দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ৭ জুলাই: নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে ফের স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জে কে মহেশ্বরী এবং কে ভি বিশ্বনাথনের বিভীষণ বেঞ্চ। ২০১৭ সালে নিযুক্ত ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল এবং পুনর্নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে শুক্রবার। একইসঙ্গে, মামলা ফেরত পাঠানো হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে। ডিভিশন বেঞ্চকে দ্রুত শুনানি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়ে স্বভাবতই খুশি চাকরি ‘অনিশ্চিত’ হয়ে পড়া ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেট (Primary TET 2014)- এর ভিত্তিতে ২০১৭ সালে রাজ্য জুড়ে নিযুক্ত হয়েছিলেন প্রায় ৪৩ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক। টেট পাস পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত (D.EL.ED) প্রার্থী না থাকায়, এর মধ্যে প্রায় ৩২ হাজার ‘অপ্রশিক্ষিত’ (তৎকালীন সময়ে) শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। এই ৩২ হাজারের নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই ‘বেনজির’ দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন প্রিয়াঙ্কা নস্কর সহ ১৪০ জন টেট পাস চাকরিপ্রার্থী। মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ১২ মে (২০২৩) কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, “৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করে, নতুন করে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত (আগস্ট মাস অবধি) এই ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক প্যারা-টিচারদের মতো বেতন পাবেন। তবে, নতুন করে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া (৩২ হাজার শিক্ষক সহ মোট ১ লক্ষ ২৫ হাজার টেট পাস চাকরিপ্রার্থী) শেষে এই শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা পুনরায় নিযুক্ত হবেন, তাঁদের চাকরি বহাল থাকবে এবং তাঁদের ব্রেক-ইন সার্ভিস হবে না।”

thebengalpost.net
সুপ্রিম কোর্ট, ফাইল ছবি:

এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল এবং চাকরি হারানো শিক্ষকেরা। গত ১৯ মে (২০২৩) অন্তর্বর্তী নির্দেশে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছিল, “এখনই প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি বাতিল হচ্ছে না। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সকলেই প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে বেতন পাবেন। তবে, চার মাসের মধ্যে (সেপ্টেম্বর) ইন্টারভিউ নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।” এই অন্তর্বর্তী নির্দেশকেও চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিলেন পর্ষদ সভাপতি এবং ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক। সেই মামলারই শুনানি হয় আজ (৭ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টে। আপাতত, ‘পুনর্নিয়োগ’ কিংবা ১ লক্ষ ২৫ হাজার টেট পাস (২০১৪ প্রাইমারি টেট পাস) প্রার্থীদের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে এবং মামলা ফেরত পাঠানো হয়েছে ডিভিশন বেঞ্চে। সেখানে দ্রুত শুনানি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। অন্যদিকে, এই বিষয়ে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তেওয়ারি জানিয়েছেন, “দুর্নীতি করে চাকরি পাওয়া লোকজনের চাকরি যাবেই। আজকে সুপ্রিম কোর্ট মামলাটা ডিভিশন বেঞ্চে পাঠিয়েছে। সব পক্ষকে তাড়াতাড়ি শুনে রায়দান করার জন্য। যারা যোগ্য তাদের কিছুই হবে না। কিন্তু, যারা অযোগ্য তাদেরকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।”