফের একবার কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সুর ছড়িয়েছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব-কে একজন ‘ব্যর্থ রেলমন্ত্রী’ হিসেবে তোপ দেখেছেন ইন্ডিয়া জোটের সাংসদরা। রেলের উদাসীনতা-র জন্যই বারবার দুর্ঘটনা বলে দাবি করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেলে বিপুল সংখ্যক শূন্যপদ পূরণ না করার কারণেই রেল যাত্রীদের জীবন আজ ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি বামেদের। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২ জুন ওড়িশার বালেশ্বরের বাহানগা বাজার স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়েছিল চেন্নাইগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেস। সেই অভিঘাতেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বেঙ্গালুরু-হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস বা হামসফর এক্সপ্রেসের একাধিক বগিও। দুর্ঘটনায় ২৮৮ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৪ সালের ১৮ জুন উত্তরপ্রদেশের গোন্ডায় চণ্ডীগড় থেকে ডিব্রুগড়গামী ডিব্রুগড় এক্সপ্রেসের অন্তত ১০-১২টি কামরা লাইনচ্যুত হয়। এই দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনার ঠিক আগেই উত্তরবঙ্গের চটেরহাট এবং রাঙাপানি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। যে লাইন দিয়ে ওই এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলছিল, একই লাইনে চলার অনুমতি পাওয়া একটি মালগাড়ি পিছন থেকে এসে সজোরে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে। ধাক্কার জেরে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের একাধিক কামরা উঠে পড়ে মালগাড়ির ইঞ্জিনের উপর। লাইনচ্যুত হয় মালগাড়ির কামরাও। কাঞ্চনজঙ্ঘার গার্ড এবং মালগাড়ির চালক-সহ মোট ১০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন প্রায় ৫০ জন। ফলে রেলপথের মতো সুরক্ষিত যাত্রাতেও যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে উঠতে হচ্ছে, তা নিয়ে যে সত্যিই এবার আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ, তা বলাই বাহুল্য!

thebengalpost.net
বে-লাইন হাওড়া-মুম্বই মেল: