দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ জানুয়ারি: স্বামীর নির্দেশে ব্যাঙ্ককর্মী যুবকের সঙ্গে প্রেমের অভিনয়। পরে, সেই যুবকের সঙ্গেই পরকীয়া! তারপর প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে স্বামীকে নৃশংসভাবে খুন করে রেললাইনে ফেলে দিয়ে ঠান্ডা মাথায় নাটক চালিয়ে যাওয়া! ঘটনার নাটকীয়তা আর ভয়াবহতা নিঃসন্দেহে হার মানাবে যে কোনও ক্রাইম থ্রিলার-কে! গত শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) ভোররাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের বাখরাবাদ স্টেশন (খড়্গপুর ডিভিশন) সংলগ্ন তেগেড়িয়া রেলগেটের (২০নং রেলগেটের) কাছে আপ-লাইন থেকে ‘বস্তাবন্দী’ দেহ উদ্ধারের ঘটনায় উঠে এল হাড়হিম করা ঘটনা। শুক্রবার বিকেলেই মৃত যুবকের নাম-পরিচয় উদ্ধার করেছিল খড়্গপুর রেল পুলিশ (GRP)। খড়্গপুর গ্রামীণের খাগড়ার (অরুণ খাগড়ার) বাসিন্দা তথা তৃণমূল পরিচালিত খড়্গপুর-২ নং পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ সেখ আনিসুর রহমানের ভাইপো বছর ৩০-র যুবক সেখ হাসিবুল রহমানের দেহ উদ্ধার করে স্নিফার ডগ নিয়ে তদন্তে নেমেছিলেন রেল পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা। শনিবার (২০ জানুয়ারি) সন্ধ্যার মধ্যেই খুনের কিনারা প্রায় করে ফেলেছিলেন তাঁরা। ওই দিনই সন্ধ্যা নাগাদ গ্রেফতার করা হয়েছিল মৃত যুবকের স্ত্রী মুক্তারা বিবিকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রবিবার আরও দুই যুবককে গ্রেফতার করে রেল পুলিশ।
রবিবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে তাদের আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে নেয় রেল পুলিশ। জানা যায়, মুক্তারা বিবি ছাড়াও তার প্রেমিক তথা নারায়ণগড় ব্লকের কাশিপুর অঞ্চলের বাগরুই গ্রামের বছর ২৭-র যুবক রিতেশ রানা ও তার সহযোগী সনাতন পাতর (৪৬)-কে রবিবার আদালতে তুলে, নিজেদের হেফাজতে নেয় রেল পুলিশ। একে একে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেই উঠে আসে সিনেমাকেও হার মানানো এক ‘ভয়াবহ’ কাহিনী! জানা যায়, কয়েক মাস আগেই ব্যাঙ্ক থেকে লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়েছিল খাগড়া গ্রামের যুবক, পেশায় ব্যবসায়ী ও তৃণমূল সমর্থক হাসিবুল রহমান। সেই টাকা যাতে শোধ করতে না হয়, তাই নিজের স্ত্রীকেই ‘টোপ’ হিসাবে ব্যবহার করে সে। যে যুবক ব্যাঙ্কের ঋণ আদায়ের কাজ করত, তার সঙ্গেই নিজের স্ত্রী-কে প্রেমের অভিনয় করার নির্দেশ দেয় হাসিবুল। মতলব ছিল একটাই, স্ত্রী’র সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি তুলে ব্ল্যাকমেল করবে সেই যুবককে। কিন্তু, অভিনয় করতে করতে স্ত্রী যে সত্যিই ওই যুবকের প্রেমে পড়ে গিয়েছে, তা আর বুঝতে পারেনি হাসিবুল! এরপর, স্ত্রী-র পরকীয়ায় কাঁটা হয়ে যায় হাসিবুলই। সেই কারণেই খুন হতে হয় তাঁকে।
ঘটনার মাত্র তিন দিনের মাথাতেই খড়গপুর-২ ব্লকের তৃণমূল নেতা তথা কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ সেখ আনিসুর রহমানের ভাইপো সেখ হাসিবুল রহমানের খুনের কিনারা করে রেল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদে মুক্তারা জানায় যে, প্রেমের নাটক করতে গিয়েই ব্যাঙ্কের ঋণ সংগ্রহকারী কর্মী (লোন রিকভারি এজেন্ট) রিতেশের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। রিতেশ তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। একসঙ্গে সংসার করার স্বপ্ন দেখায়! তার মদ্যপ স্বামী প্রতিদিন তাকে মারধর করত। তাই ‘মুক্তি’ চেয়েছিল মুক্তারা! এরপর, বুধবার গভীর রাতেই রিতেশ ও মুক্তারা মিলে খুন করে হাসিবুলকে। বুধবার গভীর রাতে মদ্যপ অবস্থায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকা হাসিবুলকে মারতে প্রথমে গায়ে ছোঁড়া হয়েছিল কার্বলিক অ্যাসিড। গা জ্বালা করায় ঘুম ভেঙ্গে যায় হাসিবুলের। তবে, মদ্যপ অবস্থায় আচ্ছন্ন থাকায় ওই অবস্থায় হাসিবুলের স্ত্রী ও প্রেমিক রিতেশ বিছানাতেই বাড়ির মধ্যে থাকা মোটর বাইকের লোহার একটি শকআব্জার দিয়ে গলায় চেপে ধরে শ্বাস রোধ করে। ছটফট করতে করতে বিছানাতেই মারা যায় হাসিবুল। মৃত্যু নিশ্চিত করতে ওই শকআব্জার দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয়। এরপর দু’টি কম্বল জড়িয়ে মৃতদেহ বাড়িতেই খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। পরে বৃহস্পতিবার রাত্রি ন’টা নাগাদ বস্তা ও দড়ি নিয়ে এসে হাসিবুলের মৃতদেহ বেঁধে নিজের মোটরবাইকে চাপিয়ে বেরিয়ে যায় রিতেশ। গ্রামের রাস্তা দিয়ে ভদ্রকালী, বড়পোল হয়ে ডহরপুরে একটি প্লাস্টিক কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে জাতীয় সড়কে ওঠে। এরপর নারায়ণগড় বাইপাস পেরিয়ে মোটরবাইক নিয়ে পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। আর সেখানে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল তেগেড়িয়া এলাকার সনাতন পাতর। দু’জনে মিলে মৃতদেহ রেল লাইনে শুইয়ে বাড়ি ফিরে যায়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে অর্থাৎ শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) ভোর রাতে (রাত্রি ২টো নাগাদ) দেহ উদ্ধার হয়!
শুক্রবার সকালে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সেখ হাসিবুল রহমানের স্ত্রী মুক্তারা বিবি নিজেদের ৬ বছরের ছেলে ও পরিবারের সদস্যদের পাশে বসে বলে, একটি জেসিবি কেনাকে কেন্দ্র করে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিল তাঁর স্বামী হাসিবুল এবং তার বাবা ও দাদা। তা মেটাতেই বৃহস্পতিবার ভোরে বাড়ি থেকে কলকাতা হাইকোর্টের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল হাসিবুল। সঙ্গে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে বেরিয়েছিল। তারপর আর বাড়ি ফেরেনি। যদিও তদন্তকারীরা হাসিবুলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে দেখেন যে বুধবার রাত থেকে হাসিবুরের ফোন বাড়িতেই রয়েছে। এরপর হাসিবুরের স্ত্রীর ফোন ‘ট্যাপ’ করা হয়। তাতেই রহস্যের উন্মোচন হয়! তবে, পুলিশকে বিভ্রান্ত করতে হাসিবুলের বাড়ি থেকে তার মোটরবাইকটি নিয়ে এসে শুক্রবার সকালে বাখরাবাদ রেল স্টেশনের কাছে একটি সাইকেল স্ট্যান্ডে রেখে দেয় রিতেশ। তদন্তকারী অফিসাররা যখন পুলিশ কুকুর নিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিল তখন রীতিমতো নির্লিপ্তভাবে ওই এলাকায় গিয়ে মোটরবাইকটি রেখে দিয়ে আসে রিতেশ। যা ঠান্ডা মাথার যেকোনো খুনিকেও হার মানায় বলে দাবি তদন্তকারী অফিসারদের! গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার তল্লাশি চালিয়ে রিতেশের বাড়ির কাছের পুকুর থেকে খুনের কাজে ব্যবহৃত ওই লোহার শকআব্জার ও কার্বলিক অ্যাসিডের বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ধৃতদের নিয়ে ঘটনার পুনঃনির্মাণও করেন তদন্তকারী আধিকারিকেরা। তদন্তকারী আধিকারিকদের দাবি, ঘটনার তদন্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। পথের কাঁটা সরাতে পরিকল্পিতভাবেই এই খুন করা হয়েছে। আজ, বুধবার ধৃতদের ফের খড়্গপুর মহকুমা আদালতে পেশ করা হবে বলে জানা গেছে।
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ২৩ নভেম্বর: নৈহাটি, সিতাই, হাড়োয়া, মাদারিহাট, তালডাংরা এবং মেদিনীপুর- বিধানসভা উপনির্বাচনে…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ নভেম্বর: মেদিনীপুর বিধানসভা উপনির্বাচনের ভোট গণনা শুরু হয়েছে…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ২২ নভেম্বর: আইআইটি (IIT)-র মতো বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে অভাব…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ নভেম্বর: দোকান বন্ধ করে রাতেই বেরিয়েছিলেন বাইক নিয়ে।…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…