দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ জুন: বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুরে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে কলেজ ছাত্রী স্বাগতা হাজরা’র। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা শহর মেদিনীপুর থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে অবস্থিত মেদিনীপুর সিটি কলেজের (Midnapore City College) মাস্টার অফ হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দ্বিতীয় সেমিস্টারের (M.A 2nd Sem/1st Year) ছাত্রী ছিলেন স্বাগতা। শহরের বার্জটাউনের এই হাসিখুশি কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না শহরবাসী থেকে তাঁর বন্ধুবান্ধবরা। কিন্তু, ঠিক কিভাবে মৃত্যু হয়েছিল স্বাগতা’র, তা নিয়ে ধন্দে ছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ থেকে শালবনী থানার পুলিশ আধিকারিকরাও। যদিও, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছিল একটি ব্ল্যাক রয়েল এনফিল্ড বাইক। স্বাগতা’র বন্ধুবান্ধবরা প্রথম থেকেই দাবি করছিলেন, ওই বাইকের ধাক্কাতেই মৃত্যু হয়েছে স্বাগতা’র। এবার, শালবনী থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক-ও বৃহস্পতিবার রাত্রি নাগাদ স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, “হ্যাঁ, ভাদুতলা থেকে মেদিনীপুরগামী ওই দ্রুতগতির বাইকের ধাক্কাতেই মৃত্যু হয়েছে কলেজ ছাত্রী স্বাগতার। বাইকটিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।‌ পলাতক যুবকের সন্ধান চালানো হচ্ছে।” দ্রুত ওই যুবক-কে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও পুলিশ সূত্রে খবর। এও জানা গেছে, শুক্রবার সকালে স্বাগতা’র ময়নাতদন্ত হবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। ঘটনা ঘিরে এখনও শোকে‌ মুহ্যমান পুরো শহর!

thebengalpost.net
স্বাগতা হাজরা (ফেসবুক ছবি) :

এর আগে, স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত একটি অসম্পূর্ণ সিসিটিভি ফুটেজ-কে কেন্দ্র করে নানা জল্পনা ছড়াচ্ছিল। অনেকেই দাবি করছিলেন, ওই বাইকের পেছনেই হয়তো বসেছিলেন স্বাগতা! কারণ, ঘটনার পর উল্টোদিকে ছিটকে পড়েছিলেন বাইক চালক যুবকও। স্বাগতার সাথে সাথে ওই যুবককেও একই অটোতে করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াও হয়েছিল। তারপর, চিকিৎসকরা স্বাগতা’র মৃত্যু নিশ্চিত করার পর থেকেই ওই যুবক পলাতক। তবে, ওই বাইকের নম্বরের মাধ্যমে ইতিমধ্যে আরটিও’র ‘বাহন’ ( VAHAN) অ্যাপস বা মেসেজের মাধ্যমে স্বাগতা’র বন্ধুবান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও আত্মীয়-পরিজনেরা জানতে পেরেছেন, শালবনী থানার (কাশীজোড়া এলাকার) বাসিন্দা জনৈক কালীপদ মাহাত’র নামে ওই গাড়ি। সূত্রের খবর অনুযায়ী, কালীপদ বাবু’র বছর ২৫-৩০ ছেলে ওই বাইক চালিয়ে মেদিনীপুর শহরের দিকে আসছিলেন। ঠিক সেই সময়ই অটো থেকে নেমে এক বন্ধুর সাথে কথা বলতে বলতে কলেজে প্রবেশ করছিলেন স্বাগতা। বাইকের গতিবেগ অনেক বেশি ছিল বলেই, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে! এও জানা গেছে, স্বাগতা’র গলায় ব্লু-টুথ ইয়ারফোন ছিল। এমনও অনুমান করা হচ্ছে, হয়তো স্বাগতা’র কানেই ছিল ইয়ার ফোনের স্পিকার। তাই, বাইকের শব্দ বুঝতেই পারেননি! তবে যাই হোক, বাইকের গতিবেগ যে নিয়ন্ত্রণ-বিহীন ছিল তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত সকলেই। বাইকের ধাক্কাতেই জাতীয় সড়কের উপর (৬০ নং) উল্টে পড়েন স্বাগতা। মাথায় পেছনে আঘাত লাগে। মেদিনীপুর হেড পোস্ট অফিসে কর্মরত স্বাগতার বাবা সৌমেন কুমার হাজরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে দাবি করেছেন, “আমার মেয়ে ওই দ্রুতগতির বাইকের ধাক্কায় মাথার ভরে উল্টে পড়ে।‌ ওর মাথায় পেছনে আঘাত লাগে। নাক ও কান দিয়ে রক্ত বেরোয়! শরীরে আর কোথাও কোনো আঘাত নেই। আমি ওই বাইক চালকের উপযুক্ত শাস্তি চাইছি। পুলিশ সঠিক তদন্ত করুক। আমার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে।‌ মেয়েকে তো আর ফিরে পাবোনা! ওই যুবকের উপযুক্ত শাস্তি হোক।”

thebengalpost.net
সেই ঘাতক বাইক :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দুপুর নাগাদ কলেজের উদ্দেশ্যেই রওনা দিয়েছিলেন স্বাগতা। কলেজে ঢোকার ঠিক মুখেই ৬০ নং জাতীয় সড়কের উপর মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়! জানা যায়, মেদিনীপুর শহরের বার্জটাউনের বাসিন্দা ছিলেন বছর তেইশের স্বাগতা। আর, পাঁচটা দিনের মতোই অটোতে করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু, দুপুর‌ ঠিক আড়াইটা নাগাদ (২ টো ২৩) এই প্রাণঘাতী দুর্ঘটনাটি ঘটে। জানা যায়, ঘটনার পর থেকেই প্রায় অচৈতন্য হয়ে পড়েছেন স্বাগতা’র মা। তাঁর দাদা বছর ৩২-এর সুশোভন হাজরা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চুক্তিভিত্তিক কর্মী। মাত্র ৭ দিন আগেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন সুশোভন। স্বাভাবিকভাবেই, বাড়িতে ছিল খুশির রেশ! আর, তার মধ্যেই ‘বিনা মেঘে’ এই বজ্রপাতে পুরো পরিবার-ই শোকাহত, যন্ত্রণাকাতর। স্বাগতার বন্ধুরাও সমাজমাধ্যমে একটাই কথা বারবার লিখে চলেছেন, “সব কিছু মিথ্যে করে ফিরে আয়…এভাবে যেতে পারিস না। অনেক আনন্দ ভাগ করা বাকি!” পরপারে ভালো থাকুন স্বাগতা, চাইছেন মেদিনীপুর বাসী!

thebengalpost.net
বন্ধুদের সঙ্গে স্বাগতা (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) :