thebengalpost.net
ঐতিহাসিক মেদিনীপুর শহরের প্রবেশদ্বার (ছবি- প্রতীকী ও সংগৃহীত):

দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ২৩ আগস্ট: উন্নয়নের স্বার্থে এবং প্রশাসনিক সুবিধার্থে ছোট জেলার পক্ষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর, তাঁর আমলে ইতিমধ্যেই নতুন ৪-টি জেলা (আলিপুরদুয়ার, কালিম্পং, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম বর্ধমান) পেয়েছেন রাজ্যবাসী। এমনকি, আরও ৭-টি নতুন জেলার বিষয়েও খুব শীঘ্রই তিনি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে জানা যায়। এগুলি হল- বিষ্ণুপুর, বহরমপুর-জঙ্গিপুর, কান্দি, সুন্দরবন, রানাঘাট, ইচ্ছামতী এবং বসিরহাট। যদিও এই বিষয়টি এখনও প্রস্তাব আকারেই আছে, এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে, এই নতুন ৭-টি জেলা গঠিত হলে, পশ্চিমবঙ্গের জেলার সংখ্যা বেড়ে হবে ৩০। আগামীদিনে, আরও ৫-৬ টি নতুন জেলা তৈরির বিষয়েও তাঁর কাছে (মুখ্যমন্ত্রীর কাছে) বিভিন্ন মহল থেকে প্রস্তাব গেছে বলে জানা যায়।

thebengalpost.net
ঐতিহাসিক মেদিনীপুর শহরের প্রবেশদ্বার (ছবি- প্রতীকী ও সংগৃহীত):

সূত্রের খবর অনুযায়ী, বিভিন্ন মহল থেকে পূর্ব মেদিনীপুর ভেঙে পূর্ব মেদিনীপুর ও কাঁথি এবং পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঘাটাল- জেলার প্রস্তাব নাকি ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। আর তা অনুমান করেই, অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার অগ্রগণ্য সামাজিক সংগঠন ‘মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা’র তরফে সম্প্রতি পাল্টা একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল সি.ভি আনন্দ বোসের। তাঁদের দাবি, অবিভক্ত মেদিনীপুরবাসীর হৃদয়ে ‘মেদিনীপুর’ নাম এবং এই নামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিপ্লব, সংগ্রাম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি এক অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত। ইতিমধ্যে (২০১৭ সালে), পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে ঝাড়গ্রাম জেলা করার সময় সেই আবেগে কিছুটা হলেও ধাক্কা দেওয়া হয়েছে বলেও তাঁদের অভিমত। তাই, অদূর ভবিষ্যতের আর যেন সেই ‘ভুল’ না হয়; তা ভেবেই সম্প্রতি ৭৭-তম স্বাধীনতা দিবস এবং সংগঠনের ১৩-তম প্রতিষ্ঠা দিবসকে সামনে রেখে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা’র তরফে দাবি করা হয়েছে।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর ভবনে প্রতিষ্ঠা দিবস পালন:

সংগঠনের বক্তব্য অনুযায়ী, ‘মেদিনীপুর’ শব্দটির সঙ্গে সমগ্র মেদিনীপুরবাসীর একটি আত্মিক যোগাযোগ রয়েছে। স্বাধীনতা আন্দোলনে ও স্বাধীনোত্তর কালে বিভিন্ন গণআন্দোলনে ‘অখণ্ড মেদিনীপুর’ জেলার অধিবাসীদের দেশাত্মবোধে উৎসর্গীকৃত আত্মবলিদান ও অকুতোভয় বৈপ্লবিক প্রতিবাদ সর্বজনবিদিত। ‘মেদিনীপুর’ নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রানি শিরোমণি, হেমচন্দ্র কানুনগো, ক্ষুদিরাম বসু, মাতঙ্গিনী হাজরা, বীরেন্দ্রনাথ শাসমল, সাতকড়িপতি রায়, সতীশ কুমার সামন্ত, অজয় কুমার মুখার্জী, বিশ্বনাথ মুখার্জী, সুশীল কুমার ধাড়া, আভা মাইতি প্রমুখ স্মরনীয় ও বরণীয় ব্যক্তিত্বের স্মৃতি বিজড়িত সার্বিক অবদান। তা রাজ্যবাসী ও দেশবাসীও দ্বিধাহীন চিত্তে স্বীকার করেন। ব্রিটিশের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে মেদিনীপুরের বিপ্লবীরা গড়ে তুলেছিলেন ‘স্বাধীন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার’। সেই মন্ত্রীসভার অনুকরণে স্বাধীন ভারতও গড়ে তুলেছিল যুক্তরাষ্ট্রীয় মন্ত্রীসভা। তাই, ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যপূর্ণ সেই মেদিনীপুরকে পুনরায় বিভাজন করতে হলে- তমলুক ও হলদিয়া মহকুমা নিয়ে থাক ‘পূর্ব মেদিনীপুর’, যার সদর কার্যালয় হোক তমলুক। কাঁথি ও এগরা মহকুমা নিয়ে গঠিত হোক ‘দক্ষিণ মেদিনীপুর’। সদর কার্যালয় হোক কাঁথি। মেদিনীপুর ও খড়্গপুর মহকুমা নিয়ে থাক ‘পশ্চিম মেদিনীপুর’। সদর কার্যালয় থাক মেদিনীপুর শহর। ঘাটাল মহকুমা নিয়ে হোক ‘উত্তর পূর্ব মেদিনীপুর’। সদর কার্যালয় হোক ঘাটাল। একইসঙ্গে, ঝাড়গ্রামের নাম পরিবর্তন করে, করা হোক ‘উত্তর পশ্চিম মেদিনীপুর’। সদর কার্যালয় থাকুক ঝাড়গ্রাম। মেদিনীপুরবাসীর আবেগের প্রতি সম্মান জানিয়েই, বিভাজিত জেলা বা সম্ভাব্য বিভাজিত জেলার সঙ্গে ‘মেদিনীপুর’ নামটি (বা, শব্দটি) যুক্ত রাখার এই আবেদন মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের কাছে জানানো হয়েছে বলে সংস্থা’র তরফে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

thebengalpost.net
মেদিনীপুর সমন্বয় সংস্থা’র প্রতিষ্ঠা দিবসের ছবি: