মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৬ এপ্রিল:বাংলা নববর্ষের পরদিনই মর্মান্তিক শোকের ছায়া নেমে এলো জেলা শহর মেদিনীপুরে! ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল, শহর মেদিনীপুরের বাসিন্দা বাবা, মা ও নাবালিকা কন্যার। মৃত্যু’র সঙ্গে যুঝছে আরেক শিশুকন্যা। তাকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে (স্পন্দনে)। আপাতত শিশুটির অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডেবরার টোলপ্লাজার কাছাকাছি (খড়্গপুর গ্রামীণ থানার অন্তর্গত) হরিনাতে জাতীয় সড়কের উপর এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার সকাল ৯ টা-সাড়ে ৯ টা নাগাদ।
জানা যায়, নিজেদের ব্যক্তিগত চার চাকা গাড়ি (হোন্ডাই আই টেন) নিয়ে কলকাতা থেকে মেদিনীপুরে নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে ফিরছিলেন পেশায় নামকরা এক বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার, বছর ৪০ এর সমিত সামন্ত। সঙ্গে ছিলেন, স্ত্রী বর্ণালী সামন্ত (৩৫) এবং দুই মেয়ে সিঞ্জিনী সামন্ত (১১) ও সাম্মি সামন্ত (৭)। সেই সময় ডেবরা টোল প্লাজা পেরিয়ে (কলকাতার দিক থেকে) হরিনাতে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল একটি ৪০৭ গাড়ি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তার পিছনে সজোরে ধাক্কা মারে সমিত বাবু’র গাড়িটি। তিনি নিজেই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। হয়তো তাঁর কিছুটা তন্দ্রার ভাব এসে গিয়েছিল! এদিকে, মারাত্মক এই দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় তাঁদের প্রাইভেট গাড়ির সামনের অংশ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়, তাঁর এবং তাঁর পাশের আসনে বসে থাকা স্ত্রী’র। স্থানীয়দের সহায়তায় তাঁদের উদ্ধার করে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে খড়্গপুর গ্রামীণ থানার পুলিশ। সেখানেই তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয় এবং মেডিক্যাল কলেজের ওটি-তে নিয়ে যাওয়ার পরই মৃত্যু হয় বড় মেয়ে সিঞ্জিনীরও। এরপর, বছর ৬-৭ এর শিশু কন্যাটির প্রাথমিক চিকিৎসার পর, তাকে পাঠানো হয় শহরের নামকরা বেসরকারি হাসপাতালে। তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা।
এদিকে, খবর পেয়েই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পৌঁছন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা, ৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৌ রায় এবং ২ নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা যুব তৃণমূল নেতা নির্মাল্য চক্রবর্তী প্রমুখ। তাঁরা জানিয়েছেন, মেদিনীপুর শহরের ২৩ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম অরবিন্দনগর এলাকার বাসিন্দা সমিত সামন্ত কলকাতায় একটি বেসরকারি সংস্থায় ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকেই নিজেদের মেদিনীপুরের বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। পথে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে যায়! তাঁরা পরিবারের পাশে আছেন এবং শিশুটির উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন বলেও জানা গেছে। জানা গেছে, শহরের স্টেশন রোড এলাকায় সমিত বাবু’র শ্বশুর বাড়ি অর্থাৎ শিশুটির মামা বাড়ি। তাঁরা ইতিমধ্যেই হাসপাতালে পৌঁছেছেন। ঘটনা ঘিরে জেলা শহরে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া!