দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ মার্চ: গ্রুপ-ডি (১৯১১), নবম-দশমের (৭৭৫) পর এবার গ্রুপ-সি। আগামীকাল দুপুরেই চাকরি বাতিল হচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের ৮৪২ (৭৮৫+৫৭) জন ক্লার্ক বা গ্রুপ-সি কর্মীর। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে সুপারিশ পত্র প্রত্যাহার করবে স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং চাকরি বাতিল করবে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। পুরো প্রক্রিয়া আগামীকাল বেলা ৩-টার মধ্যেই সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে, ৭৮৫ জন ও ৫৭ জনের তালিকা ওয়েবসাইটে (westbengalssc.com) প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। ৭৮৫ জনকে ওএমআর (OMR) কারচুপি করে চাকরি দেওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু, ৫৭ জনকে নাকি সুপারিশ পত্রই দেওয়া হয়নি। কোনো এক ‘অদৃশ্য শক্তি’র প্রভাবে তাঁরা রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে কাজ করছিলেন! তাঁদের চাকরিও যাচ্ছে আগামীকাল থেকে।
এদিকে, ৭৮৫ জনের তালিকায় ২৮৪ নম্বরে আছেন শালবনীর বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোর ভাই খোকন মাহাতো। প্রভাব খাটিয়ে বা ওএমআর (OMR) কারচুপি করে তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের কয়মা’র বাসিন্দা খোকন মাহাতো মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোর একমাত্র ভাই বা সহোদর বলে জানা যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের তরফে যে ৩১১৫-টি কারচুপি করা OMR বা বিকৃত OMR প্রকাশ করা হয়েছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে, সেখানে ১১০১ নম্বরে ছিল খোকন মাহাতো’র OMR-টি। আপাতদৃষ্টিতে দেখে বোঝা যাবেনা, কোথায়-কিভাবে বিকৃত করা হয়েছে! তবে, স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রে খবর (আদালতেও জানিয়েছেন তাঁদের আইনজীবীরা), OMR এ প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে মিল নেই কমিশনের সার্ভারে থাকা নম্বরের। অর্থাৎ নম্বর বাড়িয়ে এঁদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল! সেই তালিকাতে নাম আছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামাতো ভাইয়ের ছেলের মেয়ে অর্থাৎ ভাইঝি বৃষ্টি মুখার্জি’র নামও। ৩১১৫টি বিকৃত OMR এর তালিকায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইঝি বৃষ্টি মুখোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে ৬০৮ নম্বরে। এরপর শুক্রবার গ্রুপ সি পদে কর্মরত ৭৮৫ জনের চাকরি বাতিল করেছে হাইকোর্ট। সেখানে তাঁর নাম আছে ১৫৫ নম্বরে। কলকাতা হাইকোর্ট সূত্রে খবর, এসবই নাকি হয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়-শান্তিপ্রসাদ সিনহার হাত-যশে!
প্রসঙ্গত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামার বাড়ি বীরভূমের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লকের কুসুম্বা গ্রামে। জানা যায়, ওই গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর স্মৃতি বিজড়িত ঘর এখনও রয়েছে! ছোটবেলা মুখ্যমন্ত্রী কুসুম্বা গ্রামেই কাটিয়েছেন। মামা অনিল মুখোপাধ্যায়ের ছেলে নীহার মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে বৃষ্টি। নীহারবাবু বর্তমানে বীরভূম জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ। ফলে বিরোধীদের অভিযোগ, প্রভাব খাটিয়ে বৃষ্টির চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার হাইকোর্টের নির্দেশে তাঁর চাকরি বাতিল করা হয়েছে। যদিও নীহার মুখোপাধ্যায় বলেন, “মেয়ে কীভাবে চাকরি পেয়েছিল বলতে পারব না। তবে শারীরিক অসুস্থতার কারণে চাকরিতে যোগ দিয়েই ইস্তফা দিয়েছিল সে।” বোলপুর হাইস্কুলে ক্লার্কের চাকরি পেয়েছিলেন বৃষ্টি। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলক আচার্য বলেন, “নিয়মিত স্কুলে আসত না। দু-তিন দিন স্কুলে এসেছে। কোনও কাজ করত না। স্কুলে এসে বসে থাকত। দেখে অস্বাভাবিক লাগত। তারপর হঠাৎ ইস্তফা না দিয়ে চলে যায়।” অন্যদিকে, বিধায়ক তথা মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ভাইকে প্রভাব খাটিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার! জানা যায়, একসময় গ্রামীণ রোজগার সেবক পদে চাকরি করতেন খোকন। ২০১৭’র ৫ মার্চ গ্রুপ-সি’র পরীক্ষা দেওয়ার পর ঝাড়গ্রামের বৈতা শ্রী গোপাল উচ্চ বিদ্যালয় ক্লার্ক পদে তাঁকে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়। শালবনীর কয়মা’র বাসিন্দা হলেও, এখন অবশ্য মেদিনীপুর শহরেই থাকেন খোকন। কয়মা’র বাড়িতে বৃদ্ধা মা একাই থাকেন। বড় ছেলে অর্থাৎ মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো পরিবার নিয়ে শালবনীতে থাকেন। এই বিষয়ে মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাতো ফোনে জানিয়েছেন, “খবর পেয়েছি। এখনও বিস্তারিত কিছু জানিনা! কোর্টের ব্যাপার। তবে, আমার ভাই B.Sc পাস। নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিল। কোথায় কি ভুল, ত্রুটি হয়েছিল জানিনা!” তবে, ফোন ধরেননি খোকন।
অন্যদিকে, ঝাড়গ্রাম সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রায় শতাধিক ক্লার্কের চাকরি যাচ্ছে আগামীকালই। তালিকায় সবথেকে বেশি স্কুল আছে সেই সবং, ডেবরা, পিংলা এলাকাতেই! যেমন- পিংলা যোগেন্দ্রনাথ হাজরা মেমোরিয়াল গার্লস, বলপাই পশুপতি সুরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ, গোপীনাথপুর হাই স্কুল, রুইনান হাই স্কুল, পিংলা কৃষ্ণ কামিনী ইনস্টিটিউশন, গোবর্ধনপুর দমন চন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়, দশগ্রাম সতীশ চন্দ্র সর্বার্থসাধক শিক্ষা সদন, হেতিয়া হাই স্কুল প্রভৃতি। এছাড়াও, গড়বেতার হুমগড় গার্লস হাই স্কুলের ২ জন আছেন তালিকায়। অন্যদিকে, কুয়াপুর হাই স্কুল, আনন্দপুর সন্তোষ কুমারী বালিকা বিদ্যালয়, মৌপাল দেশপ্রাণ বিদ্যাপীঠ, খড়ার শ্রী অরবিন্দ বিদ্যামন্দির, চাঙ্গুয়াল কন্দরপুর প্রণবেশ বিদ্যায়তন, মেদিনীপুর শহরের কর্নেলগোলা নারায়ণ বিদ্যাভবন গার্লস প্রভৃতি স্কুলের ক্লার্করাও আগামীকাল চাকরি হারাতে চলেছেন আদালতের রায়ে! ঝাড়গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ারও একাধিক নাম করা স্কুলের ক্লার্কদের চাকরি যেতে চলেছে আগামীকাল বিকেল ৩-টার মধ্যে!