মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ মার্চ: ইংল্যান্ড, রাশিয়া ও জার্মানির পর এবার তাইওয়ান (Taiwan)। যৌথ গবেষণা এবং পঠনপাঠন প্রক্রিয়া (Academic Collaboration)’র মাধ্যমে সমৃদ্ধ হবেন জঙ্গলমহলের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (Vidyasagar University)- এর পড়ুয়ারা। তাইওয়ানের ন্যাশনাল চ্যাং কুং বিশ্ববিদ্যালয়ের (National Cheng Kung University, Taiwan) সঙ্গে এই বিষয়ে চলতি বছরেই MoU (Memorandum of understanding/মউ) স্বাক্ষরিত হতে চলেছে বলে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এর ফলে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সশরীরে তাইওয়ানের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে (NCKU) গিয়ে পঠন পাঠন এবং গবেষণা করতে পারবেন। এজন্য, তাইওয়ানের ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করবে বলেও জানা যায়। যোগ্যতা অনুযায়ী ছাত্র-ছাত্রীরা বৃত্তি বা সাম্মানিকও পেতে পারেন। অপরদিকে, তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও আসবেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আসবেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাও সেখানে যাবেন পাঠদান করতে। গত মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) এই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে।
জানা যায়, মঙ্গলবার তাইওয়ানের ন্যাশনাল চ্যাং কুং বিশ্ববিদ্যালয়ের ( ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন। বৈঠক হয় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। উপস্থিত ছিলেন, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র কুমার চক্রবর্তী, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন (Chemistry) বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা বর্তমানে ঝাড়গ্রামের সাধু রামচাঁদ মুর্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অমিয় কুমার পন্ডা, তাইওয়ানের ন্যাশনাল চ্যাং কুং বিশ্ববিদ্যালয়ের (NCKU) অধ্যাপক চ্যান ডেং জ্যান (Chyan Deng Jan), অধ্যাপক চিয়েন সিয়াং চ্যাং (Chien Hsiang Chang), অধ্যাপক সেন হাউ (Shen Haw), অধ্যাপক চ্যাং চিউ (Cheng Chiu), অধ্যাপক চুন ইয়েন লি (Chun Yen Liu) এবং ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক (Postdoctoral Research Fellow) ড. লিটন দে। এছাড়াও, বৈঠকে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ছিলেন নিবন্ধক (রেজিস্ট্রার) ড. জয়ন্ত কিশোর নন্দী, বিশ্ববিদ্যালয়ের RDC (Research and Development Cell)’র অধিকর্তা তথা রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক অজয় কুমার মিশ্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের IQAC (Internal Quality Assurance Cell)’র অধিকর্তা তথা গণিত বিভাগের অধ্যাপক প্রফেসর মধুমঙ্গল পাল, মানব শারীরবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক চন্দ্রদীপা ঘোষ প্রমুখ।
বৈঠক শেষে অধ্যাপক মধুমঙ্গল পাল জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান (Science) বিষয়ের পড়ুয়ারা ছাড়াও সোশ্যাল সায়েন্স বিষয়েও পড়ুয়ারাও তাইওয়ানের ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পঠনপাঠন ও গবেষণা করার সুযোগ পাবেন। এর ফলে নানাভাবে সমৃদ্ধ হবেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা।” তিনি এও জানান, ইতিমধ্যে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়কেজন পড়ুয়া NCKU’তে গিয়ে গবেষণা করার সুযোগ পেয়েছেন। এবার, স্নাতকোত্তর (M.SC/M.A) স্তর থেকেই সেই সুযোগ পাবেন পড়ুয়ারা। অধ্যাপক পাল এও জানান, “সম্প্রতি আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। সে দেশের দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ পাঠদান ও গবেষণা প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চায়।” বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় নবনিযুক্ত উপাচার্য অধ্যাপক পবিত্র কুমার চক্রবর্তী বলেন, “তাইওয়ানের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চলতি বছরে মউ (MoU) স্বাক্ষরিত হবে বলে আমরা আশাবাদী।” এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে ইংল্যান্ডের পূর্ব অ্যাংলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (University of East Anglia) এর সঙ্গে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের পড়ুয়াদের যৌথ পঠনপাঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়াও, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে রাশিয়ার বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স (Russian Academy of Sciences) এবং জার্মানির নুরেমবার্গ মিউজিক বিশ্ববিদ্যালয় (Nuremberg University of Music)- এরও MoU স্বাক্ষরিত হয়েছে ২০২২ সালে।