দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ এপ্রিল:আর কয়েক ঘন্টা পরই শুরু হচ্ছে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক (HS 2022) পরীক্ষা। অতিমারী দশা কাটিয়ে প্রায় দু’বছর পর হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক (Higher Secondary)। অতিমারীর দৌলতেই এই প্রথম হোম সেন্টার অর্থাৎ নিজেদের স্কুলেই পরীক্ষা দিতে পারছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা। সেকারণেই তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে, পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা। জানিয়েছেন, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য। প্রসঙ্গত, শেষ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হয়েছিল ২০২০ সালে। তবে, করোনার বাড়বাড়ন্তের জেরে মাঝপথেই স্থগিত হয়ে গিয়েছিল পরীক্ষা। পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে করোনার কারণে অফলাইনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই, এবছর যাতে ছাত্রছাত্রীরা চাপমুক্তভাবে পরীক্ষা দিতে পারে, সেইকারণেই হোম সেন্টারে পরীক্ষার আয়োজন করা হচ্ছে। এনিয়ে সংসদ সভাপতি বলেন, ছাত্রছাত্রীরা পরিচিত জায়গায়, পরিচিত পরিবেশে যাতে নিশ্চিন্তে পরীক্ষা দিতে পারে, সেজন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সংসদ সূত্রে খবর, ২০২০ সালে শেষ যখন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হয়েছিল, তখন গোটা রাজ্যে মোট পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৩০টি। কিন্তু, এবছর যেহেতু হোম সেন্টারে পরীক্ষা হবে তাই প্রত্যেকটি স্কুলই এবছর উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্র। এবছর মোট পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা ৬ হাজার ৭২৭টি। যা গত বারের তুলনায় তিনগুণ বেশি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও এবছর মোট ৪৪২-টি সেন্টার থাকছে। পরীক্ষার্থী প্রায় ৪০ হাজার। এবছরের পরীক্ষার্থী ৩৮ হাজার ৯৫৩ জন (তবে, সিসি বা ফেল করা ক্যান্ডিডেট সহ সংখ্যাটা ৩৯০৫৫)। তার মধ্যে ছাত্রী ২০ হাজার ৫৩৬ জন, ছাত্র ১৮ হাজার ৪১৭ জন। ছাত্রদের তুলনায় ২১১৯ জন ছাত্রী বেশি পরীক্ষা দেবে। জেলায় মোট ৭২টি মূল কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে মেদিনীপুর সদর মহকুমায় ২৪, খড়গপুর মহকুমায় ৩৪ এবং ঘাটাল মহকুমায় ১৪টি। সব থেকে বেশি পরীক্ষার্থী রয়েছে খড়গপুর মহকুমায়, মোট পরীক্ষার্থী ১৮ হাজার ৩৪২ জন। সেখানে ৮৯৬২ ছাত্র এবং ৯৩৮০ ছাত্রী পরীক্ষা দেবে। ঘাটাল মহকুমায় মোট পরীক্ষার্থী ৭ হাজার ৯৪৩ জন। ছাত্র ৩২৭৮ জন, ছাত্রী ৪৬৬৫ জন। মেদিনীপুর সদর মহকুমায় ১২ হাজার ৬৬৮ জন মোট পরীক্ষার্থী। ছাত্র ৬১৭৭ জন, ছাত্রী ৬৪৯১ জন।

thebengalpost.net
নেওয়া হয়েছে সমস্ত প্রস্তুতি :

এদিকে, হোম সেন্টারে পরীক্ষা হলে ‘অনিয়ম’ হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন অনেকেই। নিজের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা যাতে ভালো ফল করে, সেকারণে শিক্ষকরাই সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। সেসব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন চিরঞ্জীববাবু। তিনি বলেন, এইসব বিষয়গুলো নিয়ে আমরা বহুবার পর্যালোচনা করেছি। পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সকলকে সজাগ থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে। স্কুলের প্রতিটা ঘরে কমপক্ষে দু’জন করে ইনভিজিলেটর থাকবেন। তাছাড়া যেদিন যে বিষয়ের পরীক্ষা হবে, সেদিন সেই বিষয়ের কোনও শিক্ষক গার্ড দিতে পারবেন না। অর্থাৎ, ২ তারিখ যেহেতু বাংলা পরীক্ষা, তাই কোনও স্কুলের বাংলার শিক্ষক ওইদিন পরীক্ষায় গার্ড দিতে পারবেন না। সর্বোপরি, পরীক্ষায় নকল রুখতে এবছর আরও কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে সংসদ। পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল বা কোনও ইলেক্ট্রনিক্স বস্তু নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন না। পরীক্ষা শুরুর আগে কোনও পরীক্ষার্থীর কাছে মোবাইল নেই, এটা সুনিশ্চিত করার পর তবেই প্রশ্নপত্র বিলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংসদের তরফে। যেহেতু পরীক্ষা চলবে দুপুর ১টা ১৫ পর্যন্ত, তাই ১২টা ৪৫ এর আগে কেউ পরীক্ষাকেন্দ্র ছেড়ে বেরতে পারবে না বলে জানানো হয়েছে। কোনও পরীক্ষার্থী যাতে পাশের বেঞ্চের কোনও পরীক্ষার্থীর দেখে লিখতে না পারে, তার জন্য একাধিক সেটের প্রশ্নপত্র থাকছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতর শিক্ষক থেকে শুরু করে কোনও অশিক্ষক কর্মীও মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন না। সর্বোপরি, ‘টোকাটুকি’র প্রমাণ পাওয়া গেলেই, সেই স্কুলের অনুমোদন বাতিল করার হুমকিও দিয়ে রাখা হয়েছে সংসদের তরফে। পরীক্ষার দিন সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে একশ মিটারের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। সমস্ত পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে যাতে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী থাকে এবং তারা যাতে সকাল সাড়ে সাতটা থেকেই পাহারা দেয়, তার জন্য জেলার ডিএম ও এসপিদের অনুরোধ করা হয়েছে।

thebengalpost.net
কিছুক্ষণ পরই‌ শুরু হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা :