দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ নভেম্বর: অখন্ড মেদিনীপুরেরর (কাঁথির) প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব তথা মেদিনীপুরের ইতিহাস প্রণেতা যোগেশ চন্দ্র বসু ১৯১০ সালে কাঁথির বসুধামে বসে লিখেছিলেন “বসুবংশ” নামক একটি গুরুত্বপূর্ন পাণ্ডুলিপি। এটাই তাঁর লেখা প্রথম কোন ইতিহাস রচনা। প্রায় ১১৩ বছর পরে সেই অধরা দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপিটি উদ্ধার করলেন আঞ্চলিক ইতিহাসের গবেষক সন্তু জানা। উল্লেখ্য যে, তরুণ শিক্ষক ও গবেষক সন্তু দীর্ঘদিন ধরে মেদিনীপুরের প্রাচীন সংবাদপত্র নিয়ে চর্চা করছেন। কাঁথি থেকে প্রকাশিত শতাব্দী-প্রাচীন ‘নীহার’ সংবাদপত্রের (১৯০১ – ১৯৮৯) সমস্ত আসল কপি বা নমুনা (সংখ্যায় প্রায় ৪৫০০-টি) তিনি সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে প্রতিষ্ঠিত দণ্ডভুক্তি একাডেমী গবেষণা কেন্দ্রে। সুদীর্ঘ অনুসন্ধানের পরে মেদিনীপুর শহরের রাঙামাটি থেকে জনৈক কৃষ্ণচন্দ্র বসু’র কাছ থেকে গবেষক সন্তু জানা ‘বসুবংশ’ পাণ্ডুলিপিটির হদিস পান।

thebengalpost.net
গ্রন্থাকারে প্রকাশ:

গত ১৪ নভেম্বর সেই দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপিকে শতাধিক বছর পরে প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশ করা হয় কাঁথির ঐতিহ্যশালী বসুধামে। মেদিনীপুরের আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন এই গ্রন্থের ভূমিকা লিখেছেন এবং সম্পাদনা করেছেন দাঁতনের বাসিন্দা তথা গবেষক সন্তু জানা। প্রকাশক মেদিনীপুরের অরিন্দম’স প্রকাশনীর পক্ষে অরিন্দম ভৌমিক। কাঁথির বসুধামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. হরিপদ মাইতি, প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. অমলেন্দু বিকাশ জানা, প্রাক্তন অধ্যাপক ড. হৃষিকেশ পয়ড়া, ইতিহাস গবেষক মন্মথনাথ দাস, সাংবাদিক সুব্রত গুহ, প্রাবন্ধিক সুদীপ মাইতি, বসু বংশের উত্তরাধিকারী ইরা বসু, সম্পাদক সন্তু জানা, সুদর্শন সেন, সুমন নারায়ণ বাকরা, শিবশঙ্কর সেনাপতি, সুদর্শন খাটুয়া, তপন রণজিৎ প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

প্রসঙ্গত, ১৯২১ সালে মেদিনীপুরের ইতিহাস লিখে যে প্রণম্য মানুষটি বাংলা ও বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন, সেই যোগেশ চন্দ্র বসু আজ থেকে ১১৩ বছর আগে মেদিনীপুরের কায়স্থ বসুদের পুর্বপুরুষের ইতিহাস চর্চা করতে গিয়ে আঞ্চলিক ইতিহাসের যে অকথিত আকর দলিল তিনি তৈরি করে গিয়েছেন, আসলে তা বাংলা ইতিহাসের এক অন্যতম সম্পদ। এই গ্রন্থে উল্লেখিত রয়েছে অখণ্ড মেদিনীপুর জেলায় বসবাসকারী মাহিনগর বসুদের ৪২ পুরুষের কথা ও বংশলতিকা। বল্লাল সেন রাজ্যসভার হীরকখণ্ড দশরথ বসু, নবাব হুসেন শাহের নৌসেনা অধ্যক্ষ গোপীনাথ বসু ওরফে পুরন্দর খান, মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ গ্রন্থের রচয়িতা মালাধর বসু ওরফে গুনরাজ খান থেকে শুরু করে ‘ভারতরত্ন’ নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু কিংবা ইতিহাসবিদ যোগেশ চন্দ্র বসু; সকলেই যেন এক সূত্রে বাঁধা আছেন এই গ্রন্থে। সম্পাদক সন্তু জানা গ্রন্থটির সঙ্গে যুক্ত করেছেন পাণ্ডুলিপি উদ্ধারের রোমহর্ষক কাহিনী এবং দুষ্প্রাপ্য কায়স্থ মঙ্গলের সম্পূর্ন শ্লোক। এক কথায় বলা যায়, ‘মেদিনীপুরেরর ভূমিপুত্র’ তথা বাংলার দিকপাল শিক্ষাবিদ যোগেশ চন্দ্র বসু লিখিত এই গ্রন্থ প্রকাশের ফলে অখন্ড মেদিনীপুর জেলার ইতিহাস আরও একবার সমৃদ্ধ হল।