দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ জানুয়ারি: “এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি/নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার…!” সুকান্তের এই মর্মবাণীই যেন সদর্পে উচ্চারিত হচ্ছে মোগলমারির প্রশান্ত’র কর্ম-কন্ঠে। এ কথা বলাই যায়, মেদিনীপুরের ‘মোগলমারি’ এখন জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যের বুকে উজ্জ্বল এক নাম। বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের এই স্থান এখন জেলার অন্যতম ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র। এই মোগলমারিতেই থাকেন এক অতি সাধারণ এক মুদি-দোকানি প্রশান্ত চন্দ। পেশায় কিংবা পরিচয়ে ‘সাধারণ’ হলেও, সমাজ আর পরিবেশের ঐকান্তিক অবদানে প্রশান্ত হয়ে উঠেছেন ‘অসাধারণ’। এই মুহূর্তে দাঁতনের বামনপুকুর বাইপাস দিয়ে দাঁতনে প্রবেশ করলেই, রাস্তার দু’ধারে চোখে পড়বে সাধারণ প্রশান্তের কিছু অসাধারণ কীর্তি! সারি সারি গাছে টাঙানো প্রশান্ত’র বার্তা- “একটি গাছ একটি প্রাণ, গাছকে ভাবুন নিজের সন্তান” কিংবা “প্রকৃতি আমাদের হয়ে উঠছে অশান্ত, গাছই তাকে রাখবে শান্ত” অথবা “খেয়াল রাখুন জনগণ, বিনা কারণে নয় নিধন” প্রভৃতি।
জঙ্গলমহল পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরের চারিপাশে যখন দাউ দাউ করে জ্বলছে জঙ্গল! এক ধরনের অসাধু মানুষের নিকৃষ্ট মানসিকতায় ধ্বংস হচ্ছে সবুজ, ঠিক সেই সময়ই পশ্চিম মেদিনীপুরের এক সাধারণ মুদি-দোকানির ‘সবুজ বাঁচানো’র এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টা মুগ্ধ করে বৈকি! মুদি দোকান থেকে যে সামান্য আয় হয়, সেই আয় থেকেই অর্থাৎ গাঁটের কড়ি খরচ করেই প্রশান্ত তাঁর কাতর-বার্তা ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন জনমানসে। ‘নিষ্ঠুর’ মানুষ জনদের একটু ‘মানবিক’ করে তুলতে প্রশান্ত বলছেন, “দেখুন, আমাদের চারপাশের পৃথিবী আজ দূষণে পরিপূর্ণ। ধ্বংসের মুখে প্রকৃতি। তাই, আমাদেরকেই তো আমাদের চারপাশের গাছপালাকে রক্ষা করতে হবে, বলুন!” তাঁর সংযোজন, “যখন দেখি, একধরনের অসাধু লোকজন রাস্তার পাশের এই গাছগুলিতে আগুন দিয়ে, পরে তা সুযোগ বুঝে কেটে নিয়ে যায়, তখন খুব কষ্ট হয়। সামান্য স্বার্থপূরণের জন্য পৃথিবীর বা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের যে কি ক্ষতি করছে সে, তা যদি একটু বুঝত!”
তবে, নিষ্ঠুর সমাজ বুঝুক বা না বুঝুক, প্রশান্ত অবশ্য নিজের কর্মে সর্বদা অটল-অচল। তা সে কোভিড পর্বে এলাকা জুড়ে সচেতনতার প্রচার হোক কিংবা সবুজ বাঁচাতে গাছে গাছে নিজের তৈরি ‘ছড়া’ ছড়িয়ে দেওয়াই হোক। ওই মুদি দোকানের আয়েই চলে, স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে নিজের সংসার। আর, সেখান থেকেই কিছু অর্থ বাঁচিয়ে চলে বছর ৪৫ এর প্রশান্তের সমাজ সেবা। ইতিমধ্যে, ‘সহিষ্ণুতার নামতা’ (২০১৭) কিংবা ‘শতকিয়ায় স্বচ্ছতা’ (২০১৮) রচনা করে প্রশান্ত দাঁতন তথা মোগলমারি এলাকায় পরিচিত নাম। কোভিড পর্বেও তাঁর কর্মকাণ্ডে মুগ্ধ হয়েছেন এলাকাবাসী। আর এবার সবুজ বাঁচানোর লড়াইয়ে মুগ্ধ জেলাবাসী! তবে, পৃথিবী আর প্রকৃতি বাঁচানোর লড়াইতে থেমে থাকতে চান না প্রশান্ত। নিজের সবুজ-সুন্দর বাগানের ( স্বচ্ছ শ্রী) মাঝে দাঁড়িয়ে গেয়ে ওঠেন, “প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে/ মোরে আরো আরো দাও প্রাণ….!”