দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ২২ এপ্রিল:‘অরণ্য সুন্দরী’ ঝাড়গ্রাম সহ সমগ্র জঙ্গলমহলের শিক্ষক সমাজের গর্ব তিনি! নিজের স্বপ্ন, শ্রম আর সাধনা দিয়ে গড়ে তোলা নার্সারি স্কুল অতিমারির সময়ে গভীর সংকটে পড়ে গিয়েছিল। কমেছিল পড়ুয়ার সংখ্যা। দরিদ্র অভিভাবকেরা স্কুলের ফিস মেটাতে না পারায়, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতনও প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। সেই পরিস্থিতিতেই তেলেভাজার দোকান করে, সেই লভ্যাংশের টাকায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন মিটিয়ে ছিলেন বাণিজ্যে স্নাতকোত্তর তথা স্কুলের প্রধান শিক্ষক তিমির মল্লিক। নিজের হাতে চপ-সিঙাড়া ভেজে, নিজের হাতে গড়া ছোটদের সেই স্কুলটিকে পুনরায় ‘অন্ধকার’ থেকে আলোয় ফিরিয়ে সমাজে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ঝাড়গ্রামের শিক্ষক। বছর দুয়েক আগে এভাবেই যিনি গেয়েছিলেন ‘তিমির হননের গান’, সেই তিমির মল্লিককেই শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘বছরের বেস্ট’ পুরস্কারে সম্মানিত করল সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার অনলাইন (Anandabazar Online)। কলকাতার এক বেসরকারি হোটেলে আয়োজিত আলোকোজ্জ্বল সন্ধ্যায় এক বর্ণময় অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তিমির শোনালেন, “সমাজের জন্য কোন কাজই ছোট নয়। স্বপ্ন বাঁচাতে সেদিন ওই দোকান তৈরি করতে হয়েছিল। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।”
প্রসঙ্গত, অতিমারী আর লকডাউনের কবলে পড়ে তাঁর নার্সারী স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, কঠিন সেই পরিস্থিতিতে, অধিকাংশ অভিভাবকই স্কুলের নির্ধারিত ফি-ও মেটাতে পারেননি! ফলে, শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের বেতন মেটানো নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক। ভার্চুয়াল বা অনলাইন ক্লাস চালু করেও লাভ হয়নি। কারণ, অধিকাংশ পরিবারেই স্মার্টফোন না থাকায় পড়ুয়ারা অংশগ্রহণ করতে পারেনি সেই ক্লাসগুলিতে। বরং, অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষিকাদের মোবাইলে রিচার্জ করে দিতে হয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে। এই অবস্থায়, তেলেভাজা এবং মিষ্টির দোকান শুরু করেন প্রধান শিক্ষক তিমির মল্লিক। ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁধগোড়া পঞ্চায়েতের পুরুষোত্তমপুরে নিজের তিন কাঠা জমিতে, ২০২০’র সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করেন তাঁর এই দোকান। প্রায় দু’বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে “স্পার্ক ২০২০” নামে প্রতিষ্ঠিত তাঁর সেই দোকান চলছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে নিজের স্কুলও। আজ কয়েকশো কচিকাঁচার কলরবে তিমির বাবুর স্কুল প্রাঙ্গণ ভরে ওঠে। এভাবেই, অন্ধকারকে হারিয়ে আলোর জয়গান গেয়ে সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থার বিচারে ‘বছরের বেস্ট’ পুরস্কারে সম্মানিত হলেন ‘জঙ্গলমহলের গর্ব’ তিমির মল্লিক।