মণিরাজ ঘোষ, মেদিনীপুর, ৯ সেপ্টেম্বর: “আমি যখন পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্ব (১২ জুন, ২০১৮) নিয়ে এখানে আসি, কিছুদিনের মধ্যেই এক মহিলার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পেলাম। তিনি লিখেছিলেন, আমি হংকং এ থাকি। মেদিনীপুরে (নিজের বাড়িতে) এসেছিলাম। মেদিনীপুরে একমাত্র শিশু উদ্যান ছাড়া বাচ্চাদের নিয়ে বেড়ানোর কোনো জায়গা নেই। সেই শিশু উদ্যানের অবস্থাও তথৈবচ! যদি এই বিষয়টা একটু দেখেন, অনেকের জন্য ভালো হয়। সেই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পড়ার পর আমি নিজে শিশু উদ্যান পরিদর্শন করি এবং স্থির করি একে নতুন সাজে গড়ে তুলতে হবে।” বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) নব রূপে সজ্জিত “শ্রী অরবিন্দ শিশু উদ্যান ও চিড়িয়াখানা” র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল। সেই মুহূর্ত থেকেই উপস্থিত অতিথিবৃন্দ থেকে সাংবাদিক মহলে উৎসাহ ছিল, ‘হংকংবাসিনী’-কে নিয়ে। এরপর, খবর প্রকাশিত হয় বেঙ্গল পোস্ট ডিজিটাল মাধ্যমে। স্বভাবতই, এবার কৌতুহল তৈরি হয় পাঠকের মনে! তবে, কয়েক ঘন্টার মধ্যেই স্বয়ং ‘হংকংবাসিনী’ নিজেই ধরা দিলেন। The Bengal Post (thebenglapost.net) ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ওই খবরের কমেন্ট বক্সে তিনি লিখলেন, “অনেক অনেক ধন্যবাদ ম্যাডাম। আমার খুশি আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবনা! আপনি দারুন কাজ করছেন।” তিনি মহুয়া রায় (Mohua Roy)। শহর মেদিনীপুরেরই ‘ভূমিকন্যা’। নিজের এবং স্বামীর চাকরিসূত্রে হংকং (Hong Kong) এ থাকেন। ২০১৯ এর শুরুতে, মেদিনীপুরে নিজের বাপের বাড়িতে এসে, বছর দুয়েকের মেয়েকে নিয়ে শিশু উদ্যানে গিয়েছিলেন বেড়ানোর জন্য। যে শিশু উদ্যানে (১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত) নিজের শৈশবেরও অনেকটা সময়ই কেটেছে। গিয়ে দেখেন, সেই শিশু উদ্যানের বিশেষ কোনো পরিবর্তন হয়নি! তারপরই, নিজের একটা ছোট্ট দরকারে জেলাশাসক ড. রশ্মি কমলের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রয়োজন হয়। ভাই ইন্দ্রনীল রায়ের কাছ থেকে নম্বর নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কথায় কথায়, শিশু উদ্যানের আধুনিকীকরণের প্রস্তাবও দিয়ে দেন মানবিক জেলাশাসকের কাছে! প্রস্তাবখানা মনে ধরে প্রগতিশীল মানসিকতার জেলাশাসকের। তারপরই, তিনি মেদিনীপুর সদরের তৎকালীন মহকুমাশাসক (SDO) দীননারায়ণ ঘোষ সহ জেলা প্রশাসনের সকল আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করে মাঠে নেমে পড়েন! গতকাল সেই থ্রি-ডি সিনেমা হল যুক্ত আধুনিক ও সৌন্দর্যমণ্ডিত শিশু উদ্যানের উদ্বোধন হয়।

thebengalpost.in
সপরিবারে মহুয়া রায় :

***হংকং এর মহিলার একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বদলে গেল মেদিনীপুরবাসীর প্রিয়’শিশু উদ্যান’….

জানা গেল, মেদিনীপুরের মহুয়া শহরের নামকরা স্কুল মিশন গার্লস থেকে ২০০২ সালে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে (বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নম্বর) বিজ্ঞান বিভাগে পাস করেন। কিন্তু, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় অত্যন্ত ভালো র‍্যাঙ্ক করায় ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়া শুরু করেন। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে প্রথমে বেঙ্গালুরু এবং পরে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ে কাজ পেয়ে যান। স্বামী বিনীত আগরওয়াল (Vineet Agarwal) ও চাকরি করেন হংকং সিটিতে। সেই সূত্রেই বছর চারেকের মেয়েকে নিয়ে এখন হংকং (Hong Kong) সিটিতে থাকেন। মাঝেমধ্যেই নিজের প্রিয় শহর মেদিনীপুরে আসেন মহুয়া। আপাতত ফেসবুকেই দেখলেন নতুন সাজের শিশু উদ্যান-কে। খুব তাড়াতাড়ি মেদিনীপুরে এসে স্বচক্ষে শিশু উদ্যানের সৌন্দর্য উপলব্ধি করবেন বলে জানালেন বেঙ্গল পোস্ট-কে। শুধু বেঙ্গল পোস্ট নয়, নিজের ভাই ইন্দ্রনীল কেও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর পক্ষ থেকে জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল-কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানানোর জন্য। নিজেও ফের একবার হোয়াটসঅ্যাপ করবেন বলেও জানিয়েছেন! সব শুনে শুধু তৃপ্তির হাসি হাসলেন পশ্চিম মেদিনীপুরবাসীর প্রিয় জেলাশাসক।

thebengalpost.in
বুধবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিশু উদ্যানে :