দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: রাজ্য জুড়ে ভয়াবহ হারে বেড়ে চলেছে ডেঙ্গু। বাড়ছে জেলাতেও। চলতি মরশুমে পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও অবধি আক্রান্ত প্রায় ১৩০ জন। তবে, সোসাইটি-কে বাঁচাতে সেই ডেঙ্গুর ভয় উপেক্ষা করেই এক হাঁটু নর্দমার জলে নেমে পড়লেন খড়্গপুরের সেই প্রতিবাদী যুবক সৌরভ! হাতে ধরা প্ল্যাকার্ড- “ড্রেন কবে হবে?” হ্যাঁ, রেল শহর খড়্গপুরের একপ্রান্তে অবস্থিত আইআইটি সংলগ্ন হিজলি এলাকায় অবস্থিত অভিজাত হিজলি কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি স্বাধীনতার সময়কালে অর্থাৎ ৭৫ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হলেও নেই নিকাশি ব্যবস্থা। তাই, সামান্য বৃষ্টিতেই জমে যায় জল! এদিকে, সোসাইটির সামনে গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে একাধিক ফ্ল্যাট বা আবাসন-ও। অথচ, নেই কোনো নিকাশি ব্যবস্থা! এর মধ্যেই, বছর দুয়েক আগে ড্রেন তৈরির যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, তাও এখন এক পরিত্যক্ত নালায় পরিণত হয়েছে। বলা যায়, মশার বংশবিস্তারের এক আদর্শ জায়গা হয়ে উঠেছে! রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেই জমা জলের মাঝে দাঁড়িয়েই প্রতিবাদ তুলে ধরেছেন স্থানীয় যুবক তথা খড়্গপুর দক্ষিণ মণ্ডলের বিজেপি’র সাধারণ সম্পাদক সৌরভ নাথ।
সৌরভের বক্তব্য, “১৮৯ একর জায়গার উপর তৈরি হয়েছে অভিজাত হিজলি কো-অপারেটিভ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি। থাকেন আইআইটি খড়্গপুরের অধ্যাপক, প্রাক্তনী থেকে চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ীরা। কিন্তু, গোটা সোসাইটি চত্বর জুড়ে কোথাও নিকাশির ব্যবস্থা নেই। এমনিতেই যা অবস্থা, এই অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা ডেঙ্গুর ভয় পাচ্ছেন। ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমার যদি ডেঙ্গু হয় তো হোক!” প্রসঙ্গত, রবিবার খড়্গপুর পৌরসভার ৩৪ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত হিজলি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি’র ৭৫ বর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মানস রঞ্জন ভুঁইয়া, এমকেডিএ চেয়ারম্যান দীনেন রায় সহ অন্যান্যরা। ছিলেন, এলাকার ১২ বছরের কাউন্সিলর তথা হিজলি ডেভেলপমেন্ট সোসাইটিরও গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা তৃণমূল নেতা অপূর্ব ঘোষ-ও। তবে, অরাজনৈতিক সোসাইটির অনুষ্ঠানে ডাক পাননি বাম কিংবা বিজেপি মনোভাবাপন্ন কেউ! আর, এই দিনটিকেই প্রতিবাদের জন্য বেছে নিয়েছিলেন এলাকার প্রতিবাদী মুখ সৌরভ। তাঁর সীমিত ক্ষমতায়, একক উদ্যোগে এর আগেও তিনি হিজলি-প্রেমবাজার এলাকা জঞ্জালের স্তূপ হয়ে ওঠায় পথে নেমেছিলেন। কাউন্সিলরের রোষের মুখেও পড়তে হয়েছিল। পরে অবশ্য স্বয়ং পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার গিয়ে এলাকার সাফাই নিয়ে উদ্যোগী হয়েছিলেন। গতকাল অর্থাৎ রবিবার-ও সোসাইটি এলাকাতে কোনো নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায়, সোসাইটির সামনে পরিত্যক্ত নালায় (বা, নর্দমাতে) নেমে প্রতিবাদ জানালেন সৌরভ। তাঁর হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা- “ড্রেন কবে হবে?” আর, সৌরভ-কে সমর্থন জানাতে হাজির হয়েছিলেন সোসাইটি এবং আশেপাশের ফ্ল্যাটের অনেক বাসিন্দারাই। গৃহবধূ অপরাজিতা দে থেকে সোসাইটির বাসিন্দা উত্তম কুমার প্রমুখ বললেন, “অভিজাত সোসাইটির-ই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ভাবুন বাকি জায়গায় কি চলছে!” আর, সৌরভ বললেন, “পাশেই অনুষ্ঠান চলছে, কাউন্সিলর এসে খাওয়াদাওয়া করে চলে যাবেন! ১২ বছর ধরে কাউন্সিলর আছেন উনি, এলাকার অবস্থা যা করে রেখেছেন তা বলার নয়।” এই বিষয়ে কাউন্সিলের সঙ্গে অবশ্য যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি!