দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ মার্চ: এ যেন সাহিত্য স্রষ্টা সুকুমার রায়ের ‘হ য ব র ল’ গল্প! ছিল রুমাল, হয়ে গেল বিড়াল। যেভাবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের গ্রুপ-সি চাকরি প্রার্থীদের নম্বরে ‘কারচুপি’ (OMR বিকৃতি) হয়েছে, তাতে এছাড়া বোধহয় আর কোনো তুলনাই চলে না! কেউ পেয়েছিলেন ‘শূন্য’ (০), তা হয়ে গেছে ৫৪ বা ৫৫। কেউ ১, ২ কিংবা ৩; হয়েছে ৫৩, ৫৪ বা ৫৬। ঠিক এভাবেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর বিধায়ক তথা উপভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোর ভাই খোকন মাহাতো পেয়েছিলেন ৬০ এর মধ্যে ১২ (ওএমআর অনুযায়ী); কিন্তু অদৃশ্য যাদুবলে SSC’র সার্ভারে তা হয়েছে ৫৫! হ্যাঁ, এমনটাই ঘটেছে। আর, আদালতের নির্দেশে সোমবার তা লিস্ট প্রকাশ করে জানিয়ে দিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (School Service Commission)। এদিন, বিকেলে স্কুল সার্ভিস কমিশন নিজেদের ওয়েবসাইটে ৩৪৭৮ জনের একটি লিস্ট প্রকাশ করে। এঁদের সকলেরই ওএমআর (OMR) শিটে কারচুপি করা হয়েছিল বলে সিবিআই আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। তবে, এঁদের মধ্যে চাকরির সুপারিশপত্র বা নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন ৮৪২ (৭৮৫+৫৭) জন। সেই তালিকায় ছিলেন শালবনীর বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো’র ভাই খোকন মাহাতোও। আদালতের নির্দেশে শনিবার তাঁদের সকলেরই চাকরি বাতিল করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
সোমবার বিকেলে প্রকাশিত তালিকায় দেখা যায়, তালিকায় ১০৭৪ নম্বরে নাম থাকা খোকন মাহাতো বাস্তবে পেয়েছিলেন ৬০ এর মধ্যে ১২; কিন্তু তা কারচুপি করে করা হয়েছিল ৫৫। অর্থাৎ ৪৩ নম্বর বাড়িয়ে তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই বিষয়ে কথা বলার জন্য বিকেল ৫ টা নাগাদ বেঙ্গল পোস্টের তরফে ফোন করা হয়েছিল খোকন মাহাতোকে। তিনি জানান, “আমি বাইরে আছি। এখনো লিস্ট দেখিনি, দেখে বলতে পারব।” যদিও, এই ঘটনার পর মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো তথা শাসক দলকে কটাক্ষ করার জন্য বিরোধীদের হাতে নতুন অস্ত্র পৌঁছে গেল, তা বলাই বাহুল্য! অন্যদিকে, সোমবার বিকেলে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডি.আই বা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) চাপেশ্বর সর্দার জানিয়েছেন, ৮৪২ এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় চাকরি বাতিল হওয়া গ্রুপ-সি কর্মী বা ক্লার্ক আছেন ৭৬ জন। সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে আজই মেইল করে তাঁদের বরখাস্ত করার বা নিয়োগ বাতিল করার নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে জেলা বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর সূত্রে।
অপরদিকে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৭৬ জন শিক্ষকের মধ্যে ৪৬ জনই খড়্গপুর মহকুমার। এর মধ্যে আবার অধিকাংশই সবং, ডেবরা ও পিংলা ব্লকের। এছাড়াও, ১৩ জন আছেন ঘাটাল মহকুমার এবং ১৭ জন আছেন মেদিনীপুর সদর মহকুমার। খড়্গপুর মহকুমার স্কুল গুলির মধ্যে আছে- পিংলা যোগেন্দ্রনাথ হাজরা মেমোরিয়াল গার্লস, বলপাই পশুপতি সুরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, গোপীনাথপুর হাই স্কুল, রুইনান হাই স্কুল, পিংলা কৃষ্ণ কামিনী ইনস্টিটিউশন, গোবর্ধনপুর দমন চন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়, দশগ্রাম সতীশ চন্দ্র সর্বার্থসাধক শিক্ষা সদন, হেতিয়া হাই স্কুল, শ্যামচক জ্ঞানেন্দ্র হাই স্কুল, খুটিয়া গোকুলপুর বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ, চাঙ্গুয়াল কন্দরপুর প্রণবেশ বিদ্যায়তন প্রভৃতি। মেদিনীপুর সদর ব্লকের গড়বেতার হুমগড় গার্লস হাই স্কুলের ২ জন আছেন তালিকায়। এছাড়াও, আনন্দপুর সন্তোষ কুমারী বালিকা বিদ্যালয়, শালবনীর মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠ, ধান্যশোল যোগদা সৎসঙ্গ মঙ্গলময়ী বিদ্যালয়, কলাইমুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, মধুপুর উচ্চ বিদ্যালয়, মেদিনীপুর শহরের কর্নেল গোলা নারায়ণ বিদ্যাভবন গার্লস প্রভৃতি মেদিনীপুর সদর মহকুমার ১৭-টি স্কুলের ক্লার্কদের চাকরি বাতিল হয়েছে শনিবার। কুয়াপুর হাই স্কুল, খড়ার শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামন্দির, জাড়া হাই স্কুল প্রভৃতি ১৩ টি স্কুলের ক্লার্করা আছেন ঘাটাল মহকুমার। অন্যদিকে, ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন স্কুলের ১০ জন এবং পূর্ব মেদিনীপুরের ১৪৪ জন ক্লার্কের চাকরি বাতিল হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ অনুযায়ী। উল্লেখ্য যে, চাকরি যাওয়া ৮৪২ জনের মধ্যে সর্বাধিক ১৪৪ জন পূর্ব মেদিনীপুরেরই!