Vidyasagar University

Drosera: মেদিনীপুরের মাটিতেই নতুন প্রজাতির মাংসাশী উদ্ভিদের সন্ধান পেলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ ডিসেম্বর: জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুরে নতুন প্রজাতির মাংসাসী (পতঙ্গভুক) উদ্ভিদের সন্ধান পেলেন মেদিনীপুর শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) ‘উদ্ভিদবিদ্যা’ (Botany) বিভাগের বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি, অ্যামাজনের জঙ্গলের মাংসাশী বা পতঙ্গভুক উদ্ভিদ (Drosera/Round-leaved sundew) বাঁকুড়ার সোনামুখীর জঙ্গলে পাওয়া গিয়েছে বলে নেট দুনিয়া উত্তাল হয়। সেই আবহেই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপক (প্রফেসর) অমল কুমার মণ্ডল, গবেষক সুখদেব বেরা এবং সহকারী গবেষক ড. অয়ন কুমার নস্করের এই গবেষণা নিঃসন্দেহে এই সংক্রান্ত বহু প্রশ্নের উত্তর দেবে বা উদ্ভিদ-বিজ্ঞানের জগতকে আরও সমৃদ্ধ করবে। অধ্যাপক অমল কুমার মণ্ডল জানান, “আমাদের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু অঞ্চলে এই মাংসাশী উদ্ভিদের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরে দু’টি প্রজাতির সূর্যশিশির ও সাতটি প্রজাতির পাতাঝাঁজি এবং পূর্ব মেদিনীপুরে তিনটি প্রজাতির পাতাঝাঁজি বিভিন্ন ঘাস জমি ও জলাশয়ে পাওয়া গিয়েছে। সূর্যশিশির উদ্ভিদটিকে ইংরেজিতে ‘সানডিউ‘ (Sundew) বলে। পশ্চিম মেদিনীপুরে পাওয়া ‘সূর্যশিশির’ উদ্ভিদ দুটির বিজ্ঞানসম্মত নাম হল ‘ড্রোসেরা ইন্ডিকা’ (Drosera Indica) ও ‘ড্রোসেরা বার্মানি’ (Drosera Burmanni)।” তিনি এও বলেন, “সূর্যশিশির উদ্ভিদটি মূলত ভেজা বা শুষ্ক ঘাসজমি, শালবনের ভেতরে অথবা পাথুরে ভূমিতে জন্মায়। এদের পাতাতে অসংখ্য ট্রাইকোম থাকে এবং ওই ট্রাইকোমের অগ্রভাগে এক ধরনের আঠালো পদার্থ থাকে। উদ্ভিদগুলি সবুজ বা লাল বর্ণের হওয়ায়, ছোট ছোট পতঙ্গরা উদ্ভিদটি দ্বারা আকর্ষিত হয়ে পাতাতে বসে এবং পাতাতে উপস্থিত আঠালো পদার্থে আটকে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে পাতার ট্রাইকোমগুলি পতঙ্গটিকে জড়িয়ে ধরে এবং পুষ্টিরস শোষণ করে। অপরদিকে, পাতাঝাঁজি উদ্ভিদগুলিকে জলাশয় অথবা ভেজা বা কাদামাটিতে জন্মাতে দেখা যায়। ‘ইউট্রিকুলারিয়া উলিগিনোসা’ ও ‘ইউট্রিকুলারিয়া বাইফিডা’ নামক পাতাঝাঁজির প্রাজাতি দু’টি ভেজা বা কাদামাটিতে জন্মায়। আবার, ‘ইউট্রিকুলারিয়া আউরেয়া’ ও ‘ইউট্রিকুলারিয়া গিব্বা’ প্রাজাতি দুটি পুকুরে, ধানক্ষেতে জন্মায়। পাতাঝাঁজি উদ্ভিদগুলি মূল-বিহীন হয়। এদের পাতার কিছু অংশ রূপান্তারিত হয়ে পকেটের ন্যয় অঙ্গ গঠন করে; যাকে ‘ব্লাডার বলে। এই ব্লাডারের মধ্যে এরা জলে উপাস্থিত ছোট পতঙ্গ ও লার্ভা বা ভেজা মাটিতে উপাস্থিত নিমাটোড-কে গ্রহণ করে ও পুষ্টিরস শোষণ করে।”

১২ প্রজাতির পতঙ্গভুক উদ্ভিদ:

বিজ্ঞাপন (Advertisement):

