দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ জুন: আদিবাসী জনসমাজের জিনগত প্রেক্ষাপট উঠে এল বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) বিশেষ বক্তৃতায়। শুক্রবার (২১ জুন) দুপুরে জেলা শহর মেদিনীপুরের উপকন্ঠে অবস্থিত বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী চর্চাকেন্দ্র ও মিউজিয়াম (Centre for Adivasi Studies and Museum)-র উদ্যোগে এই ‘বিশেষ বক্তৃতা’-র আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে জিনগত সম্পর্কের বিষয়ও উঠে আসে এদিনের এই বিশেষ বক্তৃতায়। জৈবিক ও জিনগত প্রেক্ষিতে ভারতের আদিবাসী জনগোষ্ঠী সম্পর্কে আলোচনা করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Calcutta) নৃবিজ্ঞান (Anthropology) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শুভেন্দু মাজি।

thebengalpost.net
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ বক্তৃতা :

বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University) নৃবিজ্ঞান (Anthropology) বিভাগের অধ্যাপক তথা আদিবাসী চর্চাকেন্দ্র ও মিউজিয়ামের অধিকর্তা (Director) অধ্যাপক সুমহান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এতদিন ভারতের আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে ঔপনিবেশিক দৃষ্টিতে আমরা দেখে এসেছি। এই জাতিতত্ত্ব অস্ট্রালয়েড, নিগ্রোয়েড ইত্যাদি বর্গ-বিভাজন আমাদের চিনিয়েছে। কিন্তু, আধুনিক জিনবিদ্যার প্রেক্ষিতে এই শ্রেণিবিভাজন কতটা খাটে? বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে জিনগত সম্পর্কই বা কী? এই সমস্ত বিষয়ই উঠে এসেছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ বক্তৃতায়।” এদিন, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সুশান্ত কুমার চক্রবর্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী ভাষণে উপাচার্য বলেন, “ভারত এক বৈচিত্র্যময় দেশ। এই বৈচিত্র্যকে বোঝার জন্য যে অনুসন্ধান চলছে, জনগোষ্ঠীগুলিকে মলিকিউলার জেনেটিক্সের প্রেক্ষিতে দেখা, তার মধ্যে অন্যতম।” বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী চর্চাকেন্দ্র ও মিউজিয়াম এই বিষয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে সাধুবাদ জানান উপাচার্য।

বিশেষ বক্তৃতায় অধ্যাপক শুভেন্দু মাজি মূলত পূর্ব ভারতের আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির আগমন, বিস্তার, বিভাজন ও ঐক্যের বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “এ পর্যন্ত গবেষণার ফলস্বরূপ যা জানা যায়, তার ভিত্তিতে বলা যেতে পারে পূর্ব ভারতের সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে জিনগতভাবে সবচেয়ে বেশি মিল বিরহোড়দের। আবার সাঁওতাল, ভূমিজ, লোধা জিনগতভাবে পরস্পরের কাছাকাছি। মোটামুটিভাবে ৩৮৪৬ বছর আগে এই সকল জনগোষ্ঠীগুলি স্বতন্ত্র হতে শুরু করে এবং দক্ষিণ মুন্ডাদের সাথে দক্ষিণ-এশীয় জনগোষ্ঠীগুলির উপাদানের মিল লক্ষ করা যায়। মুন্ডা শাখা (অস্ট্রো এশিয়াটিক) প্রায় ৭০০০ বছর আগে ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।” তিনি আরও বলেন, “ভাষাগত ও ভৌগোলিক নৈকট্য এবং পারস্পরিক জিনগত ঘনিষ্ঠতার মধ্যে সমানুপাতিক সম্পর্ক দেখা যায় পূর্ব-ভারতের আদিবাসীদের মধ্যে।” অনুষ্ঠানে স্বতন্ত্র ভাষণ দেন আদিবাসী চর্চাকেন্দ্র ও মিউজিয়ামের অধিকর্তা অধ্যাপক সুমহান বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও বাণিজ্য অনুষদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (ডিন অফ আর্টস) অধ্যাপক অরিন্দম গুপ্ত। বিশেষ অতিথির আসন অলংকৃত করেন বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ (ডিন অফ সায়েন্স) অধ্যাপক দেবীদাস ঘোষ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক কৌশিক শঙ্কর বসু। ড. ইয়াসিন খানের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মধ্যে দিয়ে এদিনের এই অনুষ্ঠান শেষ হয়।

thebengalpost.net
অধ্যাপক শুভেন্দু মাজি: