দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ ডিসেম্বর: “শুনে আনন্দিত হলাম বনশুয়োরের বাচ্চাটি শালবনী থেকে বিদায় নিতে চলেছে।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্যা, তৃণমূলের লড়াকু নেত্রী, অধ্যাপিকা তথা শালবনীর বিধায়ক ও রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত’র স্ত্রী অঞ্জনা মাহাত’র এই ‘ভাইরাল’ ফেসবুক পোস্টই শনিবার দুপুরের পর থেকে কার্যত আলোড়ন ফেলে দিয়েছে সমাজমাধ্যমে তথা জেলার রাজনীতিতে! কে এই ‘বনশুয়োর’? কাকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী-পত্নীর এই কদর্য পোস্ট বা কুৎসিৎ আক্রমণ? এ নিয়ে স্বয়ং পোস্ট-দাত্রী তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্যা অধ্যাপিকা অঞ্জনা মাহাত কোনও রাখ-ঢাক না করেই বলেন, “হ্যাঁ, আমি আমার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে এরকম একটি পোস্ট করেছি। সেটা খুবই ব্যক্তিগত বিষয়, এনিয়ে সাংবাদিক বা বাইরের কাউকে কিছু বলতে চাইনা!” এরপরই তাঁর সংযোজন, “তবে, যাঁকে উদ্দেশ্য করে এই পোস্ট তিনি এতক্ষণে বুঝে গেছেন নিশ্চিত!” কিন্তু, সেই ব্যক্তি কে বা কেন এই ধরনের কুৎসিৎ আক্রমণ তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি জঙ্গলমহলের এই লড়াকু তৃণমূল নেত্রী! যদিও, অঞ্জনা জানিয়েছেন, “কারণ আছে।”
অন্যদিকে, দলীয় শৃঙ্খলার প্রশ্ন নিয়ে অঞ্জনা মাহাত বলেন, “দেখুন আমরা জঙ্গলমহলের মানুষ। বনশুয়োর এই সমস্ত এলাকায় আকছার দেখা যায়। একটা বন্যপ্রাণী মাত্র। তাই, এই শব্দে দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙার প্রশ্ন নেই! তাছাড়া, এর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত বিষয়!” এরপরও, অঞ্জনাকে প্রশ্ন করা হয়, যাঁর উদ্দেশ্যে এই পোস্ট তিনি কি বনশুয়োরের মতো হঠাৎ আক্রমণ করেন বা বনশুয়োরের আচরণের সঙ্গে কোনও মিল আছে? প্রতিক্রিয়ায় অঞ্জনা হেসেছেন। শুধু বলেছেন, “কিছু তো নিশ্চয়ই ব্যাপার আছে, নাহলে এই পোস্ট করব কেন!” এ নিয়ে মন্ত্রী শ্রীকান্ত মাহাত’র প্রতিক্রিয়া নেওয়ার জন্য ফোন করা হলেও, তিনি ফোন ধরেন নি! এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতা এই কদর্য-পোস্টের সমালোচনা করেছেন। জেলা তৃণমূলের এক বর্ষীয়ান নেতা বলেন, “দলের তরফে বারবার বলা হয়েছে সমাজমাধ্যমে শুধুমাত্র দলের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বা প্রকল্পের প্রচার এবং আমাদের দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এবং আমাদের প্রিয় সাংসদ ও সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন পোস্ট শেয়ার করার জন্য। এছাড়াও, দলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন কর্মসূচির প্রচার বা ভালো কিছু কাজের প্রচার করা যেতে পারে। তাতে দলের মঙ্গল। কিন্তু, এই সব পোস্ট তো দলের কাছে অমঙ্গল! জনমানসে খারাপ বার্তা যাচ্ছ।”
এই বিষয়ে জেলা তৃণমূলের সভাপতি ও বিধায়ক সুজয় হাজরা-কে ফোন করা হলে, তিনি জানান, “আমি জেলা কমিটির বর্ধিত বৈঠকে আছি। খোঁজ নিয়ে দেখব বিষয়টি। সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগ এলে আমরা নিশ্চয়ই সতর্ক করব বা ব্যবস্থা নেব।” তীব্র নিন্দা করে জেলা বিজেপি-র মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, “এটাই তৃণমূলের সংস্কৃতি! এদের কাছে এর থেকে বেশি কি আর আপনি আশা করবেন!” তবে সে যাই হোক, কে এই ‘বনশুয়োর’ তা অবশ্য শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি! কারণ, যাঁদের সঙ্গে মন্ত্রী বা তাঁর স্ত্রী’র গোষ্ঠীর ‘বিবাদ’ বা ‘কোন্দল’ আছে বলে শোনা যায়, তাঁরা সকলে বহাল তবিয়তেই শালবনীতে আছেন। শালবনী থেকে তাঁদের ‘বিদায়’ নেওয়ার কোনও সম্ভাবনাও নেই! অনেক চেষ্টা করার পর, একটি সূত্রে জানা গেছে, শালবনীর এক আধিকারিকের নাকি সম্প্রতি বদলির নির্দেশিকা এসেছে। দু’একদিনের মধ্যেই তাঁর চলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে কি তাঁর প্রতি অঞ্জনা দেবীর কোনও রাগ বা আক্রোশ আছে? ব্লক তৃণমূলের এক নেতা হাসতে হাসতে বলেন, “আছে আছে, খোঁজ নিয়ে দেখুন!”