পতঙ্গভুক বা মাংসাশী উদ্ভিদেরা ঠিক কি কারণে এবং কিভাবে ছোট ছোট পোকামাকড় বা পতঙ্গদের শিকার করে? তাও বুঝিয়ে বলেছেন অধ্যাপক মণ্ডল। তিনি বলেন, “পৃথিবীতে বেশিরভাগ উদ্ভিদ প্রজাতি সবুজ ক্লোরোফিল যুক্ত এবং সৌরশক্তি ব্যাবহার করে সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি সাধন করে। খাদ্য উৎপাদনে অক্ষম প্রাণীরা উদ্ভিদ, উদ্ভিদ অংশ বা অন্য প্রাণীকে খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে পুষ্টি সাধন করে। আমাদের এই বিস্ময়কর পৃথিবীতে কিছু উদ্ভিদ রয়েছে যারা ছোট ছোট প্রাণীদের ভক্ষণ করে পুষ্টি সাধন করে। এদের ‘মাংসাশী উদ্ভিদ’ হিসেবে গণ্য করা হয়।” তাঁর সংযোজন, “আশ্চর্যজনক বিষয় হল এই মাংসাশী উদ্ভিদগুলি সালোকসংশ্লেষ করতে পারে। কিন্তু, এরা যে ধরনের পরিবেশে জন্মায়, সেখান থেকে এরা পর্যাপ্ত পরিমানে নাইট্রোজেন শোষণ করতে পারে না বা যে জায়গায় এরা জন্মায় সেই মাটিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতি রয়েছে। এই নাইট্রোজেনের ঘাটতি পূরণের জন্য, এই বিশেষ ধরনের উদ্ভিদগুলি পোকামাকড় ধরে খেয়ে নিজেদের দৈনন্দিন নাইট্রোজেনের ঘাটতি পূরণ করে। আর এই নাইট্রোজেন সজীব কোষের জৈবিকক্রিয়া চালানোর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। নাইট্রোজেনের অভাব পূরণের জন্যে মাংসাশী উদ্ভিদগুলি প্রাণী শিকার করে মূলত প্রোটিন অংশ শোষণ করে এবং প্রোটিন হল নাইট্রোজেন ঘটিত জৈব অণু, যা মাংসাশী উদ্ভিদের নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণ করে।”

পতঙ্গভুক বা মাংসাশী উদ্ভিদেরা:

বিজ্ঞাপন (Advertisement):

প্রসঙ্গত, অধ্যাপক অমল মণ্ডলের অধীনে গবেষণারত ছাত্র (স্কলার) সুখদেব বেরা এখন উচ্চতর গবেষণার জন্য বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার কোয়েম্বাটোরে রয়েছেন। তবে, নিজের স্নাতকোত্তরের গবেষণামূলক পেপারে (স্নাতকোত্তর থিসিস) এই বিস্ময়কর উদ্ভিদ সম্পর্কে গবেষণা করেছেন তিনি। রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট বা সহকারী গবেষক হিসেবে ছিলিন ড. অয়ন কুমার নস্কর। ডঃ মণ্ডলের সহায়তায় তাঁরা জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুর ও পূর্ব মেদিনীপুরে তথা দুই মেদনীপুরে প্রায় ১২ প্রজাতির এই ধরনের মাংসাশী উদ্ভিদ বা পতঙ্গভুক উদ্ভিদ খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান। যদিও, বর্তমান সময়ে যেভাবে দূষণ বেড়ে চলেছে, তাতে এই সমস্ত বিরল বা বিস্ময়কর প্রজাতির উদ্ভিদের সংখ্যা যে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে তাও জানান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বরিষ্ঠ অধ্যাপক অমল কুমার মন্ডল। তিনি বলেন, “বর্তমান সময়ে বিভিন্ন কারণে ঘাসজমি ধ্বংস ও জলাভূমি দূষণের ফলে এই বিস্ময়কর উদ্ভিদগুলির প্রাচুর্য হ্রাস পাচ্ছে।” (Edited by Maniraj Ghosh)

বিজ্ঞাপন:

News Desk

Recent Posts

Medinipur: মন দেওয়া-নেওয়া মার্ক জুকারবার্গের সৌজন্যে, ‘নির্বাক’ প্রেমের টানেই নদিয়া পাড়ি মেদিনীপুরের কিশোরীর! মুক-যুগলকে নিয়ে এলো পুলিশ

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ ডিসেম্বর: জন্ম থেকেই 'নির্বাক' (মুক/বোবা) দু'জনই। মার্ক জুকারবার্গ…

10 hours ago

Tigress: ‘টোপ’ এড়িয়ে গবাদি পশুর দিকে নজর জিনাতের! বড়দিনেও বাগে এলোনা বাঘিনী, জঙ্গলে বসলো স্মার্ট ক্যামেরা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পুরুলিয়া, ২৫ ডিসেম্বর: কিছুতেই বাগে আসছেনা বাঘিনী জিনাত (Tigress Zinat)। বড়দিনেও…

16 hours ago

Talking Drone: ‘টকিং ড্রোন’ উড়িয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘোষণা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ ডিসেম্বর:'টকিং ড্রোন' বা 'অ্যানাউন্সমেন্ট ড্রোন' (Talking Drone) উড়িয়ে…

1 day ago

Midnapore: চপ-মুড়ি খাওয়ানোর নাম করে নাবালিকাকে কচু বনে নিয়ে গিয়ে দাদুর বয়সী বৃদ্ধের দুষ্কর্ম! চরম শাস্তি দিল মেদিনীপুর জেলা আদালত

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ ডিসেম্বর: ছোট্ট মেয়েটি খেতে ভালবাসত। বৃদ্ধ তা জানত।…

2 days ago

Midnapore: মেদিনীপুর শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ! সংখ্যা গণনা করবেন কাউন্সিলররাই, অন্য কোনও সংগঠন নয়; জানালেন বিধায়ক

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৪ ডিসেম্বর: রাজ্য সরকারের নির্দেশে মেদিনীপুর শহরে টোটো নিয়ন্ত্রণে…

2 days ago

Medinipur: ছেলের সাথে সম্পর্ক রাখেননি, ঈশ্বরের শেষ দিনগুলো কেটেছে কার্মাটাঁড়ে! বিদ্যাসাগর স্মৃতি রক্ষা সমিতির হাতে লক্ষাধিক টাকা তুলে দিল মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর ও কার্মাটাঁড়, ২৩ ডিসেম্বর: একমাত্র পুত্র (ছেলে) নারায়ণচন্দ্রের আচরণে ক্ষুব্ধ…

2 days ago