দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ সেপ্টেম্বর: জল না আগেকার দিনের ডাক্তার বাবুদের দেওয়া রঙিন মিক্সচার- বোঝা মুশকিল! কোনো পুকুর বা খাল-বিল থেকে নয়, এমনই রঙিন জল বেরোচ্ছে মেদিনীপুর পৌরসভার ২১ নং ওয়ার্ডের পৌরসভার ট্যাপ থেকে। সেই জল বোতলে ভরেই পৌরসভার সামনে মঙ্গলবার ধর্না দিলেন ওয়ার্ডের কংগ্রেস কাউন্সিলর মহঃ সাইফুল। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। ছিলেন ২৪ নং ওয়ার্ডের বর্ষীয়ান সিপিআইএম কাউন্সিলর গোপাল ভট্টাচার্য, ১০ নং ওয়ার্ডের সিপিআইএম কাউন্সিলর সৃজিতা দে বক্সী, ৩ নং ওয়ার্ডের সিপিআইএম কাউন্সিলর প্রশান্ত মাণ্ডি- প্রমুখ। সাইফুল বললেন, “তিন বছর ধরে এমনই ঘোলা জল বেরোয় পৌরসভার কল থেকে। ওয়ার্ড জুড়ে অন্তত ৫০-টি কল থেকে আবার কোনো জল-ই বেরোই না! আমি চলতি বছরে কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকেই এই বিষয়ে পুরপ্রধান-কে বলে আসছি। কিন্তু, উনি গুরুত্ব দেননি!” তাঁর সংযোজন, “এতোদিন জানতাম জলের অপর নাম জীবন। কিন্তু, মেদিনীপুর পৌরসভার বাসিন্দাদের কাছে দেখছি জলের অপর নাম মরণ! এই জল খেলে কেউ বাঁচবে?”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মেদিনীপুর পৌরসভা এলাকার ২১ নম্বর ওয়ার্ডে গত তিন বছর ধরে পানীয় জলের সমস্যা বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তিনটি সাবমারসিবল কোন কারণে বিকল হওয়ার কারণে ঘোলা জল উঠছে। বহুবার আবেদন নিবেদন করেও সমাধান হয়নি। নবনির্বাচিত কংগ্রেসের কাউন্সিলর জোটের বাম কাউন্সিলরদের ও ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে তাই মঙ্গলবার ধরনা অবস্থান শুরু করেন মেদিনীপুর পৌরসভার সামনে। জলের পাত্র ও ঘোলা জল বোতলে ভর্তি করে বিক্ষোভ অবস্থানে বসেন মঙ্গলবার বিকেল থেকে। সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত চলে অবস্থান। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মাধ্যমে জানা যায়, এই ওয়ার্ডে পানীয় জলের জন্য কয়েক বছর আগে তিনটি সাবমারসিবল বসানো হয়েছিল। কিন্তু অল্প দিনেই সেই সাবমারসিবল গুলো থেকে ঘোলা জল বের হতে শুরু করেছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দারা প্রথমটা কোনোভাবে চালিয়ে নিচ্ছিলেন। জানিয়েছিলেন তৎকালীন স্থানীয় শাসকদলের কাউন্সিলরকেও। তাতেও হয়নি। এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তিদের নিজস্ব সাবমারসিবল থেকে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে চালিয়ে নিচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে ঘোলা জলকে কোন ভাবে ছেঁকে ব্যবহার করছিলেন। তিন বছর ধরে এই সমস্যার পর গত ছ’মাস ধরে পরিস্থিতি আরো বেড়ে যায়। ওই পানীয় জল ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। একেবারে কাদা জল উঠতে থাকে।
ওয়ার্ডের বাসিন্দা নীলা খাতুন বলেন, “আমরা বহুবার বলেছি কোন পদক্ষেপ কেউই নেয়নি। তাই নতুন কাউন্সিলরকে আবার জানিয়েছিলাম। তাও এখনো পর্যন্ত সমাধান হয়নি। ছয় মাস ধরে যে জল পড়ছে তা খুব খারাপ।” ওয়ার্ডের কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা অসীমা চৌধুরী বলেন, “তিন বছর ধরে প্রশাসনের দুয়ারে ঘুরেছি আমরা। আগের কাউন্সিলরকে বহুবার বলা হয়েছিল। কেউই উদ্যোগ নেয়নি। এখানে সেখানে জল সংগ্রহ করে চালাচ্ছিলাম। এখন তাও সম্ভব হয় না।” বিষয়টি নিয়ে কংগ্রেস কাউন্সিলর মহঃ সাইফুল বলেন, “মেলা খেলা মোচ্ছব সব চলছে। কিন্তু, ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের এই পানীয় জলসঙ্কটের কথা বারবার বলেও কোন পদক্ষেপ নেই। তাই, বাধ্য হয়ে এই অবস্থান শুরু করতে হয়েছে।” ২৪ নং ওয়ার্ডের বাম কাউন্সিলর গোপাল ভট্টাচার্য বলেন, “এই রকম ঘটনা আরো অন্যান্য জায়গাতে হয়েছে। সাবমারসিবল বসানোর সময় সঠিক নিয়ম পদ্ধতি অবলম্বনে গুরুত্ব দেয়নি কেউ। তাই অল্পদিনেই সেটি খারাপ হয়ে যায়। বাসিন্দাদের ভোগান্তি অব্যাহত। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।” বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি অরূপ দাস। তিনি বলেন, “সব জায়গাতেই দুর্নীতির কারণে এই বিকল হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। মেদিনীপুর পৌরসভা পরিষেবা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।” ঘটনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান-ও। তিনি বলেন, “সাবমারসিবল গুলির সমস্যা হওয়ার কারণে এরকম ঘোলা জল বের হচ্ছে। আমি দায়িত্ব নিয়েছি চলতি বছরে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ করা হবে।” এদিকে, এই বিষয়ে মহকুমা শাসকের কাছেও ডেপুটেশন দিয়েছিলেন সাইফুল’রা। তিনিও দ্রুত বিষয়টি সমাধান করার জন্য পুরপ্রধান-কে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীকাল সাইফুল-রা জেলাশাসকের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানা গেছে।