দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৮ জুলাই: আগামী ২৬ জুলাই থেকে ফ্রান্সের প্যারিসে বসতে চলেছে অলিম্পিক্সের আসর (Paris Olympics 2024)। ‘সোনার ছেলে’ নীরজ চোপড়ার নেতৃত্বে ১৭ জন পুরুষ এবং ১১ জন মহিলা অ্যাথলিট সহ ২৮ সদস্যের ভারতীয় দল নামবে অলিম্পিক্সে। ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড অ্যাথেলেটিক্স শুরু হবে ১ অগস্ট থেকে। চলবে ১১ অগস্ট পর্যন্ত। মহিলাদের মধ্যে নজরে থাকবেন ‘মেদিনীকন্যা’ আভা খাটুয়াও। বাংলার মেয়ে হলেও, বর্তমানে আভা মহারাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেন। মাত্র দু’মাস আগেই ভুবনেশ্বরে জাতীয় ফেডারেশন কাপ অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় শটপুটে ১৮.৪১ মিটার ছুড়ে জাতীয় পর্যায়ে নতুন নজির সৃষ্টি করেছিলেন। গত বছর এশীয় অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১৮.০৬ মিটার ছুঁড়ে বিখ্যাত অ্যাথলিট মনপ্রীত কউরের সঙ্গে যুগ্ম রুপোজয়ী হন। এবার মিলেছে প্যারিস অলিম্পিক্সের (Paris Summer Olympics) ছাড়পত্রও। স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত আপামর মেদিনীপুরবাসী। তবে, পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত এক গ্রাম থেকে আভা’র এই উত্থান খুব সহজ ছিলোনা!
প্যারিস অলিম্পিকে খেলবেন প্রত্যন্ত গ্রামের এক ভাগচাষীর মেয়ে! পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, শৈশবে প্রায় দিনই জোটেনি ভরপেট খাবার! পেটে খিদে নিয়েও লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে। অবশেষে স্বপ্নের সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় ব্লকের খুড়শি গ্রামের আভা। তাঁর এই সাফল্যে খুশির হাওয়া জেলা জুড়ে। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই প্যারিসে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন আভা। খুড়শীর ভাঙা ঘরেও তাই এখন ‘আভা’র আলো! প্রসঙ্গত, পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ব্লকের খুড়শি গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম আভা’র। দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করেই জীবনে এগিয়ে চলা। বাবা সামান্য ভাগচাষি। বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করতে হত। তারপর, বেশ কয়েক কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে যেতে হত স্কুলে। প্রতিবেশীরা জানান, “ছোট থেকেই খেলাধুলার প্রতি ওর আগ্রহ ছিল। খেলাধুলাতে পারদর্শীও ছিল।” এজন্য অবশ্য অনেক কথাও (কটুক্তি বা ব্যঙ্গোক্তি) শুনতে হয়েছে আভাকে! বহু বাধা-বিপত্তি জয় করেই আজ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বছর ২৯-র আভা।
প্রথম জীবনে দৌড়, দীর্ঘ লম্ফন, জেভলিন থ্রো সহ একাধিক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতেন। স্কুলের শারীরশীক্ষার স্যারের তত্ত্বাবধানে প্রথম শুরু হয়েছিল প্রশিক্ষণ। কলেজে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বিশ্ববিদ্যালয় স্তর থেকেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবার লড়াই শুরু হয়। একে একে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেকে মেলে ধরেছেন। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এই অ্যাথলিট একাধিক মেডেল জিতেছেন। মাঝে কলকাতাতে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়াতে প্রশিক্ষণ নেন। ২০১৯ সাল থেকেই তিনি পঞ্জবের পাতিয়ালাতে থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। স্পোর্টস বিভাগের সংরক্ষণে কাস্টমসে চাকরিও করেন। বর্তমানে, জাতীয়স্তরে শটপুট থ্রোতে প্রথম স্থানে রয়েছেন। আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিং ২৩। এই মুহূর্তে পাটিয়ালাতে চলছে জোর প্রস্তুতি। আপাতত আভা’র সাফল্যের দিকেই তাকিয়ে আপামর মেদিনীপুরবাসী!