thebengalpost.net
আপাতত সাময়িক স্বস্তিতে অভিষেক ও তাঁর স্ত্রী রুজিরা :

দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৫ জুলাই: সোমবারই (২৪ জুলাই) তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রক্ষাকবচ’ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এদিন, একযোগে মামলা ওঠে সুপ্রিম কোর্টে ও হাইকোর্টে। সুপ্রিম কোর্টে অবশ্য আবেদন জানিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দোপাধ্যায়। সেই মামলাতেই বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউল এবং বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়ার বেঞ্চ ইডি-র কাছে জানতে চান, কোনও অভিযুক্ত বিদেশে গিয়ে গা-ঢাকা দেওয়ার আশঙ্কা না থাকলে, তাঁর বিদেশ যাওয়ার অধিকার আছে। বিশেষত, দেশের ওই নাগরিকদের যদি চিকিৎসা জনিত প্রয়োজন থাকে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী (রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়) চিকিৎসার জন্য ২৬ জুলাই বিদেশ যেতে চান। কিন্তু, তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে সম্প্রতি বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছে। এখন তাঁরা দু’জন এক মাসের জন্য বিদেশ যেতে চাইছেন। এর আগেও তাঁরা বিদেশ গিয়েছেন। তদন্তে অসুবিধা তৈরি না করে ফিরেও এসেছেন। সে ক্ষেত্রে ইডি (ED) কেন বাধা দিচ্ছে? কেনই বা রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে লুক আউট সার্কুলার জারি করা হয়েছে? এর প্রয়োজন কি?

thebengalpost.net
আপাতত সাময়িক স্বস্তিতে অভিষেক ও তাঁর স্ত্রী রুজিরা:

সুপ্রিম কোর্টে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি এও আশঙ্কা প্রকাশ করেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও ইডি ‘লুক আউট’ নোটিশ জারি করতে পারে। যদিও, তিনি গত এক বছর ধরে কয়লা-পাচার মামলার তদন্তে সহযোগিতা করে আসছেন। এরপরই, বিচারপতি কউল ইডি-র আইনজীবী তথা কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস.ভি রাজুর কাছে জানতে চান, “লুক আউট সার্কুলার জারি করা হলে একাধিক আইনি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। এক্ষেত্রে লুক আউট সার্কুলার জারির কি প্রয়োজন রয়েছে?” এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য শুক্রবার (২৮ জুলাই) পর্যন্ত সময় চান ইডি-র আইনজীবী এস.ভি রাজু। তিনি জানান, “ইডি অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জানানো সম্ভব।” শুক্রবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে বলে জানিয়ে দেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি। অন্যদিকে, কলকাতা হাইকোর্টেও নির্ধারিত সুচি অনুযায়ী সোমবার বিকেলে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের FIR খারিজের আবেদনের মামলাটি ওঠে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘রক্ষাকবচ’ না দেওয়া হলেও, তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন করার জন্য। সেইমতো বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের বেঞ্চে আবেদন জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মানু সিংভি। তবে, ইডির তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস.ভি রাজু সওয়াল করেন, “সব নিয়োগ সংক্রান্ত মামলা হওয়া উচিত বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে। যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, সৌমেন নন্দী মামলা বা নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি সিনহার বেঞ্চে ফিরিয়ে দিয়েছিল।” একই সঙ্গে তিনি এও জানান, বিচারপতি অমৃতা সিনহার নির্দেশেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করেছিল ইডি। সে ক্ষেত্রে তাঁর এজলাসেই মামলাটির শুনানি হওয়া উচিত।

যদিও, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি জানান, বিচারপতি ঘোষের এজলাসেই ৪৮২ ধারা অর্থাৎ এফআইআর খারিজের মামলার শুনানি হয়। তাই এই এজলাসেই আসা হয়েছে। ইডি সম্পর্কে তিনি বলেন, ইডি অত্যন্ত শক্তিশালী সংস্থা। তবে আদালতকে এভাবে প্রভাবিত করা যায় না। তিনি উল্লেখ করেছেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত মানিক ভট্টাচার্য, সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের জামিন সংক্রান্ত মামলাও এই এজলাসেই চলছে। এরপরও ইডি নিজেদের বক্তব্য অনড় ছিল। ইডি-র যুক্তি শুনে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ প্রশ্ন করেন, অপরাধমূলক মামলা (ফৌজদারী মামলা) ও সাধারণ মামলা কি একটাই বেঞ্চ শুনতে পারে? নিয়োগ দুর্নীতিতে যতগুলি ক্ষেত্রে ইডি তদন্ত করছে, সেগুলি কি একটাই বেঞ্চে হবে? এরপরই তিনি মামলা ছাড়ার কথা জানান। তিনি জানান, প্রধান বিচারপতি ঠিক করবেন কোথায় শুনানি হবে। প্রধান বিচারপতি বললে তিনি এই মামলা শুনবেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি ঘোষ। এদিক, বেঞ্চ নির্দিষ্ট না হওয়া পর্যন্ত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনরকম পদক্ষেপ করা হবে না বলে আদালতে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইডি-র আইনজীবী তথা কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস.ভি রাজু। সবমলিয়ে, আপাতত হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে সাময়িক স্বস্তি মিললেও, আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার (২৬ জুলাই) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিদেশযাত্রা’ যে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল, তা মনে করছেন আইনজীবী মহল।