দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩০ ডিসেম্বর: ‘মানবিক’ কারণে মেদনীপুর আদালতে উপস্থিত হয়ে চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়ার জামিনে শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) আর ‘আপত্তি’ করলেন না মৃতা দিপালী খামরুই (৫২)- এর মেয়ে কেয়া মাইতি খামরুই! ফলে আপাতত ৫ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে ‘জামিন’ পেয়ে গেলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুরের ‘অভিযুক্ত’ স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কাঞ্চন ধাড়া। এ নিয়ে নানা ‘বিতর্ক’ কিংবা ‘রটনা’-র মধ্যেই, সঠিক বিচারের আশায় আবারও মেদিনীপুর আদালতের দ্বারস্থ হলেন ভুল চিকিৎসার শিকার আরেক রোগীনী ও তাঁর পরিবার। অভিযোগ, ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা রোডের বাসিন্দা (শ্বশুরবাড়ি ঝাড়গ্রামে), অলক্তা খামরইয়ের জরায়ু অপারেশন করতে গিয়ে তাঁর কোলন কেটে দিয়েছিলেন চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়া। মেদিনীপুর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন বা অস্ত্রপচার করেছিলেন ডাক্তার ধাড়া। পরে চেন্নাইতে গিয়ে একপ্রকার মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়াই করে বেঁচে ফিরেছিলেন অলক্তা। শনিবার সন্ধ্যায় সেই অলক্তা খামরই সহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা মেদিনীপুর আদালতে পৌঁছে পুনরায় চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়ার গ্রেফতারি বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুললেন!
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের মে মাসে (১৯ মে) চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়া সহ ওই বেসরকারি হাসপাতালের ৫ জন ডাইরেক্টরের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় FIR দায়ের করেছিলেন অলক্তা। তাঁর অভিযোগ, ঘটনার এতদিন কেটে গেলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি কোতোয়ালী থানা। অন্যদিকে, অভিযোগ ‘স্বীকার’ করে নিয়ে ‘ক্ষতিপূরণ’ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও, আজও তা দেননি ডাঃ কাঞ্চন ধাড়া কিংবা শহরের নান্নুরচকে অবস্থিত ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যেই, গত দু’দিন আগে (বৃহস্পতিবার) একই ঘটনার শিকার আরও এক ‘ভুক্তভোগী’ পরিবার তথা মৃতা রোগীনীর মেয়ে কেয়া মাইতি এবং স্বামী স্বপন খামরই বিচারের আশায় মেদিনীপুর জেলা আদালতে প্ল্যাকার্ড হাতে ধর্নায় বসেছিল। সেদিনই সন্ধ্যায় অভিযুক্ত চিকিৎসকের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিলেন মেদিনীপুর আদালতের বিচারক। সেই খবর সর্বত্র প্রকাশিত হওয়ার পর, শনিবার সন্ধ্যায় অলক্তা খামরই, তাঁর ভাই বাপি খামরই সহ পরিবারের সদস্যরা মেদিনীপুর জেলা আদালতে উপস্থিত হন বিচারের আশায় বা চিকিৎসকের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে। তাঁদের দাবি, কোতোয়ালি থানা কোন পদক্ষেপ করেনি। তাই, শনিবার তারা জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও গিয়েছিলেন। এই মামলা তাঁরা দ্রুত শুনানির জন্য মেদনীপুর আদালতের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন। তবে, আদালত সঠিক আইনি বিধি মেনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে অলক্তা খামরইয়ের আইনজীবীকে।
অন্যদিকে, ২ দিন আগেই (বৃহস্পতিবার) যে চিকিৎসকের গ্রেফতারি বা শাস্তির জন্য মেদিনীপুর আদালত চত্বরে ধর্নায় বসেছিলেন মৃতা দিপালী খামরুইয়ের মেয়ে কেয়া মাইতি খামরুই, শনিবার সন্ধ্যায় সেই কেয়া-ই মেদিনীপুর আদালতে উপস্থিত হয়ে জানালেন, “আমি মানবিক কারণে জামিনের বিরোধিতা করিনি। আজ অসংখ্য রোগী আর তাঁদের পরিবার সমস্যায় পড়েছেন। তাঁদের কথা ভেবে আমি এই সিদ্ধান্ত নিরাম। কারণ, চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়া জেলে যেতেই অন্যান্য অনেক চিকিৎসক একপ্রকার আন্দোলনে বসেছিলেন। তাঁরা সার্জারি করা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। সেজন্য বাধ্য হয়েই আমাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কারণ, আমি তো আর মা-কে ফিরে পাবোনা, কিন্তু আর কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়; সেটাই আমি চেয়েছি। তবে, বিচার প্রক্রিয়া যেমন চলছে চলবে। আমরা মামলা তুলে নিইনি। শেষ পর্যন্ত উনি যদি দোষী সাব্যস্ত হন, ওনার যাবজ্জীবন জেল বা যে শাস্তিই হোক না কেন; আমি খুশি হব।” জানা যায়, আদালত একাধিক শর্তে এদিন চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়াকে জামিন দিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো, তিনি এই এলাকা বা জুরিসডিকশনের বাইরে যেতে পারবেন না; কোনোভাবেই হুমকি বা প্রভাব কাটানোর চেষ্টা করা চলবে না; আদালত কিংবা তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে প্রভৃতি। তা সত্ত্বেও এদিনের এই জামিন-কাণ্ড নিয়ে ইতিমধ্যেই জেলা শহর মেদিনীপুরে নানা ‘জল্পনা’ (বা, রটনা) ছড়িয়েছে!