দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৪ নভেম্বর: একেই বলে ‘পচা শামুকে পা কাটা!’ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজ্যের বি.এড কলেজগুলিকে এক ছাতার তলায় আনার তাগিদে ২০১৬ সালে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আমলে তথা রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তৈরী হয়েছিল B.Ed বিশ্ববিদ্যালয়। এখন চালাচ্ছেন রাজ্যপাল মনোনীত উপাচার্য। তিনি আবার রাজ্যের কোনও আবেদন-নিবেদনই আর শুনতে রাজি নন! গুরুত্ব দিচ্ছেন না রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকেও। প্রসঙ্গত, পড়ুয়াদের কথা ভেবে রাজ্যের ২৫৩টি বি.এড কলেজের অনুমোদন বাতিলের বিষয়টি বি.এড বিশ্ববিদ্যালয় ( বর্তমান নাম, বাবা সাহেব আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়)- এর উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়-কে পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানানো হলেও, তিনি তা নাকচ করে দিয়েছেন। সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে সোমা এও জানিয়েছেন, “অনুমোদন সংক্রান্ত সমস্ত সিদ্ধান্ত কর্মসমিতির বৈঠকেই নেওয়া হয়েছিল। এবং সেটা উচ্চ শিক্ষা দফতরে জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মেই বিশ্ববিদ্যালয় চলবে। তাই, যে সমস্ত বি.এড কলেজ এনসিটিই-র প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ, চলতি শিক্ষাবর্ষে সেখানে ছাত্র-ভর্তির অনুমতি দেবে না বিশ্ববিদ্যালয়।”

thebengalpost.net
উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়:

উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ দেওয়ার সরকারি কলেজ আছে ২৪টি। আর, বেসরকারি কলেজের সংখ্যা প্রায় ৬০০। সেগুলোতে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ নেন লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী। প্রতি বছর সরকারি অনুমোদন পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন করতে হয় ওই বেসরকারি বি.এড কলেজগুলোকে। এ বছর ৪ অক্টোবর ছিল অনুমোদনের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন। বিভিন্ন আবেদনপত্র যাচাই করে দেখা যায়, বেসরকারি কলেজগুলির মধ্যে প্রায় ৩৫০-টি কলেজ সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনেছে। বাকি ২৫৩টি কলেজ সেই নিয়ম মানেনি। ক্যাম্পাসে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা থেকে ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত এবং শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির মতো শর্ত না মানায় দু’শোর বেশি (২৫৩) বিএড কলেজের অনুমোদন বাতিল হয়ে যায়। যার প্রেক্ষিতে রাজ্যের বি.এড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজ্যপাল মনোনীত অন্তর্বর্তী উপাচার্যের দিকে আঙুল তোলে অনুমোদন না পাওয়া কলেজগুলো। তাঁদের দাবি, “উনি অনৈতিক কাজ করছেন। NCTE ছাড়পত্র দেওয়ার পরেও উনি পুনর্নবীকরণের আবেদন আটকে রেখেছেন।”

তাঁদের বিস্ফোরক অভিযোগ, “বহু কলেজের কোনরকম পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও; শুধুমাত্র লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে পুনর্নবীকরণ করিয়ে নিয়েছেন। আর, আমাদের উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকলেও টাকা দিতে রাজি না হওয়াতে পুনর্নবীকরণ আটকে দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও ঝাড়গ্রাম জেলার একাধিক সুপ্রতিষ্ঠিত বি. এড কলেজ এর কর্ণধারেরা জানিয়েছেন, “আমাদের এনসিটিই ছাড়পত্র দিয়েছে। হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে। তা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তীকালীন এই উপাচার্য রাজ্য সরকারের প্রতি ইগো থেকে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছেন।” ঝাড়গ্রামের কুলটিকরি বি.এড কলেজ কর্তৃপক্ষ সহ একাধিক কলেজ কর্তৃপক্ষের হুঁশিয়ারি, “আদালতেই এর শেষ দেখে ছাড়বো।”