মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ জুন: জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের প্রান্তিক এলাকায় বাড়ি। বাবা সামান্য পাম্প অপারেটর। মা আইসিডিএস কর্মী। প্রত্যন্ত এলাকায় থেকে ছেলেকে বড় কোন সংস্থা বা পেশাদার কোচিং সেন্টারে ভর্তি করার সামর্থ্য ছিলনা তাঁদের। তবে, শৈশব থেকেই মেধাবী রিতেশ-কে অবশ্য কোনো বাধাই রুখে দিতে পারেনি! শালবনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘গর্ব’ রিতেশ প্রামাণিক বরাবরই বিদ্যালয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে এসেছে। ২০২১ সালে মাধ্যমিকে ৬৮০ (৭০০’র মধ্যে)’র পর চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিকেও বিদ্যালয়ের প্রথম স্থানাধিকারী হিসেবে ৪৫২ নম্বর (৯০ শতাংশের বেশি) পেয়েছে রিতেশ। আর, তার সঙ্গেই ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা NEET (National Eligibility cum Entrance Test)- এ নজরকাড়া সাফল্য! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অন্যতম সফল পরীক্ষার্থী হিসেবে সারা দেশে ২৪৪৫ র্যাঙ্ক (All India Ranking) করেছে জঙ্গলমহল শালবনীর বাঘঘরা’র বাসিন্দা রিতেশ। নিজের ক্যাটাগরিতে তার র্যাঙ্ক ২১২ (ESW/ আর্থিক ভাবে অনগ্রসর শ্রেণী)।
রিতেশদের বাড়ি শালবনী থেকে বেশ খানিকটা ভেতরে বাঘঘরা গ্রামে। যৌথ পরিবারেই থাকত তারা। তবে, মাধ্যমিকের পর ছেলের টিউশন কিংবা ইন্টারনেটের সুবিধার জন্য শালবনী বাজার সংলগ্ন চকতারিনীতে একটি ছোট বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন রিতেশের বাবা রেন্টু প্রামাণিক। পেশায় তিনি শালবনী টাঁকশালের পাম্প অপারেটর। রিতেশের মা শম্পা প্রামাণিক শালবনীর ভালুকশোল গ্রামের আইসিডিএস কর্মী। দিদি তৃষা প্রামাণিক মেদিনীপুর কলেজ থেকে সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করার পর এখন বি.এড করছেন। রিতেশ জানায়, প্রতিষ্ঠিত বা নামকরা কোন সংস্থা থেকে কোচিং বা প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ সে পায়নি। স্কুলের শিক্ষক এবং টিউশনের ব্যাচ-ই ছিল তার ভরসা। এমনকি, বাড়িতেও ছিল না আলাদা কোনো গৃহশিক্ষক। তবে, ইউটিউব কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে অনুশীলন করেছিল সে। রিতেশ বলে, “বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা পর্যাপ্ত সাহায্য করেছেন। বিজ্ঞানের বিষয়গুলির জন্য টিউশনের ব্যাচেও যেতাম। এছাড়াও, অনলাইন মাধ্যম থেকে সাহায্য পেয়েছি।” কঠোর পরিশ্রম আর নিষ্ঠাতেই রিতেশের এই সাফল্য বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু শেখর বাগ। তিনি বলেন, “রিতেশ শুধু আমাদের স্কুলের নয়, শালবনী ও মেদিনীপুরের গর্ব।” সম্প্রতি, বিদ্যালয়ের তরফে সংবর্ধনাও দেওয়া হয়েছে রিতেশকে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রিতেশ কলকাতা মেডিকেল কলেজ অথবা কল্যাণী এইমস (AIIMS, Kalyani) থেকে MBBS সম্পূর্ণ করতে চায়। সার্জারি নিয়ে এম.এস করার ইচ্ছে রয়েছে তার। তবে, আপাতত ছোট ছোট ধাপে পা ফেলেই এগোতে চায় রিতেশ। সে বলে, “আগে ভালোভাবে এমবিবিএস সম্পূর্ণ করতে চাই। তারপর, সার্জারি নিয়ে M.S করার স্বপ্ন রয়েছে।” প্রত্যন্ত জঙ্গলমহল থেকেই উঠে আসুক একজন ভালো সার্জেন, চাইছেন আপামর শালবনীবাসীও।