মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৩ জানুয়ারি:’দেশনায়ক’ সুভাষচন্দ্র বসু’র ১২৭তম জন্মজয়ন্তীতে জেলা শহর মেদিনীপুরে অনুষ্ঠিত হল গর্ব ও ঐতিহ্যের ‘দশ মাইল দৌড় প্রতিযোগিতা’ (Ten Miles Race)। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সুপ্রাচীন মেদিনীপুর অ্যাথলেটিক ক্লাবের উদ্যোগে এবার ৫৮তম বর্ষে পদার্পণ করল ঐতিহ্যমন্ডিত এই দৌড় প্রতিযোগিতা। ঘন কুয়াশার কারণে সকাল ৯টা নাগাদ মেদিনীপুর কলেজ কলেজিয়েট মাঠ থেকে শুরু হয় এই প্রতিযোগিতা। মশাল জ্বালিয়ে, বেলুন উড়িয়ে প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করা হয়। করোনা পর্ব পেরিয়ে এবার ভিন রাজ্যের একাধিক প্রতিযোগী সহ মোট ১৬৭ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তর প্রদেশ থেকেও প্রতিযোগীরা এসেছিলেন। উপস্থিত ছিলেন, পিংলার বিধায়ক অজিত মাইতি, পৌরপ্রধান সৌমেন খান, মেদিনীপুর কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোপাল চন্দ্র বেরা, উদ্যোগপতি মদন মোহন মাইতি, ক্লাবের সভাপতি চিকিৎসক কাঞ্চন ধাড়া, সুখরঞ্জন মাতব্বর, সুনীল সামন্ত প্রমুখ।
ঐতিহাসিক মেদিনীপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী এই দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা রাহুল রাজভর (৪৯.০২ মিনিটে শেষ করেছেন)। তিনি মেদিনীপুর শহরের বজরং ব্যায়ামাগারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। দ্বিতীয় হয়েছেন উত্তর প্রদেশের আরিফ আলি (সময় লেগেছে ৫০.২১ মিনিট)। তিনিও বজরং ব্যায়ামাগারের প্রতিযোগী ছিলেন। তৃতীয় স্থান অধিকার করে বাংলা তথা পশ্চিম মেদিনীপুরকে ‘গর্বিত’ করলেন অনুপম মাহাত (সময় লেগেছে ৫০.৪১ মিনিট)। মেদিনীপুর লায়ন ফেটারনিটি’র হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন অনুপম। বছর ২০’র এই যুবকের বাড়ি শালবনী ব্লকের পিড়াকাটা সংলগ্ন প্রত্যন্ত লালেরডিহি গ্রামে।
উল্লেখ্য যে, ‘দৌড়বিদ’ বাবা কার্তিক মাহাত’র অনুপ্রেরণাতেই বছর চারেক আগে তাঁর স্বপ্নের দৌড় শুরু হয়েছিল। প্রথম সাফল্য নিজের ঘরের মাটিতেই। শালবনী ব্লকের বামুন বুড়ি মেলা কমিটির ৩ মাইল দৌড় প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হওয়া। পরবর্তীত সময়ে, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু’র ১২৫তম জন্মদিবস উপলক্ষে অর্থাৎ ২০২১ এর ২৩ জানুয়ারি ‘ঘাগরা মৈত্রী সংঘ’ এর ৫ কিমি দৌড় প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হওয়া এবং ঠিক ৮ দিন পরে (৩১ জানুয়ারি), মেদিনীপুর শহরের নজরগঞ্জ তরুণ সংঘের ৩ মাইল দৌড় প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হওয়া! আর, এর ঠিক পরের দিনই স্বপ্নের সাফল্য আসে অনুপমের মুকুটে। কলকাতায় আয়োজিত, ‘বেঙ্গল রোড রেস অ্যাসোসিয়েশন’ আয়োজিত রাজ্য ক্রশ কান্ট্রি (cross-country) প্রতিযোগিতা’র অনূর্ধ্ব ২০ বিভাগে দ্বিতীয় হন অনুপম! পিড়াকাটা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা অনুপমের মামাবাড়ি পিড়াকাটাতেই। তাঁর মামা শিক্ষক সুবোধ মাহাত বললেন, “পারিবারিকভাবেই খেলাধুলা আর অ্যাথলেটিক্সের প্রতি আগ্রহ। চর্চা ও অনুশীলন ওর বাবার হাত ধরেই। আমরাও প্রতিমুহূর্তে উৎসাহিত করি। আজ ও জঙ্গলমহল থেকে জাতীয় পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছে ওর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং সকলের ভালোবাসাতে। মেদিনীপুরের এই ঐতিহ্যবাহী দৌড় প্রতিযোগিতাতেও ও মেদিনীপুর তথা বাংলার মান রাখতে পেরেছে বলে আমরা গর্বিত।” (ছবি- সেখ ওয়ারেশ)