দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ আগস্ট: গত ২৫ জুলাই দুপুরে লোন সংক্রান্ত একটি কাগজে সই করাতে গিয়েছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) স্টাফ কো-অপারেটিভ সোসাইটির এক কর্মী। বেশ অবাকই হয়েছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ইনফরমেশন সায়েন্টিস্ট তথা ভারপ্রাপ্ত কন্ট্রোলার (পরীক্ষা নিয়ামক) বিপ্লব চক্রবর্তী। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কোন লোনের জন্য আবেদনই জানাননি! তিনি একটু তলিয়ে জানার চেষ্টা করেন, বিষয়টি সম্পর্কে। এরপর তিনি যা শোনেন, তাতে রীতিমত ভিরমি খাওয়ার জোগাড় হয়! তাঁর নামে ৫৮ হাজার টাকা লোনের আবেদন জানিয়ে, সেই টাকা ইতিমধ্যে তুলেও নেওয়া হয়েছে স্টাফ কো-অপারেটিভের মাধ্যমে। অথচ তিনি এই বিষয়ে বিন্দুবিসর্গও জানেন না! সই জাল করেই সমস্তটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক বিপ্লব চক্রবর্তীর।
নাম, পদ, তথ্য (বা, ডকুমেন্টস) ব্যবহার করে এবং সই জাল করে নাহয় কো-অপারেটিভে লোনের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে; কিন্তু টাকা তোলা হল কিভাবে? এটা জানার জন্যই বিপ্লব বাবু ছুটে যান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই থাকা ইউকো ব্যাঙ্কের (UCO Bank) শাখায়। জানতে পারেন, বিয়ারার চেক (Bearer Cheque) ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়েরই অর্থ বিভাগের (Finance Department) টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরত প্রলয় কুমার ঘোষ ব্যাঙ্ক থেকে ওই টাকা তুলেছেন। অভিযোগ, ওই চেকেও বিপ্লব বাবুর সই জাল বা নকল করা হয়েছে। এরপরই, পুরো বিষয়টি তিনি লিখিত আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (Vice Chancellor) অধ্যাপক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী এবং নিবন্ধক (Registrar) ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দী-কে জানান। সেই সঙ্গেই মেদিনীপুর শহরের কোতোয়ালী থানাতেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ২ আগস্ট কোতোয়ালী থানার তরফে অভিযোগটি FIR হিসেবে নথিভুক্ত করা হয় এবং ঘটনার তদন্ত শুরু হয়।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে তথা উপাচার্যের তরফে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মীরা রীতিমত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মী জানান, ওই কর্মী তাঁদের স্যালারি বা বেতন সংক্রান্ত কাজ করেন। আর সেই সুযোগ নিয়ে নানা অপকর্ম করেছেন আগেও। আর এবার তো যা করেছেন, তা রীতিমত ক্রিমিনাল অফেন্স বা ফৌজদারি অপরাধ! এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মীরাও আতঙ্কে আছেন বলে জানিয়েছেন। আতঙ্কিত পরীক্ষা নিয়ামক বিপ্লব বাবুও। তিনি বলেন, “লিখিত অভিযোগে সমস্তটাই জানিয়েছি। নতুন করে কি আর বলব! শুধু এটাই চাইছি, এত বড় একটা প্রতারণার সঠিক তদন্ত হোক। আমি জানতেই পারলাম না, আমার নামে লোনের আবেদন করা হয়েছে এবং তা তুলেও নেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপ না নিলে, এরপর তো আরো বড় কিছু ঘটে যাবে!” ফোন ধরেননি অভিযুক্ত প্রলয় কুমার ঘোষ। যদিও, ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি নাকি অভিযোগ সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করেছেন! জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “FIR হয়েছে। ঘটনার তদন্তও শুরু করা হয়েছে। প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পেলেই, গ্রেপ্তার করা হবে অভিযুক্তকে।”