দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ ফেব্রুয়ারি: জেলাজুড়ে ছড়িয়ে MA (English) পাস চোরের কীর্তি! ৯ জানুয়ারি ঘাটাল থানার হাতে ‘পাকড়াও’ হওয়ার পর, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একের পর এক চুরির রহস্য উদঘাটন করেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন থানা। খড়্গপুর টাউন থানার ২ নং ওয়ার্ডে নিউটাউন এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে ভরদুপুরে চুরি গিয়েছিল ১২ লক্ষ টাকার সোনার অলংকার! ২১ সেপ্টেম্বরের (২০২১) সেই চুরির কিনারা হল প্রায় সাড়ে চার মাস পর। দেখা গেল এই চুরিতেও এমএ পাস চোর সৌমাল্য চৌধুরী’রই ‘হাতযশ’ লুকিয়ে আছে। বুধবার তাঁকে খড়্গপুর টাউন থানা রিমান্ডে নিয়েছে।

thebengalpost.net
সৌমাল্য চৌধুরী :

সৌমাল্য-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, খড়্গপুর নিউ টাউনের বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিক শঙ্কর পাইন ও তাঁর স্ত্রী রীতা পাইনের অনুপস্থিতিতে বেলা ৩ টা নাগাদ অভিনব কায়দায়, তালা ভেঙ্গে তাঁদের বাড়িতে প্রবেশ করে সৌমাল্য। আলমারি থেকে নিয়ে পালিয়ে যায় প্রায় ১২ লক্ষ টাকার সোনার গহনা। সাবান কারখানার মালিক শঙ্কর তখন নিজের কারখানাতেই ছিলেন। স্ত্রী রীতা বেরিয়েছিলেন ব্যাঙ্কের কাজে। সেই সুযোগেই নিজের কীর্তি সাধন করে সৌমাল্য! তবে, ওই পরিবার পুলিশে অভিযোগ জানানোর পরেও, চোরকে খুঁজে বের করতে নাকানি-চুবানি খেতে হচ্ছিল খড়্গপুর টাউন থানা-কে। কারণ, যে অভিনব কায়দায় তালা ভাঙা হয়েছিল, তাতে পুলিশ বিশ্বাসই করতে পারছিল না, আদৌ চুরি হয়েছে, নাকি ওই পরিবার ‘সাজানো গল্প’ ফাঁদছে! অবশেষে, ঘাটাল থানার পুলিশ যখন সৌমাল্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করে, সেখানে সৌমাল্য নিজেই একের পর এক চুরির বর্ণনা দিতে থাকে। সেই সূত্রেই পুলিশ যখন জানতে পারে, খড়্গপুর টাউন থানার এই চুরিতেও সে জড়িয়ে আছে, তারপরই সৌমাল্য-কে রিমান্ডে নিয়ে এসে তদন্ত শুরু করে খড়্গপুর টাউন থানা। চুরির ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়। জানা যায়, ১২ লক্ষ টাকার সোনার গহনার বেশ কিছুটা সে দাসপুরের সোনা ব্যবসায়ী চন্দ্রশেখর পান্ডে-কে বিক্রি করেছিল, তার সাগরেদ প্রকাশ শাসমলের সহায়তায়। সেই গহনা উদ্ধার করেছে পুলিশ। সৌমাল্য-কে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে পুলিশের তরফে।

thebengalpost.net
খড়্গপুর টাউন থানায় সৌমাল্য :

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে MA পাস করেছে সৌমাল্য চৌধুরী। দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়্গপুর শাখায় একটি চাকরিও করত। জেরায় সৌমাল্য আগেই জানিয়েছিল, আগে তারা থাকত আসানসোলে। সেখান থেকেই তার বাবা বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে রেলের অস্থায়ী কর্মী হিসেবে তার কাজের জোগাড় করে দেন। কিন্তু, সেই কাজ নাকি তার ভাল লাগছিলো না। আসানসোলে থাকতে থাকতে স্থানীয় কয়েকজন দুষ্কৃতীর সঙ্গে মিশে চুরিতে হাত পাকায় সৌমাল্য৷ চুরি বিদ্যায় নিজের দক্ষতার কথা বোঝাতে গিয়ে সৌমাল্য নিজেই পুলিশকর্মীদের জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সে ১৭০টি চুরি করেছে। এমন কি, কয়েক মাস আগে হাওড়া আন্দুলের একটি ফ্ল্যাট থেকে ১১ লক্ষ টাকা সোনার গহনা চুরি করায় সৌমাল্যকে পাঁশকুড়া থেকে গ্রেপ্তার করে সাঁকরাইল থানার পুলিশ। জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের চুরি চালিয়ে গেছে সৌমাল্য! এবার, ঘাটালের কোন্নগরের ওই চুরির ঘটনায় ঘাটাল পুলিশের হাতে ধরা পড়ল ‘বিদ্বান’ ও ‘সৌম্যসুন্দর’ এই অদ্ভুত চোর, সৌমাল্য। পুলিশকে নিজেই সৌমাল্য জানিয়েছে, একধরনের মানসিক সমস্যা (Mental Disorder) বা রোগ Clyptomania (চুরির বাতিক)-তে আক্রান্ত সে। এজন্য, মনোরোগ বিশেষজ্ঞকেও দেখিয়েছে সে। তবে, তিনি নাকি বলছেন, এই রোগে আক্রান্ত হলে, চুরির প্রবণতা বাড়বে বই কমবেনা! এই সৌমাল্য-কে ঘাটালের ১৬ নং ওয়ার্ডের কোন্নগরের একটি ফ্ল্যাটে (বিদ্যুৎ দপ্তরের মহিলা কর্মীর আবাসন) চুরির ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি গ্রেফতার করেছিল ঘাটাল থানার পুলিশ। তারপরই তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, অবিভক্ত মেদিনীপুর জুড়ে একের পর এক চুরির ঘটনায় জড়িত সে!

thebengalpost.net
উদ্ধার হওয়া সোনাদানা :