দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৫ নভেম্বর: গর্বের, নিঃসন্দেহে গর্বের! রাজ্য থেকে মাত্র ২ জন জায়গা পেয়েছেন অনুর্ধ্ব ১৯ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলে। তাঁদের মধ্যেই একজন হলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রত্যন্ত জঙ্গলমহল এলাকা শালবনী ব্লকের তিলাখুলি গ্রামের মৌসুমী মুর্মু। স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বাস আর আনন্দের সীমা নেই জঙ্গলমহল তথা জেলা জুড়ে! ইতিমধ্যে, গোয়াতে দেশের সেরা ২০ জন অনুর্ধ্ব মহিলা ফুটবলারকে নিয়ে জাতীয় ফুটবল শিবির শুরু হয়েছে। সেখানেই গত ১১ নভেম্বর এ রাজ্য থেকে যোগ দিয়েছেন শালবনীর অষ্টাদশী কন্যা মৌসুমী মুর্মু। তাঁর সাথে রাজ্যের অপর প্রতিশ্রুতি সম্পন্না ফুটবলার আসানসোলের অদ্রিজা সরকারও যোগ দিয়েছেন। অদ্রিজা অবশ্য গোলকিপার। আর, মৌসুমী স্ট্রাইকার। লক্ষ্য এখন, আগামী ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশে আয়োজিত অনুর্ধ্ব ১৯ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের প্রথম একাদশে জায়গা করে নেওয়া এবং বিপক্ষের বিরুদ্ধে গোল করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা! সেই স্বপ্নতেই এখন ডুব দিয়েছে সারা জঙ্গলমহল তথা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, জঙ্গলমহল শালবনীর তিলাখুলি গ্রামের এক ‘দিন আনা দিন খাওয়া’ পরিবার থেকেই উঠে এসেছেন মৌসুমী। তবে, তাঁর অনুপ্রেরণা অবশ্য নিজের দিদি মৌমিতা ও দাদা সুব্রত। তিন ভাইবোনই সহজাত প্রতিভা সম্পন্ন ফুটবলার। মৌমিতা ইতিমধ্যে জেলার অন্যতম সেরা মহিলা ফুটবলার হিসেবে সিভিক পুলিশের চাকরি পেয়েছেন। দাদা সুব্রতও রাজ্য স্তরে খেলেছেন। তিনিও চাকরি পেয়েছেন পুলিশে। আর, মৌসুমী ইতিমধ্যে ‘জঙ্গলমহল কাপ’ এর সেরা ফুটবলার হিসেবে ২০২০ সালে উপহার পেয়েছেন একটি স্কুটি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের তরফে তাঁর চাকরির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। তবে, ১৮ বছর না হওয়ায় মৌসুমী তখন সিভিক পুলিশের চাকরি-তে যোগদান করতে পারেননি! সদ্য ১৮ পেরোনো মৌসুমী এবার জেলায় ফিরে এলে চাকরিতেও যোগদান করবেন। ধান্যশোল উচ্চ বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী মৌসুমী’র উত্থানের পেছনে অবশ্য শালবনী ফুটবল অ্যাকাডেমি তথা শালবনী ব্লক স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের অবদান অনস্বীকার্য। এদের উদ্যোগেই, তাঁর দিদি ও দাদা’র মতোই মৌসুমীও ছোটো থেকে শালবনী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু স্টেডিয়ামে অনুশীলন করেছেন। তিন-তিনবার জঙ্গলমহল কাপে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, শালবনী ‘জাগরণ’ দলের হয়ে। মৌসুমীর পরিবার জানিয়েছে, শালবনী ফুটবল অ্যাকাডেমি-তে প্রথমে অজিত কর এবং পরবর্তী সময়ে নারায়ণ সিংহের তত্ত্বাবধানে অনুশীলন করেছে মৌসুমী। নারায়ণ বাবু’র আশা, “গত বছরই মহারাষ্ট্রে আয়োজিত অনুর্ধ্ব ১৭ জাতীয় মহিলা ফুটবল শিবিরে যোগ দিয়েছিল মৌসুমী। সেখানেও ও সকলের নজর কেড়েছিল। এরপর, কলকাতা ও ভুবনেশ্বরেও ভালো খেলেছে মৌসুমী। আমাদের আশা, ও প্রথম একাদশে সুযোগ পাবে এবং গোল করবে।” আর, শালবনী ব্লক স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক তথা মেদিনীপুর সদর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক সন্দীপ সিংহ বললেন, “মৌসুমী শুধু জঙ্গলমহল নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ও পশ্চিমবঙ্গের গর্ব। আমাদের লক্ষ্য আরও অনেক মৌসুমী তৈরি করা। সেই লক্ষ্যেই এবার শালবনীর কয়মা স্টেডিয়ামে মেয়েদের ফুটবল অ্যাকাডেমি গড়ে তোলা হচ্ছে।”