দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩ সেপ্টেম্বর: প্রণতি নায়েকের পর মজিদা খাতুন। ফের স্বপ্ন দেখছে পশ্চিম মেদিনীপুর। আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসের (Artistic Gymnastics) পর অ্যারবিক জিমন্যাস্টিকস (Aerobic Gymnastics)। দু’জনই কঠোর পরিশ্রমের পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছেন। পিংলার মেয়ে প্রণতি ইতিমধ্যে অলিম্পিক গেমসেও (Tokyo Olympics 2021) অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন। কাঙ্খিত সাফল্য না এলেও, তারপরই নবম এশিয়ান আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। খড়্গপুরের মজিদা-ও সপ্তম এশিয়ান অ্যারোবিক জিমন্যাস্টিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্বে কোয়ালিফাই করেছিলেন গত ২৪ জুলাই (২০২২)। তবে, আর্থিক অভাবে তাঁর থাইল্যান্ড যাওয়া প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল! অবশেষে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন, খড়্গপুর পৌরসভা, পশ্চিম মেদিনীপুর বণিক সভা (PMDCCI) সহ একাধিক সহৃদয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে জুনিয়র বিভাগে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন মজিদা। আজ, শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর)-ই ছিল তাঁর বিভাগের প্রতিযোগিতা। সাফল্যের সঙ্গে মজিদা সপ্তম এশিয়ান অ্যারোবিক জিমন্যাস্টিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের (7th Aerobic Gymnastics Asian Championships) ফাইনালে পৌঁছেছেন। থাইল্যান্ড থেকে শনিবার সন্ধ্যায় এই সুখবর দিয়েছেন তাঁর কোচ রঞ্জিত দাস চৌধুরী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই পাঞ্জাবের চণ্ডীগড়ে ইন্ডিয়ান অ্যারোবিক জিমন্যাস্টিক্স দলের বাছাইপর্বে উত্তীর্ণ হয়ে থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন মজিদা। তারপর শনিবার-ই নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছেন বাংলা তথা মেদিনীপুরের ‘গর্ব’ মজিদা খাতুন। সাউথ সাইড গার্লস হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্রী মজিদা খাতুনের এই কৃতিত্বের পেছনে এক এবং একমাত্র অবদান তাঁর কোচ রঞ্জিত দাস চৌধুরী’রই! তা মানেন মজিদা থেকে তাঁর বাবা-মা সকলেই। বছর ৭২-এর রঞ্জিত-ই যেন মজিদা’র ক্ষিদ-দা! মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি’র মতোই মজিদা-কে নিজের হাতে গড়েছেন রঞ্জিত স্যার-ও। মজিদা’র বাবা শেখ মজিদ সাইকেলে কেটলি নিয়ে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেন। বর্তমানে কিডনি, যকৃত ও হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছেন। প্রতিদিন বেরোতে পারেন না। মজিদার মা রিনা বিবি গৃহবধূ। সংসারে অভাব নিত্যসঙ্গী। তাই, থাইল্যান্ডের এই ‘সপ্তম এশিয়ান অ্যারোবিক জিমন্যাস্টিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ’ এ ডাক পেয়েও সেখানে পৌঁছানো একপ্রকার অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল খড়্গপুর শহরের পুরাতন বাজারের বাসিন্দা মজিদার। প্রয়োজন ছিল দেড় লক্ষাধিক টাকা! তারপর-ই শুরু হয় লড়াই। একে একে এগিয়ে আসেন জেলাশাসক আয়েশা রানী থেকে বণিক সভার চন্দন বসু প্রমুখ। এগিয়ে আসেন পৌরপ্রধান প্রদীপ সরকার-ও। আর, এভাবেই এক কঠিন যাত্রাপথ অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছেন মজিদা! মান রেখেছেন মেদিনীপুর তথা সারা বাংলা’র। থাইল্যান্ডে যাওয়ার আগ মজিদা বলছিলেন, “বাবা ফুটবলার ছিলেন। চোটের জন্য খেলা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। আমি হাঁটতে শেখার সময় থেকেই বাবা আমাকে নিয়ে মাঠে যেতেন। তারপর, মাত্র সাত বছর বয়সেই বাবা কোচ রঞ্জিত দাস চৌধুরীর কাছে ভর্তি করে দেন।” সেই রঞ্জিত-ই এখন ‘কোনি’ উপন্যাসের ক্ষিদ-দা’র (বছর ৫৫’র ক্ষিতীশ সিংহ) মতো অস্ফুটে চেঁচিয়ে চলছেন, “ফাইট মজিদা ফাইট….!” স্বপ্ন-পূরণ থেকে আর মাত্র কয়েক কদম দূরে মজিদা। কোনির মতোই মজিদা-ও কি ‘চ্যম্পিয়ন’ হয়েই ফিরবে? সেই স্বপ্ন-ই দেখছে খড়্গপুর-মেদিনীপুর। (নিচে দেখুন মজিদা’র ফাইনালে পৌঁছনোর পারফরম্যান্স)