মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ সেপ্টেম্বর: আবারও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের (Best Scientists) তালিকায় পশ্চিম মেদিনীপুরের মোগলমারি খ্যাত ‘ঐতিহাসিক’ দাঁতনের ‘ভূমিপুত্র’ তথা মেদিনীপুর কলেজ (Midnapore College) ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) ‘প্রাক্তনী’ সুমন্ত সাহু (Sumanta Sahoo)। প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে কাজ, গবেষণামূলক বিষয়ের ভিত্তিতে তথা বিভিন্ন বিষয়ে উদ্ধৃতি, এইচ-ইনডেক্স, এইচএম-ইনডেক্স সহ লেখকত্ব সামঞ্জস্য করা ইত্যাদির ভিত্তিতে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীদের তালিকা প্রস্তুত করেছে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত পৃথিবী-বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি (Stanford University)। সেই তালিকাতেই ২০২১ এবং ২০২৩ সালের পর আবারও (২০২৪) জায়গা করে নিলেন আইআইটি খড়্গপুরের (IIT Kharagpur) প্রাক্তনী সুমন্ত।
উল্লেখ্য যে, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ইতিমধ্যে সুমন্ত-র ১০০টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এখনও অবধি ৩-টি বই সম্পাদনা ও ৪-টি বইয়ের চ্যাপ্টারও লিখে ফেলেছেন সুমন্ত। ২০২১ সালে Yeungnam University-তে অনুষ্ঠিত ২১-তম ইন্টারন্যাশনাল সিম্পোসিয়াম অন ক্লিন টেকনোলজি (21st International Symposiums on Clean Technology) এ সুমন্ত’র একটি গবেষণাপত্র ‘Best Poster Award’ পায়। এই মুহূর্তে সুপার ক্যাপাসিটর ছাড়াও Li-ion ব্যাটারি এবং Na-ion ব্যাটারি নিয়েও গবেষণা করছেন বিজ্ঞানী সুমন্ত সাহু। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, দূষণহীন বা পরিবেশ-বান্ধব যান হিসেবে ইলেকট্রিক গাড়ি বা ব্যাটারিচালিত গাড়ি’র ভূমিকা অপরিসীম। ভারতের বাজারেও ক্রমশ তা পেট্রোল বা ডিজেল চালিত গাড়ির বিকল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করছে! এই ই-কার বা ইলেকট্রিক গাড়িকে আরও উন্নত ও গতিশীল করতে দেশ-বিদেশের যে সমস্ত বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চলেছেন, তাঁদের মধ্যেই অন্যতম পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতনের ‘ভূমিপুত্র’ সুমন্ত সাহু। রিচার্জেবল ব্যাটারির গতানুগতিক ক্যাপাসিটরের তুলনায় ‘সুপার ক্যাপাসিটর’ (Supercapacitor) অনেক দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে বলে জানান বিজ্ঞানীরা। সেই সুপার ক্যাপাসিটর ব্যাটারির ‘ইলেকট্রোড’ (Electrode) নির্মাণে নিমগ্ন সুমন্ত ২০২১ ও ২০২৩ সালের পর এবারও স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি (Stanford University) প্রকাশিত বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ২ শতাংশ বিজ্ঞানীদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন। এমনকি গত দু’ বছরের তুলনায় র্যাঙ্কিংয়েও এবার অনেকটাই এগিয়েছেন বছর ৩৭-র এই তরুণ বিজ্ঞানী।
এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, দাঁতনের রায়বাড় (উত্তর) গ্রামের বাসিন্দা সুমন্ত ২০১৩ সালে পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চ (Post-Doctoral Fellowship) করার পর দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)-র একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে (Yeungnam University) ‘আন্তর্জাতিক গবেষক’ রূপে নিযুক্ত আছেন। সুমন্ত-র ‘স্বপ্নের দৌড়’ অবশ্য শুরু হয়েছিল জন্মস্থান দাঁতন থেকেই। দাঁতন উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল! সেখান থেকে, বাংলা তথা দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঐতিহাসিক মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত)-এ রসায়ন নিয়ে সাম্মানিক স্নাতক (Honours in Chemistry)। এরপর, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর (Master of Science in Inorganic Chemistry) এবং পরবর্তী সময়ে আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur) থেকে গবেষণা (Ph. D) করেন। সুমন্ত’র বাবা শ্রীকান্ত সাহু দাঁতন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক। মা অমিতা সাহু গৃহবধূ। ভাই অনীকও একজন গবেষক। ‘মেদিনীপুরের গর্ব’ সুমন্ত এবারও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের তালিকায় জায়গা করে নেওয়ায় উচ্ছ্বসিত পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে আপামর দাঁতন তথা মেদিনীপুরবাসী। সুমন্ত জানান, “পরিবেশের স্বার্থে তথা দূষণ কমানোর জন্য ই-কারের ভূমিকা অপরিসীম। তবে, সমস্ত দিক দিয়েই পেট্রোল বা ডিজেল চালিত গাড়ির বিকল্প হিসেবে এই ইলেকট্রিক গাড়িকে আরও উন্নত ও আধুনিক রূপ দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য।”