দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ মার্চ: রাজভবনের সঙ্গে রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের টানাপোড়েনে আপাত বিরতি! একপ্রকার ‘অচলাবস্থা’ সৃষ্টি হওয়া বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে আপাতত তিন মাসের জন্য অস্থায়ী বা অন্তর্বর্তীকালীন ‘উপাচার্য’ নিয়োগ করার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছেন রাজ্যপাল তথা আচার্য সি.ভি আনন্দ বোস। সেই তালিকায় বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় (Vidyasagar University), উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় (North Bengal University) সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। উল্লেখ্য যে, গত দু’মাস ধরে (৬ জানুয়ারি থেকে) উপাচার্য-হীন হয়ে পড়েছিল এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলি। তবে, শুধু এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলিই নয় রাজ্যের মোট ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য (Vice Chancellor) নিয়োগ করা হবে বলে সোমবার সন্ধ্যায় রাজভবন সূত্রে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অবশ্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তবে, স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটির কাজ চলবে বলেও রাজভবন ও উচ্চ শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে ইউজিসি (UGC)’র গাইডলাইন বা শীর্ষ আদালতের (সুপ্রিম কোর্টের) পরামর্শ মেনেই তা করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে কোনও উপাচার্য ছিলেন না, তার মধ্যে অন্যতম উত্তরবঙ্গ ও বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৫ জানুয়ারি (২০২৩) এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে মেয়াদ শেষ হয়েছিল যথাক্রমে ওমপ্রকাশ মিশ্র (উত্তরবঙ্গ) এবং শিবাজী প্রতিম বসু (বিদ্যাসাগর)’র। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র-কেই। তবে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু’র পরিবর্তে নতুন কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, পুনরায় তিন মাসের জন্য দায়িত্ব নিতে অধ্যাপক বসু’ও রাজি নন! কারণ, ইতিমধ্যে (৬ জানুয়ারি থেকে) তিনি বিভাগীয় (রাষ্ট্রবিজ্ঞান) অধ্যাপক হিসেবে পাঠদান প্রক্রিয়ায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। যেহেতু, তিন মাস পর নতুন সার্চ কমিটির পরামর্শ মেনে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করা হবে, সেক্ষেত্রে অধ্যাপক শিবাজী প্রতিম বসু তিন মাসের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব নিতে রাজি নন বলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে। তবে, চলতি সপ্তাহেই রাজভবন বা আচার্যের তরফে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন (আগামী তিন মাসের জন্য) উপাচার্যের নাম পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর!
এ প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো এ বার থেকে ইউজিসি (University Grants Commission)’র এক জন প্রতিনিধিও থাকবেন সার্চ কমিটিতে। এখন সেখানে শিক্ষা দফতর, বিশ্ববিদ্যালয়, আচার্যের প্রতিনিধি সহ ৩ জন থাকতেন। ইউজিসি-র প্রতিনিধি যুক্ত হলে সংখ্যাটা হবে চার। তবে, রাজ্যের আরও এক জন প্রতিনিধি বাড়িয়ে মোট সংখ্যা পাঁচ করা হতে পারে বলেই শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর। সেক্ষেত্রে, ইউজিসি এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে অন্তত ‘১০ বছর’ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্রফেসর’ (Professor) হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেই ‘উপাচার্য’ পদের জন্য আবেদন করা যাবে বলে উচ্চ শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা কমিয়ে ৫ বছর করার পরই জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এমনকি মামলা গড়ায় উচ্চ আদালত (কলকাতা হাইকোর্ট) অবধি। স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত হয়তো ইউজিসি’র নিয়মেই সিলমোহর পড়তে চলেছে। সেক্ষেত্রে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই নতুন ‘উপাচার্য’ (Vice Chancellor) নিয়োগ করা হবে। তবে, অন্তর্বর্তীকালীন (আগামী তিন মাসের জন্য) উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এই নিয়ম লাগু করা হবেনা বলেই সূত্রের খবর।