মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ এপ্রিল: পণ্ডিতেরা বলেন, জন্ম-মৃত্যু-বিবাহ কবে, কোথায়, কিভাবে হবে; তা একমাত্র নিয়তিই জানে! বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা ফের একবার তা প্রমাণ করলো। চলন্ত পুরী-জয়নগর এক্সপ্রেসে (18419 Puri Jaynagar Express) পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন কটকের (ওড়িশা) সোনি কুমারী। কটক থেকে সমস্তিপুরের (বিহার) উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন সোনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ট্রেন যখন বালেশ্বর (Balasore) স্টেশন পেরিয়েছে সেই সময় বাথরুমে যান সোনি। সেখানেই প্রসব বেদনা ওঠে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সন্তানের জন্ম দেন! ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত্রি প্রায় ৮ টা। ট্রেনের সাধারণ কামরায় যাত্রা করছিলেন সোনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বামী ছাড়াও নিকটাত্মীয়রা। তবে, তাঁরা কেউই তৎক্ষণাৎ তা টিটি বা রেল পুলিশ বা কাউকেই জানাননি! বেশ কিছুক্ষণ পর রেল কর্তৃপক্ষ তা জানতে পারে এবং সোনিকে হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রায় সাড়ে ৯ টা নাগাদ মেদিনীপুর স্টেশনে ট্রেন থামে। শুরু হয় নজিরবিহীন তৎপরতা। রেলের তরফে চিকিৎসক, অ্যাম্বুল্যান্স প্রভৃতি ডাকা হয়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়। তবে, বেঁকে বসেন সোনির স্বামী ও সঙ্গে থাকা আত্মীয়রা। নিতান্ত নিম্নবিত্ত ও অসচেতন পরিবারের সদস্যদের কিছুতেই বোঝাতে পারেন না রেলের আধিকারিকরা। ভীত, আতঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা কখনও বলেন, আমাদের কাছে টাকা-পয়সা নেই! কখনও বলেন, গন্তব্যস্থলে (সমস্তিপুর, বিহার) পৌঁছে যা করার করব! মেদিনীপুর স্টেশনে প্রায় এক-দেড় ঘন্টা ধরে চলে নজিরবিহীন টানাপোড়েন। অবশেষে, ওই পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হয় রেল কর্তৃপক্ষ। রাত্রি ১১ টা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয় মা ও সদ্যজাতকে। মাতৃমা বিভাগে ভর্তি করা হয় দু’জনকে।
জানা গেছে, মাত্র ২২ বছরের সোনি সময়ের প্রায় এক-দেড় মাস আগেই সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাই, কিছুটা অপরিণত (Premature Baby) সন্তান প্রসব করেন তিনি। মেদিনীপুর স্টেশনে এক চিকিৎসক মা ও সন্তান-কে পরীক্ষা করে জানান, বাচ্চার ওজন বেশ অনেকটাই কম। অবিলম্বে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজন। তবে, মায়ের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানান তিনি। এই অবস্থায়, সামান্য হঠকারিতাও যে নবজাতকের বিপদ ডেকে আনতে পারে, তা রেল কর্তৃপক্ষ উপলব্ধি করলেও, ওই পরিবার প্রথমে তা বুঝতে পারেনি! শেষমেশ, তাদের বোঝানো সম্ভব হয়। সন্তান সহ সোনি-কে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত্রি ১১ টা ১০ নাগাদ মেদিনীপুর স্টেশন ছেড়ে জয়নগরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ট্রেন। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রেল।