দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৭ জুন: মাদুর শিল্পের জন্য বিখ্যাত মেদিনীপুর তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং। এবার, মাদুর কাঠির বিকল্প নতুন একটি প্রাকৃতিক ফাইভার আবিষ্কার করলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) বিজ্ঞানীরা। কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের (Lady Brabourne College) এক বিজ্ঞানীও এই আবিষ্কার ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আছেন। সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আইআইটি খড়্গপুরের তরফেও। আর, এই গবেষণা জায়গা করে নিল লন্ডনের বিখ্যাত ‘নেচার’ (Nature) পত্রিকায়। সম্প্রতি, এই খুশির খবর শুনিয়েছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিষয়ের অধ্যাপক তথা বিজ্ঞানী ড. অমল কুমার মণ্ডল। প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের মাদুর (কিংবা, মাদুর শিল্প) বাংলা তথা ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে সমগ্র বিশ্বে সমাদৃত। এই ‘মাদুর কাঠি’ তৈরি হয় যে উদ্ভিদ থেকে, তার বিজ্ঞানসম্মত নাম সাইপেরাস পানগৌরী (Cyperus Pangouri)। বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (Vidyasagar University)- এর উদ্ভিদ ও বনবিদ্যা বিভাগ তথা ট্যাক্সোনমি, বায়োসিস্টেমেটিক্স এবং মলিকিউলার ট্যাক্সোনমির অধ্যাপক ড. অমল কুমার মণ্ডলের নেতৃত্বে একটি গবেষক দল এই মাদুর কাঠি বা Cyperus Pangouri এর বিকল্প প্রাকৃতিক ফাইবার আবিষ্কারের খোঁজে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন গত প্রায় ১০ বছর ধরে।
এই গবেষক দলে আছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই গবেষক, যথাক্রমে- অনুপ কুমার ভুঁইয়া, ধীমান মণ্ডল এবং কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যাপিকা তথা উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. সংযুক্তা মণ্ডল পারুই। এছাড়াও, সমগ্র গবেষণাটিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারত তথা বিশ্বের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আইআইটি খড়্গপুর (IIT Kharagpur)। আইআইটি খড়্গপুরেরর জৈব গবেষণাগারে এই সংক্রান্ত অধিকাংশ গবেষণা করা হয়েছে বলেই জানান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর মন্ডল। তিনি এও জানান, “আমরা আগে জানতাম এই মাদুর কাঠির উৎপত্তি হয় সাইপেরাস পানগৌরী (Cyperus Pangouri) নাম সাইপেরাস গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একটা উদ্ভিদ থেকে। কিন্তু, আমাদের গবেষণায় উঠে এলো আর এক নতুন উদ্ভিদ। নাম সাইপেরাস প্ল্যাল্টিসটায়লিস (Cyperus Platistylis)। একই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত আরেকটি উদ্ভিদ। সাধারণত জলা জায়গাতে জন্মায়। যা মাদুর কাঠির যথার্থ বিকল্প হিসেবেই আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে। আমরা শিল্পীদের দিয়ে তা ব্যবহার করিয়েও দেখেছি।” তিনি এও জানান, “সাম্প্রতিক এই গবেষণা বিশ্বের প্রথম শ্রেণীর গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’- এও স্থান পেয়েছে।” অধ্যাপক অমল কুমার মণ্ডল এবং অধ্যাপিকা সংযুক্তা মণ্ডল পারুই সকল গবেষকদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। সঙ্গে আইআইটি খড়্গপুরের সংশ্লিষ্ট বিভাগকেও আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য, অধ্যাপক অমল কুমার মন্ডলের অধীনে গবেষক অনুপ কুমার ভুঁইয়া সবংয়ের এই মাদুর কাঠি এবং তার বিকল্প প্রাকৃতিক ফাইবার নিয়েই তাঁর পিএইচডি গবেষণা পত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা করেছেন। তার মধ্যেই এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষকরা।
তাঁরা জানান, “আমাদের ভারতবর্ষে প্রকৃতিক ফাইবার মিশন চলছে। সারা ভারতবর্ষে যতো ধরনের প্রাকৃতিক ফাইবার উৎপন্নকারী উদ্ভিদ রয়েছে, তাঁদের উদ্ভিদ বিজ্ঞানে চিহ্নিত করা এবং তাদের মধ্যে যে গুনাগুন রয়েছে সেই গুলোকে সনাক্ত করে প্যাটেন্ট নেওয়ার কাজ করা হচ্ছে।” গবেষকদের মতে, এই ধরনের প্রাকৃতিক ফাইবার পরিবেশ বান্ধবও বটে। যা কৃত্রিম ফাইবারের সঙ্গে সব দিক দিয়ে টেক্কা দেবে। এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, অধ্যাপক অমল কুমার মণ্ডল ২০১৮ সালে আগামী পাঁচ বছরের জন্য এই প্রকৃতিক ফাইবারের উপর ইউজিসি স্পেশাল পোগ্রামের জন্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন। তিনি এই প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন।