দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ জানুয়ারি: দলের সাংসদ আর বিধায়কের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরেই! বলা ভালো, বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের পর থেকেই। প্রথমে ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি পালন, পরোক্ষে একে অপরকে কটাক্ষ, আর সব শেষে একই দিনে, একই জায়গায় থাকলেও, পরস্পরের ‘মুখ দেখাদেখি’ও বন্ধ হয়ে গেল! আর, সেই সুযোগেই বিজেপির ঘরে সিঁধ কাটছে শাসকদল তৃণমূল। ঘটনা যে রেল শহর খড়্গপুরের, এতক্ষণে রাজনীতি সচেতন সাধারণ মানুষ হয়তো বুঝেই গেছেন! ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা নিয়ে, মেদিনীপুরের বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ আর খড়্গপুরের (সদর) বিধায়ক হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে তীব্র রেষারেষি বা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে, পৌর ভোটের আগেই রেল শহরে বিজেপির সংগঠন টালমাটাল। হিরণ গোষ্ঠী আর দিলীপ গোষ্ঠীর মধ্যে প্রকাশ্য ‘অশান্তি’র খবর সংবাদমাধ্যমের দৌলতে রাজ্যবাসী জেনে গেছেন। এরপর, দিলীপ গোষ্ঠীর এক নেতার জেল, পরবর্তী সময়ে হিরন গোষ্ঠীর এক নেত্রীকে শোকোজ। সেই দ্বন্দ্ব এখনও অব্যাহত! আর, এর ফল ভুগছেন রেল শহরের সাধারণ বিজেপি কর্মীরা। ফলে, একপ্রকার বীতশ্রদ্ধ হয়েই বিজেপি দল ছেড়ে তাঁরা শাসকদলের আস্তানায় প্রবেশ করছেন! দিন সাতেক আগে ২৬ নং ওয়ার্ডের পর, বুধবার ১৪ নং ওয়ার্ডের মালঞ্চ এলাকার এক বুথ সভাপতি সহ শতাধিক বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগদান করলেন। ওয়ার্ড এর বিজেপি বুথ সভাপতি অক্ষয় খাঁড়া সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রকাশ্যে বললেন, “আমাদের বিধায়ক আর সাংসদের মধ্যে যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে দলটা করতে পারছিনা। তাই, তৃণমূলে যোগদান করলাম কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিয়ে।”

thebengalpost.net
খড়্গপুরে যোগদান :

এ নিয়ে যদিও, বিজেপির বক্তব্য, “পুলিশের ভয়ে তৃণমূলে যোগদান করেছেন ওই কর্মী ও সমর্থকরা। নানারকম মামলার ভয় দেখানো হয়েছে। তবে, প্রকৃত বিজেপি কর্মীরা এই সমস্ত ভয় পেয়েও, যোগদান করবে না। যারা প্রকৃত বিজেপি কর্মী নয়, তারাই পুলিশের ভয়ে বা অন্য কোন লোভ লালসার কারণে, শাসকদলে যোগদান করবে। এতে বিজেপির কোন ক্ষতি হবে না।” দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তাপস মিশ্র এমনটাই জানিয়েছেন সাংবাদিকদের। তাঁর বক্তব্য, “পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল সাময়িকভাবে এইসব করছে। মামলার ভয়, উচ্ছেদের ভয় দেখানো হচ্ছে। তাতেই কিছু ছেলেপুলে ভয় পেয়ে যোগদান করতে বাধ্য হচ্ছে! তবে, এর প্রভাব নির্বাচনে পড়বে না।” অন্যদিকে, ২৪ নং ওয়ার্ডে যোগদান করিয়ে খড়্গপুরের তৃণমূল নেতা তথা পৌরপ্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারপারসন প্রদীপ সরকার হুমকি দিলেন, “দিলীপ ঘোষদের পার্টি অফিস গুলোই শুধু থাকবে, এরপর থেকে পার্টি অফিসে আর কোনো কর্মী থাকবে না! দিলীপ ঘোষ খড়্গপুর শহরে যতবার আসবেন, ততবার জয়েনিং হবে। ওই সব দলে আর কোনো কর্মী থাকবে না! সবাই তৃণমূলে আসতে চাইছে, আমরাই দেখেশুনে নিচ্ছি।” প্রসঙ্গত, দিন সাতেক আগেও তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা’র উপস্থিতিতে দুই শতাধিক বিজেপি কর্মী তৃণমূলে যোগদান করেছিল ২৬ নং ওয়ার্ডে। তিনি এ নিয়ে জানিয়েছেন, “খড়্গপুর, মেদিনীপুর শুধু নয়, সারা বাংলা থেকেই বিজেপি দলটা উঠে যাবে। দিলীপ ঘোষের মতো নেতৃত্ব, নিজেদের বিধায়কদের-ই সামলে রাখতে পারেনা, সম্মান করতে জানেনা, আর সাধারণ কর্মীদের কিভাবে সামলে রাখবে বা সম্মান জানাবে। তাই, যে দলের সাধারণ কর্মীদের সম্মান আছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই তৃণমূল কংগ্রেসেই সকলে আসতে চাইছে।”