দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২ সেপ্টেম্বর: অবশেষে গ্রেফতার হলেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের ‘প্রাক্তন’ অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ! টানা ১৫ দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেফতার করল সিবিআই (CBI)। গত ১৬ অগস্ট থেকে টানা জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছিল সন্দীপকে। গত শনিবার এবং রবিবার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। আজ, সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ফের তাঁকে তলব করা হয় সিজিও কমপ্লেক্সে। সন্ধ্যায় সেখান থেকে বের করে সিবিআই আধিকারিকেরা সন্দীপকে নিয়ে যান নিজাম প্যালেসে। তার পরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে জানানো হয়, গ্রেফতার করা হয়েছে সন্দীপকে। যদিও, জুনিয়র চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এখনই তাঁরা আন্দোলন তুলেছেন না!
এদিন সন্ধ্যায় লালবাজারের বাইরে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা জানান, “ধর্ষণের মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। দুর্নীতির মামলায় সন্দীপ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাই, ‘দিদি’র উপর পাশবিক অত্যাচারের যাঁরা আসল দোষী, তাঁদের খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের আন্দোলন চলবে।” অন্যদিকে, সোমবার সন্ধ্যাতেই আরো একটি আন্দোলনে ‘জয়ী’ হলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। এই জয় মূলত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকদের হলেও, ‘থ্রেট কালচার’-র বিরুদ্ধে এই জয়ে উচ্ছ্বসিত গোটা রাজ্যের মেডিক্যাল পড়ুয়া তথা জুনিয়র চিকিৎসকেরাই! এদিন, সন্ধ্যার বৈঠক শেষে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল (Principal) ডঃ মৌসুমী নন্দী জানিয়ে দিলেন, ‘অভিযুক্ত’ হাউসস্টাফ মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিক আজ (২ সেপ্টেম্বর) থেকে আর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবেন না। হোস্টেলেও যেতে পারবেন না! এমনকি, হাউসস্টাফশিপ থেকেও তাঁকে ‘চিরতরে’ অব্যাহতি (Terminated from housestaffship) দেওয়া হয়েছে। হাউসস্টাফশিপের মেয়াদ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই অর্থাৎ ‘অসম্পূর্ণ’ (Discontinued অবস্থাতেই তাঁকে ‘অব্যাহতি’ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষা! যদিও, জুনিয়র চিকিৎসকদের অভিযোগ, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে মেয়াদের থেকেও বেশি সময় ধরে হাউসস্টাফশিপ চালিয়ে যাচ্ছিলেন মুস্তাফিজুর।
উল্লেখ্য যে, গত বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) থেকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসক ও ডাক্তারি পড়ুয়ারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিককে কলেজ থেকে বহিষ্কারের দাবিতে। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের TMCP ইউনিটের হেড মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিকের বিরুদ্ধে র্যাগিং, হুমকি এবং প্রভাব খাটানোর অভিযোগ এনেছিলেন তাঁরা। তাঁদের আন্দোলনের চাপে, বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) কলেজ কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিকের প্রবেশের উপর ‘নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করা হয়। যদিও, ঠিক তার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে। এরপরই, শনিবার (৩১ আগস্ট) থেকে আন্দোলন আরো জোরদার করেন জুনিয়র চিকিৎসক ও ডাক্তারি পড়ুয়ারা। শনিবার মধ্যরাত অবধি তাঁরা ঘেরাও করে রাখেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার (MSVP) ডঃ জয়ন্ত রাউত, ডিন অফ স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স ডঃ আর.এন মাইতি এবং সিনিয়র মোস্ট অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডঃ সোমদেব গুপ্ত-কে। ‘সোমবার জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে’ এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর মধ্যরাতে ঘেরাও মুক্ত হন তাঁরা। অবশেষে সেই বৈঠক শুরু হয় সোমবার দুপুর থেকে। সেখানে মুস্তাফিজুরের ‘র্যাগিং’ করার ভিডিও বা তথ্য-প্রমাণ তুলে দেওয়া হয় কলেজ কাউন্সিলের হাতে। এরপরই মুস্তাফিজুর-কে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কলেজ কাউন্সিল। বৈঠক শেষে জানানো হয়, ‘বহিষ্কার’ করা হয়েছে মুস্তাফিজুর রহমান মল্লিককে। শুধুমাত্র তদন্ত কমিটির ডাকে উপস্থিত হওয়া ছাড়া, কলেজ ও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে মুস্তাফিজুর প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রিন্সিপাল ডঃ মোসুমী নন্দী। এরপরই, আন্দোলনের ‘জয়’ বলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তবে, ‘অভয়া’ বা ‘তিলোত্তমা’-র বিচারের দাবিতে তাঁদের আন্দোলন চলবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ‘প্রতিবাদী’ জুনিয়র চিকিৎসক ও ডাক্তারি পড়ুয়ারা।