দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ মার্চ: মেদিনীপুর শহরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাবালিকার একটি জরুরী অস্ত্রপচারের জন্য প্রয়োজন ছিল এ পজিটিভ (A+) রক্তের। এদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ব্লাড ব্যাঙ্কে সেই মুহূর্তে মজুত ছিলোনা এ পজিটিভ (A+) রক্ত। দুশ্চিন্তায় পড়ে যান নাবালিকার অসহায় পরিজনেরা। এদিক ওদিক খোঁজ নেওয়া শুরু করেন তারা। সেই সময়ই বেলদার গুহিরামপুর এলাকার ওই পরিবারের এক শুভানুধ্যায়ী (প্রভাত মাইতি) যোগাযোগ করেন মেদিনীপুর শহর তথা জেলার রক্তদান আন্দোলনের অন্যতম কর্মী ও শিক্ষক সুদীপ কুমার খাঁড়ার সাথে। সুদীপ বাবু ‘ব্লাড ফর মেদিনীপুর’ নামে একটি whatsapp গ্রুপে বিষয়টি জানান। মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই সুদীপ বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন মেদিনীপুর শহরেরই যুবক সেখ হানিমুদ্দিন আহমেদ ওরফে রাজা। সুদীপ বাবুকে আশ্বস্ত করে রাজা বলেন, “আমি রোজা রেখেছি। কিন্তু, চিন্তা করবেন না। আমি রক্ত দেব। কিছু হবে না!”

সুদীপ বাবুই এরপর রাজার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন নাবালিকার পরিবারের। বৃহস্পতিবার দুপুরে, যথাসময়ে রাজা পৌঁছে যান মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে। নিয়মমাফিক চিকিৎসকেরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি রোজা রেখেছেন কিনা! হানিমুদ্দিন বলেন, “হ্যাঁ”। চিকিৎসকেরা তাঁকে জানান, কিছু তো খেতেই হবে! এরপরই, নাবালিকার বাবা মিঠুন হেমব্রম ছুটে গিয়ে ওআরএসএল কিনে আনেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদার বাসিন্দা মিঠুনের হাতের ORSL খেয়েই রোজা ভাঙেন মেদিনীপুর শহরের সেখ হানিমুদ্দিন ওরফে রাজা! রোজা ভেঙে বছর ১২-র নাবালিকা পম্পা হেমব্রমের জন্য রক্ত দেন রাজা (হানিমুদ্দিন)। সেই সময় পাশে ছিলেন শিক্ষক ও সমাজকর্মী সুদীপ কুমার খাঁড়া সহ পম্পার পরিবারের লোকজনও। রক্ত দেওয়ার পরই পম্পার বাবা মিঠুন হেমব্রম হানিমুদ্দিন ওরফে রাজার হাতে তুলে দেন কিছু খাবার-দাবার। হানিমুদ্দিন তাতে বাধা দিতে চাইলেও, কথা শুনতে রাজি নন মিঠুনরা। বছর ২৫-র যুবক হানিমুদ্দিনকে জড়িয়ে ধরে মিঠুন বলেন, “তোমার এই রক্ত-ঋণ তো আমি পরিশোধ করতে পারব না! আশীর্বাদ করি, অনেক বড় হও।” শিক্ষক ও সমাজকর্মী সুদীপ কুমার খাঁড়া বলেন, “মেদিনীপুর শহরে একটি ফাস্টফুডের দোকান আছে রাজার। কিন্তু, ও বরাবরই বড় মনের। এর আগেও অনেকবারই রক্ত দিতে ছুটে এসেছে। আর আজ রোজা ভেঙ্গে রক্ত দিল। মেদিনীপুরের এই যুবক আবারও একবার প্রমাণ করল, সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই!” আর রাজা বলেন, “কি এমন করেছি, মানুষ হয়ে মানুষের কর্তব্য পালন করেছি মাত্র!”