দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৯ এপ্রিল:একই ক্যাম্পাসের মধ্যে তথা একই বিল্ডিং বা ভবনেই ক্লাস হয় সরকার পোষিত উচ্চ বিদ্যালয় এবং বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। প্রাতঃকালে বা সকালে (সকাল ৬ টা থেকে সকাল ১০ টা) পরিচালিত হয় ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়-টি। অন্যদিকে, দিবাভাগে অর্থাৎ বেলা ১০ টা ৪৫ থেকে পরিচালিত হয় সরকার পোষিত উচ্চ বিদ্যালয়টি। কিন্তু, সম্প্রতি (২০১৯ সালে) উচ্চ বিদ্যালয়ে নতুন প্রধান শিক্ষক যোগদান করার পর থেকে ওই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতবিরোধের সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ! যার চরম পরিণতি দেখা গেল, শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) সকালে। অভিযোগ, শুক্রবার সকালে বেসরকারি ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবক-অভিভাবিকারা এসে দেখেন, ভবনের যে সকল শ্রেণীকক্ষে শিশুদের ক্লাস হয়, সেগুলির সবকটিতেই তালা লাগানো! এদিকে, ছেলেমেয়েদের এদিন পার্বিক পরীক্ষার দিন। মহা সমস্যায় পড়েন শিক্ষক-শিক্ষিকা তথা অভিভাবকরাও। উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানতে পারেন, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশেই তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। অগ্যতা, স্কুলের বারান্দাতেই ছেলেমেয়েদের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে বেসরকারি ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরপরই, ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা। তাঁদের অভিযোগ, এই গরমের মধ্যে ছেলেমেয়েরা বারান্দায় বসে কিভাবে পরীক্ষা দেবে? এই অমানবিক কাজ উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিভাবে করতে পারল? এরপরই, বিক্ষোভে উত্তাল হয় স্কুল চত্বর। ঘটনাটি মেদিনীপুর শহরের কেরানীটোলায় অবস্থিত মোহনানন্দ বিদ্যামন্দির প্রাঙ্গণের। ঘটনা ঘিরে স্কুল চত্বর এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, স্থানীয় কাউন্সিলর, মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে কোতোয়ালী থানার পুলিশ কর্মীদের পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হয়।
জানা যায়, সরকার পোষিত কেরানীটোলা শ্রী শ্রী মোহনানন্দ বিদ্যামন্দির ছাড়াও, ওই একই ক্যাম্পাসে প্রাতঃকালে (Morning Session) শ্রী শ্রী বালানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি বেসরকারি স্কুলও পরিচালিত হয়ে আসছে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই এলাকার দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের শিক্ষার সঠিক বিকাশের স্বার্থে মোহনানন্দ সমাজসেবা সমিতি’র উদ্যোগে এই স্কুল-টি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৩ সালে। আবার, উচ্চ বিদ্যালয়-টি সরকারের অধীনে বা সরকার পোষিত হলেও, বিদ্যালয়ের জমি থেকে শুরু করে ভবন- সবকিছুই এই মোহনানন্দ সমাজসেবা সমিতির ট্রাস্টি বোর্ডের অবদানেই গড়ে উঠেছে। যদিও, উচ্চ বিদ্যালয়ের পৃথক পরিচালন সমিতি আছে। তা সত্ত্বেও, ২০১৯ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধান শিক্ষক জ্ঞানেন্দ্রনাথ ভুঁইয়া’র আমলে ওই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো মতবিরোধ তৈরি হয়নি, বরং সামাজিক স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত ওই বিদ্যালয়টিকে সবরকম ভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। অভিযোগ, ২০১৯ সালে বর্তমান প্রধান শিক্ষক দায়িত্ব নেওয়ার পর, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির বিরোধ বাঁধে। তার প্রেক্ষিতেই সম্ভবত সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমিত কুমার ঘোষ বৃহস্পতিবার চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের পরিষ্কার নির্দেশ দিয়ে দেন, শুক্রবার সকালে তালা না খোলার জন্য! এরপরই, চরম ক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা। তাঁদের অভিযোগ, “উনি (প্রধান শিক্ষক) নিজে একজন শিক্ষক হয়ে, শিশুদের সঙ্গে এরকম অমানবিক কাজ করলেন কি করে? গতকাল রাত দু’টো পর্যন্ত শহরে লোডশেডিং থাকায় এমনিতেই ছেলেমেয়েদের ভালো করে ঘুম হয়নি। তার উপর এই গরমে, ফ্যান ছাড়া ওরা যে কিভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে, তা ওরাই জানে! এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।”
