দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ নভেম্বর: “এখানে ধৃতিমান আছে, বাতিল তো করবেই!” তাঁর র্যালি ‘বাতিল’ করেছে নির্বাচন কমিশন। তাই, বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরের জেলা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারকে আক্রমণ করেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন, “লোকসভা নির্বাচনের সময় দেখেছি, যে সমস্ত এলাকায় হিন্দুদের বসবাস, সেখানে গ্রামের পর গ্রাম, পাড়ার পর পাড়া ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের বিদ্যালয়ের ভেতর ঢুকে আমাদের ২৫ জন পোলিং এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে। ভোটের আগের দিন দাঁতন, বেলদা, নারায়ণগড়, মেদিনীপুর সহ জেলা জুড়ে আমাদের ১৭ জন বিশিষ্ট কার্যকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কোনো কার্যকর্তাকে বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়নি। তাই, ১২ তারিখ আর ১৩ তারিখ (নভেম্বর) পুলিশ কি করবে, সেটা তো আমি জানি না! আর, ভোটের দিন ভোট লুট করতে না পারলে; গণনার দিন কারচুপি করবে!”
বৃহস্পতিবার বিকেলে মেদিনীপুর শহরের জেলা কার্যালয়ে (সিপাইবাজারের) সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঠিক এমনই আশঙ্কার কথা জানালেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সঙ্গে পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি এও জানিয়েছেন, “আমরাও একটা বড় পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরা চন্দ্রকোনা রোড, ডেবরা আর খড়্গপুরে হাজার হাজার বিজেপি কর্মী, যারা ভোটার নয়; ভোটের দিন সকাল থেকে আমরা জমায়েত করব। যদি, এখানে আমাদের একজন পোলিং এজেন্টকেও মেরে বের করে দেওয়া হয়, তাহলে আমরা তিন জায়গায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করব। চন্দ্রকোনা রোড, ডেবরা আর খড়গপুরে তিনজন MP-র নেতৃত্বে আমরা জাতীয় সড়ক অবরোধ করব। এই তিন জায়গাতে আমাদের বড় জমায়েত থাকবে।” অবশ্য সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারলে, ফলাফল অন্যরকম হবে বলে মত রাজ্যের বিরোধী দলনেতার! তিনি বলেন, “যদি ভোট দিতে দেওয়া হয় কোনো সনাতনী, জনজাতি, কুড়মি সমাজ ওদের ভোট দেবেনা। আমি সংখ্যালঘুদের কথা বলতে পারব না! কারণ, ওরা বিজেপিকে হিন্দুত্ববাদী দল বলে মনে করে। ওরা মোদিজীর রেশন নেবে, আবাস নেবে, ভ্যাকসিন নেবে; কিন্তু আপনি যখন ওদের পাড়ায় ঢুকবেন বলবে ‘ও তো জয় শ্রীরাম হ্যায়!” তাই আমি ওদের কথা বলতে পারব না। যদিও, ওদের মধ্যেও প্রচুর শিক্ষিত আছে। যদি তাঁরা দয়া করে ভোট দেন, আমরা কৃতার্থ হব! কিন্তু, এটা আমি বলতে পারি, একজন সনাতনী মানুষও ওদের ভোট দেবে না। যেভাবে পশ্চিমবঙ্গে দুর্গা মূর্তি ভাঙা হয়েছে, আরজিকর কান্ড ঘটানো হয়েছে, যেভাবে রাজাবাজারে (কলকাতায়) দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করা হয়েছে, হিন্দুরা অত্যাচারিত হচ্ছে এই রাজ্যে এবং বাংলাদেশে; তারপর কোনো সনাতনী হিন্দু ওদের ভোট দেবেনা। তবে, হিন্দুদের ওরা ভোট দিতে দেবে কিনা বলতে পারছি না! কারণ হিন্দুদের ওরা বিশ্বাস করে না।”
উল্লেখ্য যে, বৃহস্পতিবার দলীয় প্রার্থী শুভজিৎ রায়ের সমর্থনে মেদিনীপুর শহরে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে একটি বড় র্যালি হওয়ার কথা থাকলেও; পুলিশ-প্রশাসন তথা নির্বাচন কমিশনের তরফে বুধবার রাতেই তা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাই বিকেল সাড়ে চারটা নাগাদ মেদিনীপুর শহরের জেলা কার্যালয়ে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর সেই সাংবাদিক বৈঠক থেকে জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকারকে নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়রের উদ্দেশ্যেও তীব্র আক্রমণ জানিয়েছেন শুভেন্দু। ফিরহাদ হাকিমকে ‘সাম্প্রদায়িক’ আখ্যা দিয়ে, সময় এলে দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি! সন্দেশখালির রেখা পাত্রকে ফিরহাদ হাকিম ‘হেরো মাল’ বলে কটুক্তি করার ‘বিচার’ বাংলার মহিলাদের উপরই ছেড়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
এদিনের সাংবাদিক বৈঠক শেষে বিজেপি-র জেলা যুব মোর্চার সভাপতি আশীর্বাদ ভৌমিককে ডেকে নেন শুভেন্দু। তারপর রীতিমত ‘হেলমেট’ পরে তাঁর বাইকে ওঠেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা ‘মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র’ শুভেন্দু অধিকারী। রাজনৈতিক মহলের একটি অংশের মতে, ‘ধৃতিমান’ আছে বলেই হয়তো ‘সামান্যতম’ ঝুঁকিও নিতে চাননি বিরোধী দলনেতা! যদিও, এনিয়ে বিজেপি-র জেলা সহ-সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “উনি আইন মেনেই সবকিছু করেন। আর হেলমেট পরে বাইকে ওঠার মধ্য দিয়ে ট্রাফিক আইন মেনে চলার বার্তাই দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।” মেদিনীপুর শহরের সিপাইবাজারে, দলের জেলা কার্যালয়ের সামনের রাজপথে দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে কিছুক্ষণ ভোট-প্রচার চালানোর পরই বাইকে করে এলআইসি’র মোড়ের দিকে রওনা দেন শুভেন্দু অধিকারী। এরপর, ৬নং ও ১৩নং ওয়ার্ডে শুভজিতকে সঙ্গে নিয়ে প্রচার করেন তিনি। অটো-টোটোর যাত্রী থেকে পথচারী কিংবা ক্রেতা-বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আরজিকর কাণ্ডের জবাব দিতে হবে। হিন্দুদের উপর অত্যাচারের জবাব দিতে হবে।” মেদিনীপুরের ‘ভূমিপুত্র’ তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কাছে পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শহর মেদিনীপুরের অনেক পথচারী কিংবা ক্রেতা-বিক্রেতারাই আবেগাপ্লুত হয়ে তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে কিংবা হাত মেলাতে ছুটে আসেন!