দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ জুন: যশ বা ইয়শ (Yaas) ঝড়ের আতঙ্কে “আমার ছাগল মরে গেছে” কিংবা “পুকুরের মাছ মরে যাওয়ার জন্য ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ” দাবি করে আবেদন করা হয়েছে “দুয়ারে ত্রাণ” এর জন্য! আর, এইসব আবেদন বিবেচনা করার আগেই মাথায় হাত আধিকারিকদের! কোন কোন আবেদনপত্র আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। প্রসঙ্গত, ‘যশ’ (Yaas) ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য গত ৩ জুন থেকে ড্রপবক্সে আবেদন জমা নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের উদ্যোগে। গত ৪ জুন এমনই একটি আবেদন জমা পড়েছে, সবং ব্লকের ৪ নং দশগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। আবেদন কারীর নাম- তাপস কর। বাড়ি সবংয়ের কোলন্দা গ্রামে। সবংয়ের বিডিও বা সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিককে উদ্ধৃত করে লেখা আবেদনপত্রে আবেদনকারী লিখেছেন, “গত ইং ২৬.০৫.২১ তারিখে ইয়াস ঝড়ের কারণে আমার ছাগল আতঙ্কে মারা গেছে। যদি আমি ছাগলের ক্ষতিপূরণ পাই, তাহলে আপনার কাছে বাধিত থাকব।” এই আবেদন পত্র এখন এতটাই “বিখ্যাত” যে, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরালও হয়ে গেছে! প্রশাসন সূত্রে আরো একটি আবেদন পত্রের কথা জানা গেছে, যেখানে আবেদনকারী তাঁর পুকুরে মাছ মরে যাওয়ার জন্য “৩ কোটি টাকা” ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন! সবংয়ের বিলকুয়ার রামপদ জানা ওই আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। এই ধরনের মজার আবেদনের কথা স্বীকার করেছেন সবংয়ের বিডিও তুহিনশুভ্র মহান্তি। তিনি বলেন, “নানা রকমের আবেদন জমা পড়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখার পরই ক্ষতিপূরণ ঠিক করা হবে।”
অপরদিকে, সবং পঞ্চায়েত সমিতির প্রাণী সম্পদ বিকাশ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ আবু কালাম বক্স বলেন, “কোলন্দার তাপস কর ইয়াস ঝড়ের আতঙ্কে ছাগল মারা যাওয়ায় জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন। বিলকুয়ার রামপদ জানা মাছ মরার জন্য ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন। আসলে গ্রামের সাধারণ লোক। ৩ এর পর কটা শূন্য দিলে কত টাকা হয় তা বুঝতে পারেনি। বা অন্য কেউ হয়তো আবেদন লিখে দিয়েছে। তবে যে যাই আবেদন করুন। আমরা বলেছি, বিডিও তাঁর লোকজন দিয়ে তদন্ত করে দেখার পর ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা তৈরি করুন। ভুয়ো নাম যেন না থাকে।” এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, “আতঙ্কে ছাগল মারা যাওয়া”র আবেদনকারী তাপস করের সঙ্গে। তাঁর সরল স্বীকারোক্তি- “আমার ঘর বাড়ির তেমন কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গোয়ালের বাইরে ছাগলটি বাঁধা ছিল। ঝড়ের সময় ভয়ে মারা গেছে। সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে শুনে বিডিও’র কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদনও করেছি।” অন্যদিকে, ঝড়ের আতঙ্কে ছাগল মরে যাওয়া নিয়ে নানা জন নানা মন্তব্য করছেন! ঝড়ের আতঙ্কে ছাগল মরতে পারে কিনা, তা জানার জন্য যোগাযোগ করা হয় জেলার প্রাণী সম্পদ দপ্তরের সহ অধিকর্তা তুষার কান্তি সামন্তর সঙ্গে। প্রশ্ন শুনে তিনি বলেন- “এমন ঘটনা কখনও শুনিনি! ঝড়ের আতঙ্কে ছাগল, গরু মরতে পারেনা। তাছাড়া আমাদের কাছে বিভিন্ন ব্লক থেকে আসা তথ্য অনুযায়ী এই ঝড়ে জেলায় মাত্র একটি গরু ও একটি ছাগল মারা গেছে। প্রাণি বন্ধু, প্রাণী মিত্ররা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ছবি সহ রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। আর সবংয়ের এই আবেদনপত্র আমিও দেখেছি। আতঙ্কে ছাগল মারল! আর উনি বুঝলেন কীভাবে জানিনা।”