মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৫ আগস্ট:”নারী তুমি অনন্যা…”। রূপে, গুণে, সেবা কিংবা প্রেমে! মেদিনীপুরের পায়েল পাল। নিজের জন্মদিনেই শিক্ষা-সংস্কৃতি-ঐতিহ্য-প্রেম ও ভালোবাসার শহর মেদিনীপুরের সাক্ষাৎ “অনন্যা” রূপে ধরা দিলেন হাজার হাজার মানুষের কাছে। ইচ্ছে ছিল, নিজের ৩৪ তম জন্মদিনটি একটু অন্যভাবে পালন করবেন। তাই, গত চার বছর ধরে অনেক যত্ন আর ভালোবাসা দিয়ে বাড়িয়ে তোলা প্রায় ২০ ইঞ্চি চুল “কেটে”, প্যাকেটে ভরে তা কুরিয়ার করে দিলেন ক্যানসার আক্রান্ত রোগিণীদের (কেমোথেরাপির কারণে যাঁদের হারাতে হয়েছে এরকমই শখের গোছাভরা চুল) জন্য। মেদিনীপুর শহর লাগোয়া তলকুই এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ পায়েল পাল (দাস) বৃহস্পতিবার এভাবেই নিজের জন্মদিনটিকে সার্থক করে তুললেন। তাঁকে সবরকম ভাবে সাহায্য করলেন স্বামী অরিন্দম দাস।
প্রসঙ্গত, পায়েল ও অরিন্দম দু’জনই একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি)’র সঙ্গে যুক্ত। নামমাত্র সদস্য হিসেবে নয়, দু’জনই সারা বছর ধরে অসংখ্য সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। অরিন্দম একাধারে শিক্ষক, সমাজকর্মী, পরিবেশ প্রেমী ও বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী (Wild Life Photographer)। যোগ্য সহধর্মিণী পায়েল একাধারে মডেল, সমাজকর্মী ও গৃহকর্ত্রী। পায়েলের ৩৪ তম জন্মদিনে এক ব্যতিক্রমী ভাবনা ও চেতনার পরিচয় দিয়ে তাঁরা যে নিজেদের কর্ম ও পরিচয়ের প্রতি যোগ্য সুবিচার করলেন, এ বিষয়ে সকল মেদিনীপুর তথা জেলাবাসীই একমত! পায়েল জানালেন, মেদিনীপুর কুইজ কেন্দ্র সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ড. মৌসম মজুমদার বছর চারেক আগে তাঁর লম্বা চুল দেখে, তাঁকে এই মহতী কর্মের জন্য অনুপ্রাণিত করেন। এরপর, নিজের খুব প্রিয়, গোছাভরা পরিপাটি করে সাজানো চুল’গুলি দান করার আগে কিছু পিছুটান উপলব্ধি করলেও, এক মহান উদ্দেশ্য-সাধনের আন্তরিক তাগিদের কাছে নিমেষেই তা (পিছুটান) হার মানে! বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ের একটি সংস্থা’র কাছে এই চুল পায়েল পাঠিয়ে দিলেন স্বামী অরিন্দমের সহযোগিতায়। পায়েল-অরিন্দমের একমাত্র ছেলে অভিরূপ, পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। মায়ের এই মহানুভবতায় অভিরূপ গর্বিত! আর, পায়েলের শ্বশুরমশাই বঙ্কিম চন্দ্র দাস বললেন, “বৌমার এরকম মহৎ কাজে, ওর জন্য আজ আরও গর্বিত বোধ করছি।”