দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২২ জুন: দিব্যি হাসিখুশি মেয়েটা’র নানা রঙের ছবি এখনো জ্বলজ্বল করছে ফেসবুকে (Facebook)। কোনো এক অজানা কারণে, সেই মেধাবী মেয়েটার-ই হয়তো মনে হয়েছিল, তার চারপাশের জীবনটা হয়ে উঠেছে বে-রঙিন, অন্ধকার! বর্তমান সময়ের ‘অতি-আধুনিক’ আর ‘অসহনশীল’ সমাজব্যবস্থায়, আর পাঁচটা ছেলেমেয়ের মতোই বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সেমিস্টারের (মাইক্রোবায়োলজি) ছাত্রী সুমনা-ও যেন চরম সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বিন্দুমাত্র সময় নিল না। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, বাবা-মা-পরিবারের স্বপ্ন, প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই- সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে মাত্র ২৩ বছরের মেয়েটা আঁকড়ে ধরল মৃত্যু-কে! সোমবার (২০ জুন) রাতে জেলা শহর মেদিনীপুরের কুইকোটাতে নিজের আত্মীয় বাড়ি থেকে সুমনা ঘোষের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হল। দ্রুত মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে, চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন! নিমেষে যেন মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে, সুমনা’র পরিবার-পরিজনদের মাথায়।

thebengalpost.net
সুমনা ঘোষ:

মঙ্গলবার সকাল থেকে খবর পেতে শুরু করেন সুমনার বন্ধুবান্ধব ও শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। শোক প্রকাশ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে, সুমনার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব জানাচ্ছেন, ইদানিং একটু মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল সুমনা। ফেসবুকেও নাকি বেশকিছু হতাশাজনক পোস্ট করেছিলো। তবে, তাঁরা কেউই ভাবতে পারেননি, শেষ পর্যন্ত সুমনা এই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে! উল্লেখ্য যে, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি (Microbiology) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ বা চতুর্থ সেমিস্টারের ছাত্রী সুমনা ঘোষ মেদিনীপুর শহরের মেসে থাকত। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল মহকুমার খড়ার সংলগ্ন প্রত্যন্ত পাথরা গ্রামে। আত্মীয় বাড়ি (মাসি বাড়ি বলে জানা গেছে সুমনা’র বন্ধু-বান্ধবদের মারফত) মেদিনীপুর শহরের কুইকোটাতে। মেসে থাকলেও, সুমনা প্রায়ই নিজের আত্মীয় বাড়িতে যেত। মামা-মাসিদের সঙ্গে অত্যন্ত ভালো সম্পর্ক। বাবা-মা গ্রামে থাকায়, তাঁরাই ছিলেন একপ্রকার অভিভাবক। কিন্তু, কেউই টের পাননি সুমনা’র মনের মধ্যে কি চলছে! হয়তো টের পাওয়া সম্ভব-ও ছিলনা। সোমবার-ও আর পাঁচটা দিনের মতোই নিজের আত্মীয় বাড়িতে গিয়েছিল সুমনা। রাতে সকলের অগোচরে গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা করে সে! তবে, কিছুক্ষণের মধ্যেই এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে তাকে দ্রুত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার মেদিনীপুর মেডিক্যালেই সুমনা’র দেহের ময়নাতদন্ত হয়। গ্রাম থেকে এসেছিলেন পরিবারের সকলেই। তবে, কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না কেউই। পুলিশের তরফে একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা দায়ের করে তদন্ত করা হচ্ছে।

thebengalpost.net
ফেসবুক ছবি:

এদিকে, আকস্মিক এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ সকলেই! উল্লেখ্য যে, বর্তমান সময়ে মারাত্মক হারে এই ধরনের প্রবণতা বাড়ছে বলে, মঙ্গলবার (২১ জুন)-ই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের তরফে হতাশাগ্রস্ত ও মানসিক অবসাদে ভোগা মানুষের পাশে দাঁড়াতে ‘আলোদিক’ (Aalodik) নামে একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। আর, তার আগের রাতেই আরও একটা ফুল অকালে ঝরে গেল! এ প্রসঙ্গে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রধান ডাঃ কাবেরী ভট্টাচার্য যেটা জানাচ্ছেন, “প্রকাশ করতে হবে। পরিবারকেও বুঝতে হবে। সবটাই গোপনে রেখে, সকলের অজান্তে এই কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললে কিছুই করার থাকবে না! সুস্থ হয়ে ওঠার, ভালো থাকার ইচ্ছেটা থাকা জরুরি। তাহলে অবশ্যই অবসাদ থেকে বের করে নিয়ে আসা সম্ভব। কিন্তু, পুরোটাই গোপন রাখলে, তাঁকে বা তাঁর সমস্যা চিহ্নিত করাই তো অসম্ভব হয়ে পড়বে।”

thebengalpost.net
জেলা পুলিশের উদ্যোগে ‘আলোদিক’ এর উদ্বোধন :