দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ অক্টোবর: সম্পর্কে আত্মীয় এক নাবালিকাকে গণধর্ষণের ঘটনায় দুই অভিযুক্তকেই দোষী সাব্যস্ত করে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে আরও ৬ মাসের জেল)-র সাজা ঘোষণা করলেন মেদিনীপুর জেলা আদালতের পকসো কোর্টের বিচারক আশুতোষ সরকার। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী থানা এলাকার। ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে সম্পর্কে মামা-ভাগ্না দুই যুবকের হাতে ‘গণধর্ষিত’ (Gang Rape) হয়েছিল বছর ১৬-র নাবালিকা! গত ৩০ সেপ্টেম্বর (২০২৪) দু’জনকেই দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে সাজা ঘোষণা করা হয়। এদিন বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পকসো কোর্টের পিপি স্বর্ণেন্দু পারিয়াল জানান, ২০২২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে মামা-ভাগ্না মিলে গিয়েছিল আত্মীয় বাড়িতে। শালবনী থানার অধীন ওই এলাকায় সেদিন চলছিল গ্রামীণ মেলা। নবম শ্রেণীর ছাত্রী, সম্পর্কে পিসতুতো বোনকে মেলা দেখাতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোয় বছর ২৮’র সুশান্ত মানা। সঙ্গে ছিল তার ভাগ্না বছর ২২-র ললিত মানাও। এরপরই, খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে নির্যাতিতাকে বাইকে চাপিয়ে তারা যায় একটি খালের ধারে (শালবনী থানা এলাকারই)। সেখানে নিয়ে গিয়েই মামা-ভাগ্না মিলে গণধর্ষণ করে সম্পর্কে নিকটাত্মীয়, নবম শ্রেণীর ওই ছাত্রীকে। শুধু তাই নয়, এই ঘটনা বাড়ির লোককে জানালে তাকে (নাবালিকাকে) এবং তার বাবা-মা সহ পরিবারের লোকজনদের খুন করে দেওয়ার হুমকিও দেয়। তা সত্ত্বেও নাবালিকা যখন বলে বাড়িতে গিয়ে সে সব জানাবে, তখন তাকে রীতিমত মারধর করা হয় বলেও এদিন বিকেলে জানান এই মামলার আইও (ইনভেস্টিগেশন অফিসার) তথা শালবনী থানার অধীন পিড়াকাটা পুলিশ পোস্টের তৎকালীন ইনচার্জ সুদীপ কর।
ঘটনার পরের দিন থেকেই মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এভাবে প্রায় ৩-৪ মাস ধরে মাঝেমধ্যেই অসুস্থ হওয়ার ফলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান পরিবারের লোকজন থেকে শুরু করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরপর, নির্যাতিতা ওই নবম শ্রেণীর ছাত্রীর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ বাড়ির লোকজন তাকে বারবার জিজ্ঞেস করেন এবং সাহস জোগান, তার সাথে কিছু ঘটেছে কিনা বলার জন্য! অবশেষে জুন মাসের ১৬ তারিখে (২০২২) নাবালিকা ছাত্রী তার বাবা-মা’কে সাহস করে সবকিছু বলে। ওই দিনই নির্যাতিতার বাবা-মা শালবনী থানায় লিখিত অভিযোগ (FIR) দায়ের করেন। নাবালিকাকে গণধর্ষণ ও খুনের চেষ্টা সহ একাধিক পকসো ধারায় মামলা রুজু হয় সুশান্ত মানা ও তার ভাগ্না ললিত মানার বিরুদ্ধে। অভিযোগ পাওয়ার পরের দিনই অর্থাৎ ১৭ জুন (২০২২) এই মামলার আইও তথা পিড়াকাটা পুলিশ পোস্টের তৎকালীন ইনচার্জ সুদীপ করের (SI) নেতৃত্বে পুলিশকর্মীরা শালবনী থানারই একটি এলাকা থেকে নির্যাতিতার মামাতো দাদা তথা মূল অভিযুক্ত বছর ২৮-র সুশান্তকে গ্রেফতার করেন। পরের দিনই (১৮ জুন) ঝাড়গ্রাম জেলার মানিকপাড়া থানার একটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বছর ২২-র ললিত মানাকে। জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্ত প্রক্রিয়ায় আইও-র কাছে সবকিছুই স্পষ্ট হয়ে যায়। উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ জোগাড় করতেও সক্ষম হন আইও (IO)। ওই খালের ধার থেকে অভিযুক্তদের জুতোও পাওয়া যায় বলে এদিন জানান আইও তথা এসআই সুদীপ কর। মেডিক্যাল রিপোর্টও অভিযুক্তদের তথা অপরাধীদের বিপক্ষে যায়।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে এই মামলার চার্জ গঠন হয়। চলে বিচার প্রক্রিয়া। ২ বছরের মাথায় অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। বৃহস্পতিবার দু’জনেরই ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দান করেন পকসো আদালতের বিচারক আশুতোষ সরকার। এই রায়ে খুশি নির্যাতিতার পরিবার-পরিজন, এলাকাবাসী এবং তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সহপাঠীরা। উল্লেখ্য যে, বর্তমানে ওই নাবালিকা সম্পূর্ণ সুস্থ আছে এবং একাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছে।