দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ এপ্রিল:”হাঁসখালিতে যা হয়েছে, রেপ, প্রেগনেন্ট না লাভ অ্যাফেয়ার্স বলবেন? আমি যতদূর জানি, ছেলেটির সঙ্গে নাকি লাভ অ্যাফেয়ার্স ছিল। বাড়ির লোকেরাও সেটা জানত। পাড়ার লোকেরাও জানত। এখন যদি কোনও ছেলেমেয়ে, কেউ কারও সঙ্গে প্রেম করে, সেটা আটকানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এটা উত্তরপ্রদেশ নয় যে লভ জিহাদ প্রোগ্রাম করব।” তদন্ত চলাকালীন হাঁসখালি’র ঘটনা প্রসঙ্গে এমনই বিতর্কিত মন্তব্য করে বিরোধীদের কড়া সমালোচনার মুখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হাঁসখালি ঘটনার প্রতিবাদে এবং মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা করে বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরে বিজেপি মহিলা মোর্চার বিক্ষোভ মিছিল হয়। মহিলা পুলিশের সঙ্গে মহিলা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নজিরবিহীন ধস্তাধস্তি হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুশপুত্তলিকা দাহ করাকে কেন্দ্র করে! ভারতীয় জনতা মহিলা মোর্চা নেত্রী পারিজাত সেনগুপ্ত বলেন, “একজন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনের মন্তব্য চরম নিন্দনীয়! এতে সমাজের ক্ষতি হবে, ধর্ষকরা আরো উৎসাহিত হবে। আর, ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে, মহিলা পুলিশ মন্ত্রীর মহিলা পুলিশ কর্মীরা আমাদের মারধর করল, পোশাক ছিঁড়ে দিল!”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হাসঁখালির ঘটনায় রাজনৈতিক রং না দেখে শাস্তি দেওয়ার বার্তা দিলেও, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য তদন্ত-কে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করছে বামেরাও। ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলাও দায়ের করা হয়েছে। যদিও, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, “কেউ অন্যায় করে থাকলে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হবে। অ্যাকশন হয়েছে। অ্যারেস্ট করা হয়েছে। অ্যারেস্ট করার সময় কোনও কালার দেখা হয়নি।” তবে, রাজ্য ক্রমাগত নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ বেড়ে চলায় বাম ও বিজেপির পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলায় ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালানো হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাম যুবনেতা সুব্রত চক্রবর্তী’র মতে, “হাঁসখালি থেকে পিংলা, কালনা থেকে কাকদ্বীপ সর্বত্র ধর্ষণ, নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে! মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে এই ধরনের ঘটনা যে অত্যন্ত লজ্জার, তা স্বীকার করেছেন ওনার দলেরই বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। আর, আমরা তো বলছিই, পার্ক স্ট্রিট থেকে কামদুনি, মালদা থেকে মেদিনীপুর সর্বত্র একই ঘটনা ঘটে চলেছে। গত কয়েকবছরে ৭০-৮০ টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটলেও, একটির ক্ষেত্রেও সঠিক তদন্ত বা নজিরবিহীন শাস্তি দেওয়া হয়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে, প্রতিটি ঘটনাকে ‘ছোটো ঘটনা’ তকমা দিতে চেয়েছেন। আর, এতেই ধর্ষকরা আরো উৎসাহিত হচ্ছে! হাঁসখালির ঘটনাতেও লাভ অ্যাফেয়ার্স তত্ত্ব খাড়া করার কি দরকার ছিল ওনার? উনি ধর্ষকের অপরাধ ছোটো করে দেখাতে চাইছেন?” যদিও, বাম-বিজেপির আন্দোলন প্রতিবাদকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছে তৃণমূল। তৃণমূলের রাজ্য মুখপাত্র কুনাল ঘোষ ইতিমধ্যে মন্তব্য করেছেন, “একটা মৃত্যু হয়েছে, তা দুঃখজনক! কিন্তু, এই মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করবেন না। মুখ্যমন্ত্রী রাজনৈতিক রং না দেখে সঠিক তদন্ত এবং কড়া শাস্তির বার্তা দিয়েছেন। বিরোধীরা বরং এটা দেখুন যে, তাঁদের দলের কত কত নেতাদের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ আছে!”
