দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ ডিসেম্বর: স্বামী সুশান্ত বেরা কর্মসূত্রে মুম্বাই পাড়ি দিয়েছেন বুধবার। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অসুস্থ তাঁর দুই সন্তান ও স্ত্রী। উপসর্গ পেট খারাপ বা খাদ্যে বিষক্রিয়ার। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার অবধি একাধিকবার বমি-পায়খানা হয় তিনজনের। শুক্রবার স্থানীয় গ্রামীণ চিকিৎসককে খবর দেওয়া হয়। তবে, শেষরক্ষা হয়নি! শনিবার সকাল ৮ টা নাগাদ মৃত্যু হয় নাবালক সন্তান অভীক বেরা (৮)’র। স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে, একই উপসর্গ থাকা এবং প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া মা মৌমিতা বেরা (৩৪) ও দিদি অভিষিক্তা বেরা (১১)- কে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে। শনিবার বিকেলে সেই বেসরকারি হাসপাতালেই পরপর মৃত্যু হয়, প্রথমে মেয়ে ও তারপর মায়ের! ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর থানার (দাসপুর ২ নং ব্লকের) জোতগোবর্ধন গ্রামের। একই পরিবারের তিন জনের এই রহস্যমৃত্যুতে তোলপাড় গোটা জেলা। নড়েচড়ে বসেছে ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। রবিবার সকালে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, “শনিবার থেকেই ওই গ্রামে পৌঁছে গিয়েছে আমাদের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য দপ্তরের দল। আজ সকালে উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (২) এর নেতৃত্বে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের দল গেছে, বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে খাদ্যে বিষক্রিয়া জনিত কারণে মৃত্যু হতে পারে। তবে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এলে পুরো বিষয়টি বোঝা যাবে।” যেভাবে, মুখে বমি এবং গাঁজলা বা ফেনা উঠে প্রত্যেকের মৃত্যু হয়েছে, তাতে খাদ্যে বিষক্রিয়ার কথাই বলছেন স্থানীয় চিকিৎসক ও ওই বেসরকারি হাসপাতালও। যদিও, এই ঘটনায় আত্মীয় ও প্রতিবেশীদের অসচেতনতার অভিযোগও তুলছেন কেউ কেউ। শুক্রবার কিংবা শনিবার সকালে, কেন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে! এই ধরনের ঘটনায় সরকারি হাসপাতালে হয়তো তুলনামূলক ভালো পরিষেবা পাওয়া যেত বলে মনে করছেন অনেকেই।
জানা গেছে, জোতগোবর্ধন গ্রামের সুশান্ত বেরা (৪০) মুম্বাইয়ে সোনার কাজ করেন। সম্প্রতি বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। প্রতিবেশীরা বলছেন, অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে। মৌমিতার পরিবারও জানিয়েছে, মেয়ে-জামাইয়ের মধ্যে ১২ বছরের বিবাহিত জীবন। কখনও কোনো অশান্তি হয়নি। স্ত্রী ও দুই সন্তান বলতে ‘অজ্ঞান’ ছিলেন সুশান্ত! কিন্তু, বুধবার (৮ ডিসেম্বর) তাঁর চলে যাওয়ার পরদিন থেকেই শুরু হয় সমস্যা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে লাউ শাকের তরকারি খেয়েছিল মা ও দুই সন্তান। ওই দিন রাত থেকেই শুরু হয় বমি ও পায়খানা। শুক্রবার অবশ্য স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর, রাতে শসা মুড়ি খেয়ে ছিল মা ও সন্তানেরা। শনিবার সকাল থেকে ফের পরিস্থিতির অবনতি হয় এবং মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পরপর তিন জনের মৃত্যু হয়। মৃতদেহ গুলির ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। এদিকে, এই ঘটনায় কপালে চিন্তার ভাঁজ আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশী থেকে পুলিশ ও স্বাস্থ্য দপ্তরের। কি এমন বিষক্রিয়া হল! এদিকে, ওই বেসরকারি হাসপাতালের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, বমির সাথে লাল রঙের অস্বাভাবিক কিছু ‘নমুনা’ পাওয়া গেছে! তা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভুবন চন্দ্র হাঁসদা জানিয়েছেন, “এই সমস্ত বিষয়গুলিই তদন্তে সাহায্য করবে।” জেলার জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র জানিয়েছেন, “পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। এলাকায় আছে স্বাস্থ্য দপ্তরের দল। ওই পরিবার ছাড়া বাকি সকলেই সুস্থ আছে।” ঘাটালের এসডিপিও অগ্নিশ্বর চৌধুরী জানিয়েছেন, “ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।”