দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৪ মার্চ: অনেকটা যেন নীলকন্ঠের মতোই ঘটনা! পরিবেশের স্বার্থে, এক সাপুড়ের হাত থেকে বিষধর সাপেদের রক্ষা করতে গিয়ে, সেই সাপের কামড়েই আহত হলেন মেদিনীপুরের ‘সর্পবন্ধু’ দেবরাজ চক্রবর্তী। ঘটনাটি বুধবার দুপুরের। জেলা শহর মেদিনীপুরে সবাই তখন ব্যস্ত পুরভোটের রেজাল্ট নিয়ে! ঠিক সেই সময়, ‘সর্পবন্ধু’ দেবরাজ চক্রবর্তী’র কাছে খবর যায়, মেদিনীপুর জর্জ কোর্ট চত্বরে এক সাপুড়ে সাপের খেলা দেখাচ্ছেন এবং জড়িবুটি (কবচ, তাবিজ, শেকড় বাকড় প্রভৃতি) বিক্রি করছেন। আইনের মন্দিরে বেআইনি ভাবে বিষধর সাপের খেলা দেখানো হচ্ছে, তাই পরিবেশের স্বার্থে এই খেলা অবিলম্বে বন্ধ করার তাগিদে এবং সাপুড়ের কাছ থেকে সাপগুলি উদ্ধার করে পরিবেশে ফিরিয়ে দেওয়ার তাগিদে দেবরাজ ছুটে যান কোর্ট চত্বরে। দেবরাজ সেখানে বুড়া সাপুড়িয়া নামে বালিচকের ওই ব্যক্তিকে আটকে বন দপ্তরের কর্মীদের খবর দেন।
অভিযোগ, সেই সময় আদালতে থাকা কয়েকজন আইনজীবী এবং কিছু মানুষ সাপুড়ের পক্ষ নিয়ে দেবরাজ চক্রবর্তীকে হেনস্থা করে। তাঁকে ঠেলাঠেলি ও ধাক্কা দেওয়ার সময় দেবরাজের হাতে থাকা একটি বিষধর কেউটে সাপ তাঁর বাম হাতের আঙুলে কামড় দেয়। এরপর অসুস্থ বোধ করে সেখানেই বসে পড়েন দেবরাজ। তার মধ্যেই সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায় ওই সাপুড়ে। এরপর, অসুস্থ দেবরাজকে ভর্তি করা হয় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এগিয়ে আসেন মেদিনীপুর খড়্গপুর পশুপ্রেমী সংগঠনের শিবু রানা সহ কয়েকজন। আপাততো দেবরাজ কিছুটা সুস্থ আছেন। কিন্তু, এই ঘটনায় তিনি চরম ক্ষুব্ধ ও হতাশ! দেবরাজ জানান, বুধবার দুপুর নাগাদ কেউ একজন তাঁকে ফোন করে জানায়, মেদিনীপুর জেলা আদালত চত্বরে একজন সাপুড়ে কয়েকটি বিষধর সাপ নিয়ে খেলা দেখিয়ে মাদুলি বিক্রি করছে। তার হাত থেকে সাপ রক্ষা করতে গিয়ে তাঁকেই চরম হেনস্থার শিকার হতে হয় এবং বিষধর সাপের কামড় খেতে হয়! দেবরাজ দুঃখ প্রকাশ করে জানান, আদালত চত্বরে সাপ ধরতে যাওযার আগে কোনো অনুমতি না নেওয়ায় তাঁকে হেনস্থা করা হয়। অথচ, একজন ব্যক্তি বিষধর সাপ নিয়ে আদালত চত্বরে খেলা দেখাচ্ছে সম্পূর্ন বেআইনি ভাবে, সেই ঘটনার কোনো প্রতিবাদ নেই! তাঁর এও আক্ষেপ, অন্যান্য সময়ে আদালতের বিভিন্ন স্থানে সাপ বেরোলে তাঁকেই ডাকা হয়। তখন কোনো অনুমতি লাগে না! বিষয়টি নিয়ে আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো হবে বলেও জানিয়েছেন সর্পবন্ধু দেবরাজ চক্রবর্তী। এই বিষয়ে বনদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “সাপের খেলা দেখানো পুরোপুরি অবৈধ। আইনত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে, যা হয়েছে তা একেবারেই ঠিক নয়।”