দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, তনুপ ঘোষ, ১৪ জানুয়ারি: বিশেষভাবে সক্ষমদের (প্রতিবন্ধীদের) জন্য সাংসদ কোটার টাকায় (MP Fund) কেনা শতাধিক ট্রাইসাইকেল তালাবন্দী গুদামঘরে! দায় এড়ালেন সাংসদ (Member of Parliament) নিজে। ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার। সালটা ছিল ২০১৬। কোটি টাকা ব্যয় করে এজেন্সিকে দিয়ে কেনা হয়েছিল শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য ট্রাইসাইকেল। প্রতিবন্ধীদের চিহ্নিতকরণের জন্য অবশ্য নিয়ম অনুযায়ী শিবিরও করা হয়েছিল। সেই শিবিরে আরামবাগ লোকসভার অন্তর্গত চন্দ্রকোনা বিধানসভা এলাকার অক্ষম ব্যক্তিদের সরকারি চিকিৎসক দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে, তালিকাও তৈরি করা হয়েছিল। তালিকা মতো সাংসদ অপরুপা পোদ্দারের এম.পি তহবিলের টাকা দিয়ে সাইকেল কেনাও হয়েছিল। কিন্তু, কোনো এক অজানা কারণে তা বিতরণ করা হয়নি!
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনা ২ নম্বর ব্লক কার্যালয়ে, অযত্নে-অবহেলায় পড়ে রয়েছে কোটি টাকা ব্যায়ে কেনা শতাধিক ট্রাইসাইকেল। সেই সাইকেলে ধরেছে মরচে। কয়েক ইঞ্চি করে জমেছে ধুলোর স্তর। সর্বোপরি, দীর্ঘদিন পড়ে থেকে থেকে ক্রমেই তা অকেজো হচ্ছে! যে সাইকেল পেলে শারিরীক ভাবে অক্ষম মানুষরা সত্যিই উপকৃত হতেন, সরকারি টাকায় কেনা সেই সাইকেল কেনইবা পড়ে পড়ে এভাবে নষ্ট হবে, উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, “এই সাইকেল পেলে, অসহায় মানুষগুলোর মুখে ফুটত হাসি! তার পরিবর্তে অযত্নে পড়ে পড়ে ট্রাই সাইকেল নষ্ট হচ্ছে।” খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, বছর পাঁচেক আগে (২০১৬ সালে) চন্দ্রকোনাতে প্রতিবন্ধী চিহ্নিতকরণ শিবির হয় সাংসদ ও প্রশাসনিক উদ্যোগে। আর সেই শিবিরের পরেই তৃণমূল সাংসদ অপরুপা পোদ্দারের তহবিল থেকে আসে কোটি টাকার ট্রাই সাইকেলগুলি। আর, তখন থেকেই সাইকেলগুলি পড়েছিল চন্দ্রকোনা বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয়ের একটি কক্ষে। সাইকেলগুলি দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ রুমটিকে ব্যবহার করতে পারছিল না। অবশেষে, কলেজ কর্তৃপক্ষ সাইকেল সরিয়ে ফেলার জন্য ঘাটালের মহকুমা শাসককে জানান। আর, মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাসের নির্দেশে সাইকেলগুলি কয়েকদিন আগে নিয়ে আসা হয়েছে চন্দ্রকোনা দু’নম্বর ব্লক কার্যালয়ে।
এই নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও জোর চর্চা শুরু হয়েছে। শুধুমাত্র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে, অক্ষম ব্যক্তিরা বঞ্চিত হচ্ছেন! দায় এড়াচ্ছেন শাসকদলের জনপ্রতিনিধি। তবে, এলাকার তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হীরালাল ঘোষের দাবি, “বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক! আমাদের নেত্রী যেখানে বলছেন সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে, সেখানে এই ঘটনা কাঙ্ক্ষিত নয়।” হীরালাল বাবুর সোজা কথা, “তিনি আমাদের দলের সংসদ হলেও, তিনি পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি! তিনি এই ১১ বছরে যখনই এসেছেন চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন, চলে গেছেন। আমরা সপ্তাহ দুয়েক আগে মহকুমা শাসকের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি। সাইকেলগুলি মেরামত করতে প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা খরচ হবে। সাইকেল মেরামত করার কোনো ফান্ড আমাদের কাছে নেই। তবুও আমরা চেষ্টা করছি এলাকার শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষগুলোর হাতে যাতে সাইকেলগুলি তুলে দেওয়া যায়।” অপরদিকে, গোটা বিষয়টি নিয়ে চন্দ্রকোনা বিজেপির দক্ষিণ মন্ডল সভাপতি রাজীব পালের দাবি, “আমরাও জানতাম দীর্ঘদিন ধরে সাইকেলগুলো পড়ে রয়েছে কলেজ কক্ষে। আমরা বারবার বিষয়টি প্রশাসনের আধিকারিকদের জানিয়েছিলাম। কিন্তু, সাইকেলগুলি বিতরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এইভাবে জনগণের করের টাকায় কেনা সাইকেলগুলি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে! আর বঞ্চিত হচ্ছেন অসহায় মানুষগুলি।” এ বিষয়ে মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস জানিয়েছেন, “আমি যতদূর খবর নিয়ে জানতে পেরেছি, সাংসদ তহবিলের মাধ্যমে কেনা সাইকেল কলেজের একটি রুমে পড়ে নষ্ট হচ্ছিল। আমি ব্লকের বিডিও-কে বিষয়টি জানিয়ে সাইকেলগুলি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছি এবং দ্রুত সাইকেলগুলি বিতরণের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।” অন্যদিকে, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সাংসদ অপরুপা পোদ্দার সাফাই দিয়ে জানিয়েছেন, “এলেমকো সংস্থা থেকে একটি ক্যাম্প করা হয়েছিল, সেই সময়। ক্যাম্পের পর অনেককে সাইকেল বিতরণ করা হয়েছিল। কিন্তু, কিছু মানুষের সাথে যোগাযোগ না হওয়ার জন্য সেই সাইকেলগুলো পড়ে রয়েছে।” আরামবাগের সাংসদ এভাবেই দায় এড়িয়ে গিয়েছেন ঠিকই, বাস্তবে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁকে ‘সাংসদ’ বানানো সাধারণ জনগণই! তবে, আশার কথা প্রশাসনিক মহলে উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয়েছে। এখন দেখার, কবে ট্রাই সাইকেলগুলি প্রশাসনের তরফে তুলে দেওয়া হয় এলাকার বিশেষভাবে সক্ষম মানুষগুলোর হাতে!
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: সাপ ধরে বাড়িতেই পরিচর্যা করতেন। এলাকাবাসীদের কথায়,…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২১ নভেম্বর: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: সংগ্রাম, আন্দোলন কিংবা প্রতিবাদ। বরাবরই পথ দেখিয়ে…
শশাঙ্ক প্রধান, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: বাড়ির ভিত তৈরির জন্য চলছিল খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। খোঁজ মিলল…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ নভেম্বর: ৫ এম.এল, ১০ এম.এল-র সিরিঞ্জ থেকে অ্যাড্রিনালিনের…
দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৮ নভেম্বর: এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলেজ…