দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৩ জানুয়ারি: আগামীকাল গ্রাম বাংলার বড় আদরের টুসু পরব। আনন্দ-আহ্লাদের পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। তার আগেই গ্রামে যেন টুসু’র বিসর্জন! ভাই-বোনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর লোকাল থানার ভুকভুকিশোল গ্রাম। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরের দিকে, গ্রামের কাছেই মোরাম খাদানের পাশে আপন খেয়ালে খেলাধুলা করছিল বছর দশেকের সৌরভ মান্ডি। হঠাৎ ঘটে যায় দুর্ঘটনা! পরিত্যক্ত মোরাম খাদানের গর্তে পড়ে যায় সৌরভ। ক’দিনের বৃষ্টিতে মোরাম খাদানে জমে গিয়েছিল বেশ অনেকখানি জল। সেই জলে ডুবে যায় সে। দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখেই, ভাইকে বাঁচাতে জলে ঝাঁপ দেয় দিদি চম্পা (১২)। দু’জনই জলে ডুবে যায়! অন্য একটি বাচ্চা গ্রামে গিয়ে খবর দেওয়ার পর, স্থানীয়রা এসে তাদের মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেন।
বুধবার রাতেই খড়্গপুর গ্রামীণ থানার তরফে তাঁদের দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এদিকে, পৌষ সংক্রান্তির আগের দিনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় পুরো জেলা জুড়েই যেন নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া! জানা গেছে, সৌরভ ও চম্পা মায়ের সাথে ভুকভুকিশোল গ্রাম সংলগ্ন মিশনপাড়ায় মামার বাড়িতে থাকত। স্থানীয় একটি মিশনারী স্কুলে দু’জনই পড়াশোনা করত। বাবা স্বরূপ মান্ডি কেশিয়াড়িতে নিজের বাড়িতে থাকতেন। পেশায় তিনি দীনমজুর! বুধবার সন্ধ্যায় এই খবর শুনে তিনি খড়্গপুরের গ্রামে পৌঁছেছেন। কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই! মা চম্পা বারবার শোকে জ্ঞান হারাচ্ছেন। এদিকে, এই ঘটনায় অবৈধ মোরাম খাদান নিয়ে গ্রামে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ! মোরাম তোলার পর এই ধরনের বড় বড় গর্ত থেকে প্রতিমুহূর্তেই নানা বিপদ ঘটে বলে তাঁদের বক্তব্য। কিন্তু, কেউ ভ্রুক্ষেপ করেনা। যার ফল, সৌরভ আর চম্পার মতো দুই ফুটফুটে শিশুর মৃত্যু! টুসু পরবের আগেই গ্রাম জুড়ে যেন ‘জীবন্ত টুসু’ বিসর্জনের শোক নেমে এসেছে!