দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৬ ফেব্রুয়ারি:উচ্চ মাধ্যমিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম। মেদিনীপুর কলেজ (স্বশাসিত) এর ইংরেজি বিভাগের সেই মেধাবী ছাত্রী-ই শনিবার দেবী সরস্বতী’র পায়ে অঞ্জলি নিবেদন করে, নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করলেন! মর্মান্তিক এই ঘটনাটি খড়্গপুর গ্রামীণ থানার লছমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার। মৃত ছাত্রীর নাম সঙ্গীতা মহাপাত্র। মাত্র ২১ বছরের মেধাবী এই ছাত্রী মেদিনীপুর কলেজের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। পঞ্চম সেমিস্টার থেকে এবারই ষষ্ঠ সেমিস্টারে উঠেছিলেন। আগামীকাল (৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে তাঁদের ক্লাস হওয়ারও কথা ছিল। তার আগেই সব শেষ! বিভিন্ন বিষয়ে পারিবারিক চাপের কারণেই তাঁর আত্মহত্যা বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান। জানা গেছে, শনিবার সকালে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে নিজের পুরানো স্কুল জনার্দনপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান সঙ্গীতা। সেখানে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার পর বেরিয়ে যান স্কুল থেকে। এরপর, গ্রাম লাগোয়া কংসাবতী নদীর পাড়ে দেখা যায় তাঁকে। সেখানেই নদীতে ঝাঁপ দেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ঘটনাটি দেখতে পেয়ে স্কুলের এক পড়ুয়া জলে ঝাঁপ দিয়ে সঙ্গীতাকে উদ্ধার করেন। তারপর, প্রাথমিক শুশ্রুষা করার পর মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু, সেখানেই শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে জেলা জুড়ে!

thebengalpost.net
সঙ্গীতার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ মেদিনীপুর কলেজের ইংরেজি বিভাগ :

সূত্রের খবর অনুযায়ী, ২০১৯ সালের উচ্চ মাধ্যমিককে জেলায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন সঙ্গীতা। মোট ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৮২ পেয়েছিলেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে সংর্ধনাও দিয়েছিলেন। লছমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের জনার্দনপুর সংলগ্ন বাড়মুনিবগড় গ্ৰামে এই মেধাবী ছাত্রীর বাড়ি। বাবার নাম ভরত চন্দ্র মহাপাত্র। জানা গেছে, সম্প্রতি সঙ্গীতাকে নার্সিং নিয়ে পড়ার জন্য জোর করছিলেন তাঁর পরিবার। তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁকে নার্সিংয়ে ভর্তিও করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। রেজাল্ট ভালো থাকায় সরকারি নার্সিংয়ে সুযোগও পেয়ে গিয়েছিলেন সঙ্গীতা! কিন্তু, সবটাই তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে, তাই শেষ অবধি সঙ্গীতা নার্সিং পড়া ছেড়ে চলে আসেন বলে জানা গেছে। তাঁর ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক ছিল বেশি, তাই ষষ্ঠ সেমিস্টার শেষ করেও ইংরেজি নিয়েই পড়তে চেয়েছিলেন সঙ্গীতা। যা তাঁর পরিবার হয়তো মেনে নিতে পারেনি। এরপরই, কড়া শাসনে রাখা হত সঙ্গীতাকে। এদিকে, মেদিনীপুর কলেজে সঙ্গীতা যখন ভর্তি হয় তাঁর রোল নম্বর ছিল- এক। অত্যন্ত মেধাবী ও ভদ্র মেয়ে ছিল বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় অধ্যাপক ও সহপাঠীরা। রবিবার সকালে এই মর্মান্তিক খবর পেয়ে মানসিকভাবে আহত হয়েছেন মেদিনীপুর কলেজের ইংরেজি বিভাগের অভিজ্ঞ অধ্যাপক ড. রাজেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি জানালেন, “আগামীকালই ওদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। আজ সকালে খবরটি শোনার পরই মনটা খারাপ হয়ে যায়। অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিল, মন দিয়ে পড়াশোনাও করত। ব্যবহারও ভালো ছিল! কোথা থেকে যে কি হয়ে গেল!” তবে, এই সবকিছুর জন্য অতিমারীর কু-প্রভাবকেও দায়ী করছেন ড. দত্ত। ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এই পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ প্রভাব ফেলেছে বলে মনে করেন তিনি। কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ গোপাল চন্দ্র বেরা জানিয়েছেন, “আপনাদের মাধ্যমেই বেদনাদায়ক এই খবর শুনলাম! আমি শোকাহত। ওর আত্মার শান্তি কামনা করি, পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।” অপরদিকে, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাতে পরিবারের সঙ্গে কিছু একটা সমস্যা হয়েছিল! সেজন্যই, মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলেন মেধাবী ছাত্রী সঙ্গীতা। গভীর মনোকষ্ট থেকেই এমন সিদ্ধান্ত বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে পুলিশ। মেদিনীপুর কোতোয়ালী থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে, তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে জানা গেছে পুলিশ সূত্রে।