দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ আগস্ট: আড়াই বছর বয়সে ব্যাটে-বলে হাতেখড়ি। সাড়ে তিন বছর বয়স থেকেই স্বাভাবিক গতিবেগের ডিউস বলে কাট-পুল-ড্রাইভ করতে পারত অনায়াসে। ৫ বছর বয়সেই ১২০ কিলোমিটার গতিবেগের বলে ছক্কা হাঁকাত শুভজিৎ। আর, এখন শুভজিৎ সাতে পা দিয়েছে। স্বপ্ন দেখাচ্ছে খড়্গপুর তথা পশ্চিম মেদিনীপুর বাসীকে। এই বয়সেই তার অসামান্য ক্রিকেট দক্ষতা বা ব্যাটিং প্রতিভা দেখে মুগ্ধ ইনস্টা-দুনিয়া। ইনস্টাগ্রামে আপলোড করা তার দু’টি ভিডিও-তে ভিউ হয় যথাক্রমে- ৪ মিলিয়ন (৪০ লক্ষ) এবং ৬ মিলিয়ন (৬০ লক্ষ)। ভাইরাল হওয়া সেই ভিডিও পৌঁছে যায় দেশ বিদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের মোবাইলে। তেমনই একজন অস্ট্রেলিয়ার এলিজা ক্যাশন (Elijah Cashion)। মেলবোর্নের বাসিন্দা এলিজা ব্যাট-বল-প্যাড সহ ক্রিকেটীয় সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা’র মালিক। ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে এক ক্ষুদেকে প্যাড-গ্লাভস-হেলমেট পরে একের পর স্কোয়ার কাট, কভার ড্রাইভ, পুল, সুইপ করতে দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। ১২০-১৩০ কিলোমিটার গতিবেগের বলকেও অনায়াসে মাঠের বাইরে পাঠাতে দেখে বিস্মিত হন! তারপরই, যোগাযোগ করেন ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর গ্রামীণের লছমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দা শুভজিৎ দোলই-এর বাবা পিন্টু দোলই-কে চ্যাট করে জানান, আগস্ট মাসে তিনি ভারতে আসবেন নিজের ব্যবসায়িক কাজে। সেই সময়ই খড়্গপুরের এই অজগাঁয়ে আসার ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি। একটাই কারণ, ‘বিস্ময় প্রতিভা’ শুভজিৎ- এর মুখোমুখি হওয়া! সামনে থেকে শুভজিতের ব্যাটিং দেখা! সেই মতো, গত ১৫ আগস্ট যোগাযোগ করে পৌঁছে যান বছর ৪০ এর যুবক এলিজা। তিনদিন থাকেন পিন্টু দোলই-এর বাড়িতে। পিন্টু’র দাদা নান্টু দোলই আবার লছমাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। শুভজিতের ক্রিকেটে হাতে খড়ি বাবা-জেঠুর হাত ধরেই! সামনে থেকে সবকিছু দেখেন এলিজা। বাড়ির সামনের মাঠে নিজের হাতে বল করেন শুভজিৎ-কে। উপলব্ধি করেন, “গল্প” নয় পুরোটাই “সত্যি”! ব্যতিক্রমী প্রতিভার অধিকারী শুভজিৎ সত্যিই এই বয়সে দ্রুতগতির বল সামলাচ্ছে এক অনন্য দক্ষতায়। শুভজিতের নেট প্র্যাকটিসের জন্য বাড়ির সামনে তৈরি করে দেওয়া ছোট্ট মাঠে তাকে একের পর এক স্কোয়ার কাট, কভার ড্রাইভ করতে দেখে আপ্লুত হন এলিজা!
আজ, বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) খড়্গপুর থেকে কলকাতা হয়ে চন্ডীগড় রওনা হওয়ার আগে এলিজা পিন্টু আর নান্টু-কে কথা দিয়ে যান, প্রতিবছর আসবেন। ১৩ বছর বয়স থেকে শুভজিতের ক্রিকেটীয় সরঞ্জামের সমস্ত খরচ বহন করবেন তিনি। নিয়ে যাবেন অস্ট্রেলিয়াতেও। উপহার স্বরূপ প্রায় ১২ হাজার টাকা (অস্ট্রেলিয়ার অর্থে ২০০ ডলার) এবং একটি ডিউজ বল দিয়ে যান শুভজিতের জন্য! আবেগে কাঁপতে কাঁপতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিন্টু আমাদের জানান, “এইমাত্র ওনাকে কলকাতায় ছেড়ে দিয়ে ফিরলাম! আমার ছেলের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছেন, শুধু অস্ট্রেলিয়া নয়, সারা বিশ্বে এখনো অবধি এই বয়সের কাউকে খুঁজে পাইনি, যে ১২০-১৩০ কিলোমিটার গতিবেগের বল এমন অনায়াসে খেলতে পারে! ১৩ বছর বয়স থেকে সব দায়িত্ব নেবেন বলেছেন।” পিন্টু যোগ করেন, “আমিও ভালো খেলতাম। বাবার আর্থিক কষ্টে খেলা চালিয়ে যেতে পারিনি, তাই আমার স্বপ্ন ছেলের মধ্য দিয়ে পূরণ করতে চাইছি। আপনারা সবাই আশীর্বাদ করুন!” ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা হয়েও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি একসময় খড়্গপুর থেকে নিজের বিজয়যাত্রা শুরু করেছিলেন! এবার, খড়্গপুরের-ই ‘ভূমিপুত্র’ শুভজিৎ- এর জয়যাত্রা দেখার অপেক্ষায় সেই খড়্গপুরবাসী। তাই, শুধু পিন্টু-নান্টু নন, শুভজিৎ-কে ঘিরে স্বপ্নে বুঁদ এখন খড়্গপুর সহ সমগ্র পশ্চিম মেদিনীপুর।