মণিরাজ ঘোষ, মেদিনীপুর, ৮ সেপ্টেম্বর: গড়ে উঠেছিল ১৯৭৬ সালে। মেদিনীপুর শহরের একমাত্র শিশু বিনোদন মূলক উদ্যান (বা, পার্ক)- “শ্রী অরবিন্দ শিশু উদ্যান ও চিড়িয়াখানা”। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর পর আবার সে নতুন রূপে, আধুনিকতার মোড়কে সমৃদ্ধ হয়ে আত্মপ্রকাশ করল। নতুন সাজের এই “শিশু উদ্যান” মেদিনীপুর বাসীকে নিঃসন্দেহে আনন্দ দান করবে, তৃপ্ত করবে। কিন্তু, এতদিন হয়তো কেউ জানতই না, নতুন সাজের এই ‘শিশু উদ্যান’ গড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে হংকং (Hong Kong) বাসী এক মহিলার ‘অতৃপ্ত’ মনের হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা (Whtsapp Message)! নব রূপে উন্মোচিত অরবিন্দ শিশু উদ্যানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বয়ং জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) গোধূলি বেলায় শোনালেন সেই কাহিনীই। বললেন, “আমি যখন পশ্চিম মেদিনীপুরের দায়িত্ব নিয়ে এখানে আসি, কিছুদিনের মধ্যেই এক মহিলার হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পেলাম। তিনি লিখেছিলেন, আমি হংকং এ থাকি। মেদিনীপুরে (নিজের বাড়িতে) এসেছিলাম। মেদিনীপুর শহরে একমাত্র শিশু উদ্যান ছাড়া বাচ্চাদের নিয়ে বেড়ানোর কোনো জায়গাই নেই। সেই শিশু উদ্যানের অবস্থাও তথৈবচ! যদি এই বিষয়টি একটু দেখেন, অনেকের জন্য ভালো হয়। সেই হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পড়ার পর আমি নিজে শিশু উদ্যান পরিদর্শন করি এবং স্থির করি একে নতুনভাবে, নতুন রূপে গড়ে তুলতে হবে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১২ জুন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন ড. রশ্মি কমল। ২০১৯ সালেই আধুনিক রূপের শিশু উদ্যান গড়ে তোলার পরিকল্পনা এবং নকশা (Sketch) প্রকাশ করেন। বছরের শেষের দিক থেকে কাজও শুরু হয়ে যায়। তবে, ২০২০’র মার্চ থেকে কোভিড অতিমারী’র কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ফের ২০২০ নভেম্বর-ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়। কিন্তু, দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে কাজে কিছু ব্যাঘাত ঘটলেও, অবশেষে তা সম্পূর্ণ হয়েছে। একাধিক দৃষ্টিনন্দন ও বিনোদন মূলক বিষয় যুক্ত হয়েছে শিশু উদ্যানের সাজে। ত্রি ডি সিনেমা (3D Cinema), মাল্টিজিম, একটি ছোট্ট জলাশয়, ঝর্ণা, আলোকসজ্জা, উন্নত পিকনিক বা পার্টি স্পট সহ নানাবিধ সংস্কার সাধনের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়েছে মেদিনীপুরের এই শিশু উদ্যান। জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল বললেন, “খড়্গপুরে থাকলেও, মেদিনীপুর শহরের কোনও পার্কে থ্রি-ডি সিনেমার ব্যবস্থা ছিলনা, তা করা হয়েছে। এবার, তা কোভিড বিধি মেনে খুলে দেওয়া হল।” স্তিমিত কোভিড পরিস্থিতি এবং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রয়োজনেই এই পার্ক বা উদ্যান খোলা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। একইকথা বললেন মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়াও। তিনি বললেন, “অভিভাবকদের কাছে অত্যন্ত দুঃশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছিল- ঘর-বন্দী শিশুদের মানসিক অবসাদ। তাই, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে, মেদিনীপুরবাসীর জন্য এই পার্ক আপাতত খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনারা কোভিড বিধি মেনে পার্কে প্রবেশ করবেন।” উপস্থিত একাধিক বিধায়ক, MKDA চেয়ারম্যান, মেদিনীপুর পৌরসভার চেয়ারপারসন, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বৃন্দ সকলেই জেলাশাসক ড. রশ্মি কমল এবং মেদিনীপুরের বিধায়ক জুন মালিয়া’র এই উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। প্রথমদিনের দর্শক সমাগমই জানান দিল, খুশি তাঁরাও!