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্রমেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয় এবং সকাল ৮ টা নাগাদ বেনজির বিক্ষোভে উত্তাল হয় মোহনানন্দ স্কুল চত্বর। এমনকি, বিক্ষোভ চলাকালীন প্রধান শিক্ষক সুমিত কুমার ঘোষ পৌঁছলে তাঁকে একপ্রকার ঘিরে ধরেন অভিভাবকরা। প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, তাঁকে শারীরিক ভাবেও নিগ্রহ করা হয়েছে। তাঁর এবং উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি অজয় রঞ্জন সাহু’র অভিযোগ, “বিভিন্নভাবে বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ গত দু-আড়াই বছর আমাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করছে। প্রায় আড়াই বছর কোনোরকম ভাড়া বা বিদ্যুতের বিল দেননি! বৈঠকে ডাকলে, উল্টে আমাদের জানানো হচ্ছে, এই বিদ্যালয় চত্বর এবং ভবনের উপর তাদের অধিকার-ই বেশি। কিন্তু, মোহনানন্দ সমাজসেবা সমিতি এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেও, এখন তা সরকারি সম্পত্তি। স্বাভাবিকভাবেই, বিনা ভাড়ায় বছরের পর বছর কিভাবে ওনারা এত সুবিধা নিতে পারেন? তা সত্ত্বেও, সকালে ওদের স্কুল হয় বলে আমরা এই গরমের মধ্যেও দিনের বেলা স্কুল চালাচ্ছি। এদিনও আমাদের পরীক্ষা ছিল সকাল সাড়ে দশটা থেকে। আর, ওদের যে পরীক্ষা হবে তা আমদের জানানো হয়নি।” অন্যদিকে, মোহনানন্দ সমাজসেবা সমিতি এবং বালানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে ডাঃ বি.বি. মন্ডল, জ্ঞানেন্দ্রনাথ ভুঁইয়া প্রমুখ-রা বলেন, “এই বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সম্পূর্ণভাবে সমাজসেবা মূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এলাকার দুঃস্থ শিশুদের শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। নূন্যতম বেতন (মাসে মাত্র ১৫০ টাকা) নেওয়া হয়। তার মধ্যেই এতজন শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতন সহ সবকিছু চালানো হয়। তা সত্ত্বেও, অতিমারীর আগে ৪০০ জন ছাত্র-ছাত্রী থাকলেও, বর্তমানে তা অর্ধেক হয়ে গেছে, সেজন্যই ভাড়া মেটাতে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু, সেজন্য এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের গরমের মধ্যে কষ্ট দেওয়াটা কি ঠিক? চরম অমানবিক কাজ করেছেন প্রধান শিক্ষক।” এলাকার (১৩ নং ওয়ার্ড) কাউন্সিলর মোজাম্মেল হোসেন, মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন খান প্রমুখদের মধ্যস্থতায় আপাতত বিষয়টি মিটমাট হলেও, স্থায়ী সমাধান না হওয়ায় অখুশি উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ! এদিকে, প্রধান শিক্ষকের গায়ে হাত তোলার অভিযোগে কোতোয়ালী থানার পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৭ সেপ্টেম্বর: দু'দিনের টানা বৃষ্টিতে সোমবার সকাল থেকেই প্লাবিত…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ সেপ্টেম্বর: ঝাড়গ্রাম থেকে মেদিনীপুর শহরে আসার পথে মেদিনীপুর…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ সেপ্টেম্বর: দু'দিনের টানা বৃষ্টিতে বন্যার ভ্রুকুটি পশ্চিম মেদিনীপুর…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, খড়্গপুর, ১৫ সেপ্টেম্বর: তৃতীয় বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (Vande Bharat Express) পেল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ সেপ্টেম্বর: প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করেই শনিবার সন্ধ্যায়…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, ১৪ সেপ্টেম্বর: একদিকে খুন-ধর্ষণের মামলাতেও গ্রেফতার হলেন আর জি কর মেডিক্যালের…